বিএনপিতে অস্থিরতা
১২ মার্চ ২০১৪
৫ই জানুয়ারির একতরফা সংসদ নির্বাচনের সময় সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপির আরো অনেক শীর্ষ নেতা ছিলেন কারাগারে৷ গত ২০শে ফেব্রুয়ারি খোকা কারাগার থেকে ছাড়া পান৷ তবে তার আগেই বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা মহানগর বিএনপিকে সিগন্যাল দিয়েছিলেন৷ নির্বাচনের পর সাদেক হোসেন খোকার অনুপস্থিতে মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তাঁদের ব্যর্থ বলে অভিহিত করেন তিনি৷ তোপের মুখে পড়েন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম৷ ঐ বৈঠকে খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচিসহ সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচিতে মহানগর বিএনপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ বলেন মহানগর বিএনপির খোল-নলচে পাল্টে ফেলার কথা৷
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কিছু দিন নিরব থেকে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাদেক হোসেন খোকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার কথা জানান৷ তিনি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের দাবি করে বলেন, ‘‘সংগঠনের জন্য তাঁর কাজের মূল্যায়ন দলের নেতা-কর্মীরাই করবেন৷'' এরপর অব্যাহতি নেয়ার বিষয়টি দলের চেয়ারপার্সনকেও জানিয়েছেন তিনি৷
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে খোকা দাবি করেন, আন্দোলন যে সফল হয়নি তা ঠিক নয়৷ ঢাকা মহানগরের আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য আটজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷ এঁদের মধ্যে দু'জন কারাগারে ছিলেন৷ বাকি ছয়জন বাইরে ছিলেন৷ তাঁরা কী করেছিলেন? তারপর আসে মহানগরের কথা৷ এ সব নিয়ে এখন অনেক ‘ব্লেমগেম' হচ্ছে৷'' প্রসঙ্গত, সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালামও উপস্থিত ছিলেন৷
বিএনপির একাধিক নেতা জানান সামনেই দলের কাউন্সিল ৷ তাই বাদ পড়ার আগেই খোকা বিদায় নিয়েছেন৷ আরো অনেককে বিদায় নিতে হবে বলেও জানান তাঁরা৷ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন, সরকারবিরোধী আন্দোলন, জামায়াত এবং হেফাজতই হবে দলে থাকা বা না থাকার মাপকাঠি৷ এরই মধ্যে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে৷ বিএনপির অনেক নেতার নির্বাচনের আগে জেলে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি থেকে জামায়াত ও হেফাজত বিরোধিতা নিয়েও৷ তাই জামায়াত এবং হেফাজত বিরোধিতার মূল্য দিতে হতে পারে কয়েকজন নেতাকে৷ মহানগর ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা রয়েছেন সেই তালিকায়৷
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উপজেলা নির্বাচনের পর দলের কাউন্সিল হবে৷ সেই কউন্সিলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠন করা হবে৷ কাউন্সিলে দলকে সামনের আন্দোলনের জন্য শক্তিশালী করা হবে৷ যাঁরা অতীতের আন্দোলনে সময় দেননি বা দিতে পারেননি, স্বাভাবিক কারণেই তাঁদের আর সামনের সারিতে রাখা হবে না৷ এছাড়া যাঁরা আন্দোলনে মাঠে ছিলেন মূল্যায়ন হবে তাঁদের৷''
সাদেক হোসেন খোকার অব্যাহতি নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তাঁর বয়স হয়েছে৷ তাই হয়ত নিজেই অন্যদের সুযোগ দেয়ার জন্য সরে দাঁড়িয়েছেন৷ তবে এখনো তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন৷''
শামসুজ্জামান দুদুর কথায়, ‘‘নির্বাচনের সময় সাদেক হোসেন খোকা কারাগারে ছিলেন, তারপরও আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতার দায় যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে নিতে হয়৷'' তবে দলে জামায়াত বিরোধীদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, এমন ধারণা ঠিক নয় বলে জানান তিনি ৷ তিনি বলেন, ‘‘জোটবদ্ধ আন্দোলনে সাদেক হোসেন খোকাও জামায়াতের সঙ্গে কাজ করেছেন৷''
এদিকে খোকার অব্যাহতির মধ্য দিয়ে বিএনপিতে অস্থিরতা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ শুধু তাই নয়, এর ফলে দলীয় নেতাদেরে একটা বড় অংশ আতঙ্কে আছেন বলে জানা গেছে৷