1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাইকেলের জন্য লড়ছে কলকাতা

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাধারণ এক দুর্ঘটনা বড়সড় আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে কলকাতায়৷ এক কথায় যাকে বলা হচ্ছে ‘সাইকেল আন্দোলন'৷ শহরের দিকে দিকে ‘সাইকেল বে' তৈরির জন্য লাগাতার আন্দোলন চলছে৷

https://p.dw.com/p/2sOIN
ছবি: DW

‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট' শব্দটির সঙ্গে পরিচিত এখন পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ৷ পরিবেশ সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনায় এই শব্দটির ব্যবহার সম্ভবত সর্বাধিক৷ কিন্তু কীভাবে এই কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো যায়? কীভাবে পরিবেশ বান্ধব সভ্যতা তৈরির দিকে এগনো যায়? প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তর তত সহজ নয়৷ সহজ হওয়ার কথাও নয় কারণ, দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর বুকে হানিকর গ্যাস উৎপাদন করে চলেছে মানব বিশ্ব৷ সেই সমস্ত গ্যাসের ব্যবহার দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়৷ কিন্তু ধীরে ধীরে পরিবেশ সহায়ক নানা ভাবনা ভাবছেন বিশেষজ্ঞেরা৷

সাইকেল তেমনই এক পরিবেশবান্ধব যান৷ পৃথিবীর বহু দেশই নতুন করে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে ঝুঁকেছে৷ ইউরোপে বহুকাল আগে থেকেই সাইকেলকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা রাস্তা বা ‘বে' তৈরি করা হয়েছে৷ ডিজেল বা পেট্রোল গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে লোকে যাতে ইলেকট্রিক গাড়ি বা সাইকেলের প্রতি আরো আকৃষ্ট হন, তার জন্যও নানারকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে৷ শেষ পরিবেশ সম্মেলনেও এ বিষয়ে বহু আলোচনা হয়েছে৷

ইউরোপ এখনো যা চেষ্টা করছে, কলম্বিয়া তা করে দেখিয়ে দিয়েছে৷ বোগোটার রাজপথ এখন সাইকেল আরোহীদের তীর্থক্ষেত্র৷ শহরের মেয়র থেকে উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক, সকলেই সাইকেলে চড়ে দপ্তরে যান৷ অফিস টাইমে লক্ষ লক্ষ সাইকেল দেখতে পাওয়া যায় রাজপথে৷ যা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের কোনো কোনো শহরে বিশেষ বিশেষ রাস্তায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সাইকেল ছাড়া আর সমস্ত যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

Kalkutta Protest gegen Fahrradverbot
কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অধিকাংশ রাস্তাতেই সাইকেল চালানো নিষিদ্ধছবি: DW

অর্থাৎ, সাইকেলের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে বিশ্ব৷ সত্যিই কি করেছে?

ইউরোপ যা ভাবতে পারছে, কলম্বিয়া যা পারছে, এশিয়া কি তার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারছে? এশিয়ার হাতেগোনা কয়েকটি শহর ছাড়া রাজপথে সাইকেল চালানো কার্যত নিষিদ্ধ৷ সম্প্রতি কলকাতার একটি ঘটনা তা আরো একবার প্রমাণ করে দিল৷ তথ্য-প্রযুক্তি হাব হিসেবে এখন পরিচিত পূর্ব কলকাতার নিউটাউন অঞ্চল৷ দু'দশক আগে তৈরি হওয়া এই অঞ্চলে সভ্যতার সমস্ত উপাদান থাকলেও ‘সাইকেল বে' নেই৷ সম্প্রতি সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক সাইকেল আরোহীর৷ অভিযোগ, এরপর পুলিশ সেই রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হবে বলে ঘোষণা করেছে৷ বস্তুত, কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অধিকাংশ রাস্তাতেই সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ৷ পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনা এড়াতেই এই ব্যবস্থা৷ শুধু কলকাতা নয়, রাজধানী দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বই – কোথাও সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা রাস্তার ব্যবস্থা নেই৷

ফলে সাইকেল নিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি অধিকাংশ শহরে৷ অথচ গ্রামাঞ্চলের চিত্র কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা৷ ভারতের গ্রামগুলিতে এখনো সাইকেল অন্যতম পরিবহনের ব্যবস্থা৷ স্টেশনগুলির বাইরে রয়েছে সাইকেল স্ট্যান্ড৷ অনেকেই সাইকেল নিয়ে স্টেশন পর্যন্ত এসে ট্রেন ধরে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছান৷ এ কোনো নতুন ঘটনা নয়, শতাব্দীকাল ধরে এভাবেই চলে আসছে ভারতের গ্রামগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ এখনো তা যথেষ্ট সফল৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷ যেমন প্রযোজ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে৷ সেখানে গ্রামাঞ্চলে সাইকেলের বহুল ব্যবহার থাকলেও শহরের রাজপথে সভ্যতার চাপে সাইকেল কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ব এবং পশ্চিম দুনিয়ার মধ্যে তফাত ঠিক এইখানেই৷ সভ্যতা কীভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করে পশ্চিম তা বুঝতে শুরু করেছে৷ কিন্তু পূর্ব এখনো সভ্যতার নামে পরিবেশ ধ্বংসের খেলায় মত্ত৷ ফলে সাইকেল নিয়ে ভাবার মতো অবকাশটুকুই তাদের নেই৷ সেখানকার রাষ্ট্রনেতারা ভাবতেই পারেন না, শুধুমাত্র সাইকেলের ব্যবহার বারিয়ে কত পরিমাণ ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট' কমানো যায়৷

প্রদীপের তলায় অন্ধকার ছায়া থাকলেও আলোর নিশানা থাকে৷ আশার কথা, ভারতের বিভিন্ন শহরে সাইকেল নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ তৈরি হয়েছে বহু ছোটবড় সাইকেল ক্লাব৷ সাইকেল নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে বছরভর৷ যার অন্যতম, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা থেকে ঢাকা সাইকেল যাত্রা৷ এছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় সাইকেল যাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে৷ পূর্ব কলকাতার ওই ঘটনার পরেও বহু আন্দোলনকারী সরকারের সমালোচনা করেছে৷ সমস্যার গোড়ায় না গিয়ে রাস্তা থেকে সাইকেল তুলে দেওয়ার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে৷ আশা করা যায়, তাদের সমালোচনা সরকারের কর্ণগোচর হবে৷ ভারতের বড় বড় শহরগুলিতে ফিরে আসবে সাইকেল৷ তৈরি হবে ইউরোপের মতো ‘সাইকেল বে'৷