1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকার পতনের আন্দোলনে সমন্বয়হীনতা

৭ আগস্ট ২০২৩

বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে নানা টানাপোড়েন চলছে৷ এটা তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা যেমন স্বীকার করছেন তেমনি বিএনপির নেতারাও অস্বীকার করছেন না৷

https://p.dw.com/p/4Urwg
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

ফলে এখন নতুন কোনো কর্মসূচি নেই৷ আর আগস্ট মাসে বড় কোনো কর্মসূচিতে  যাওয়ার সম্ভাবনাও কম৷ সেপ্টেম্বরে আন্দোলন চাঙ্গা করতে তাই বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে৷

শরিকরা মনে করছে, কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতা আন্দোলকে কিছুটা হলেও গতিহীন করেছে৷ আর তারা ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচিকে এরজন্য দায়ী করছেন৷ তারা বলছেন, কোনো আলোচনা না করেই বিএনপি একক সিদ্ধান্তে মহাসমাবেশের পরদিন ওই কর্মসূচি দেয়, যার কোনো প্রস্তুতি ছিল না৷ আর তার সুবিধা নিয়েছে সরকার৷ যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, ওই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত বিএনপিও  দলীয়ভাবে নেয়নি৷ কোনো এক জনের একক সিদ্ধান্তে হয়েছে৷ তার ফল ভালো হয়নি৷ আগস্টে আন্দোলন যে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তা ভেস্তে গেছে৷

তারা আরো মনে করেন, বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সংকট আছে৷ তাদের মূল নেতৃত্ব দেশের বাইরে থাকায় কোনো কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবমুখী হয়না৷ সে কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার৷

এই বিষয়গুলো নিয়ে যুগপৎ শরিকরা এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে কথা বলেছে৷ বিএনপিও তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই আলোচনার মাধ্যমে তারা আন্দোলন পুনর্গঠন করতে চায়৷ এক মাস পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে আবারো জোরের সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতে চায়৷

সমন্বয়ে সমস্যা আছে বোঝা যাচ্ছে: হক

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘বিএনপির ভিতরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু সমস্যা আছে৷ তাদের প্রধান নেতৃত্ব এখন দেশের বাইরে থাকেন৷ স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা দেশে থাকেন৷ তাদের সমন্বয়ে কিছু সমস্যা আছে বোঝা যাচ্ছে৷ আমরা তাই জোর দিয়েছি যারা দেশে আছেন , মাঠে আছেন তাদের চিন্তা ভাবনাকে  অগ্রাধিকার দেয়া দরকার৷ কারণ তারা যেভাবে বাস্তবতাকে বিবেচনা করবেন, বাইরে থেকে যে কারুর পক্ষে সেটা বিবেচনা করা কঠিন৷  আন্দোলনের এই পর্যায়ে আমাদের বড় কেনো ভুল করার সুযোগ নেই৷ তাই সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্তের কথা আমরা বলছি৷''

তার কথা, ‘‘২৯ তারিখের কর্মসূচি(ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান) আমাদের আন্দোলন কিছুটা শ্লথ করেছে৷ আগস্টে আমাদের একটা টার্গেট ছিলো৷ তবে এখন আমরা আরো একটু সংগঠিত হয়ে আর একটু পিছিয়ে বড় আন্দোলনের কথা ভাবছি৷ এনিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছে৷ আলাপ আলোচনা হচ্ছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে আমাদের সমন্বয়ের ঘাটতি ছিলো৷ আর এটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হয়েছে সেটা একটা বিষয়৷ এখন আমরা নতুন কর্মসূচি এবং আন্দোলন পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করছি৷''

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ  বলেন, ‘‘২৯ জুলাই কর্মসূচি আগের দিন রাতে হঠাৎ করে নেয়া হয়৷ ফলে আগের দিনের সমাবেশের মতো সফল হয়নি৷ প্রস্তুতির অভাব ছিলো৷ সাধারণভাবে কোনো কর্মসূচি নেয়ার আগে আমাদের বলা হয়৷ এরপর চূড়ান্ত হলে আমাদের জানিয়ে দেয়া হয়৷ আমরা ৩৬টি দল এভাবেই কাজ করি৷ তবে এখন আমরা আন্দোলন আরো বেগবান করার জন্য বৈঠক করছি৷ এই মাসটা একটু শ্লো যাবে৷ পরের মাসে আবার কঠোর কর্মসূচিতে যাবো৷''

ধারাবাহিকতা থাকতে হবে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘এই যে আমরা আমরা বলছি, কিন্তু আন্দোলনের কর্মসূচি আমরা ঠিক করছি না, ওনারা (বিএনপি) ঠিক করছেন৷ আর তাদের সিদ্ধান্তও এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত৷ উনি(তারেক রহমান) যা বলছেন তাই  ‘ইয়েস ইজ ইয়েস, নো ইজ নো' আন্দোলনে তো হয় না৷ আপনি ইয়েস ভেবে মাঠে গেছেন, গিয়ে দেখেন নো হয়ে গেছে৷ নো ভেবে গেছেন, ইয়েস হয়ে গেছে৷''

তার কথা, ‘‘আন্দোলনের কৌশল নিয়ে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে সেটা স্পষ্ট৷ তবে আমি যদি জোটের মধ্যে থেকে এরকম কথা বলি তাহলে আমি হয়তো আরো প্রশ্নের মধ্যে পড়ে যাবো৷ যে প্রশ্নের জবাব আমি টেকনিক্যাল কারণে দিতে পারবনা৷ ২৮ জুলাই যা করেছেন (মহাসমাবেশ) ২৯ তারিখে তো তার কিছুই হয়নি( ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান)৷ গয়েশ্বর বাবু মার খেয়েছেন, পুলিশ কতটা নৃশংস ছিলো, আওয়ামী লীগের পান্ডারা কী রকম হামলা করেছিলো— এগুলো দিয়ে একটা কাভারআপ করা গেছে৷ তারপরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে সমাবেশ করেছেন সেখান থেকে কোনো কর্মসূচি দেননি৷ পরে যেটা দিয়েছেন সেটা তারেক রহমান ও জুবায়দা রহমানের মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে৷ যে এক দফা আন্দোলন করছেন সেটার ধারাবাহিকতা তো নাই এখন৷ কিন্তু আন্দোলন যদি গণঅভ্যুত্থানের দিকে, বিজয়ের দিকে নিতে চান, যদি এক দফার আন্দোলন হয় তাহলে তাহলে একটার পর একটা কর্মসূচি দিতে হবে৷ মাঝখানে এক দুইদিন গ্যাপ হতে পারে৷ কিন্তু ধারাবাহিকতা থাকতে হবে৷''

তার কথা, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন হয়না৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মির্জা ফখরুল বললেন আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই, এতে বাধা দেবেন না৷ অ্যাপ্রোচটা ঠিক ক্ষমতার সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার যে অ্যাপ্রোচ সেটা এখনো গড়ে ওঠেনি৷''

কখনো এক পা পিছিয়ে দুই পা এগোতে হয়: খান

তবে বিএনপি মনে করে ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচি হঠাৎ নেয়া হলেও এর মধ্য দিয়ে সরকারের আগ্রাসী রূপ প্রমাণ করা গেছে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারের চরিত্র দেখতে পেরেছে৷ তারা ওই দিনের ঘটনার ভিডিও তাদের দেখিয়ে বুঝাতে পেরেছে যে কীভাবে এখানে সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করছে৷ আর আন্দোলনের কৌশল সব সময় এক থাকেনা৷ বদলাতে হয়৷ এখন কৌশল পদলানোর পর্ব চলছে৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘আন্দোলনের নানা কৌশল আছে৷ কখনো এক পা পিছিয়ে দুই পা এগোতে হয়৷ আবার কখনো দুই পা এগিয়ে এক পা পিছাতে হয়৷ আমরা এখন যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছেন তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক প্রায় শেষ করে ফেলেছি৷ এখন আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যাব৷  সেটার সময় নির্ধারণ একটি বিষয়৷ তবে আমরা আগেই মাঠে নেমে গেছি৷ সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে আছি৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শরীকদের মতো আমরাও মনে করি আন্দোলন আরো একটু পরিকল্পিত হওয়া উচিত৷ সেই কাজই আমরা এখন করছি৷ কীভাবে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা যায়৷ কীভাবে আরো জনগনকে সম্পৃক্ত করা যায় তার পরিকল্পনা হচ্ছে৷ যেকোনো আন্দোলনেই নতুন কৌশল লাগে৷ সেটা আমরা করছি৷''

তার কথা, ‘‘আমরা ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ করেছি৷ এরপর ২৯ জুলাই আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করেছে৷ তারপরও সমাবেশসহ আমরা দুইটি কর্মসূচি পালন করেছি৷ আমরা কর্মসূচি বন্ধ করিনি৷ নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে৷''