1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সাইবার অপরাধের শিকার থানায় জিডি করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়’

শহীদুল ইসলাম ঢাকা
৩ মার্চ ২০২৩

সাইবার অপরাধ দমনে ১০ বছর ধরে কাজ করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম৷

https://p.dw.com/p/4ODSV
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম৷
ছবি: privat

এ সাক্ষাৎকারে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ফলে সাইবার অপরাধ বাড়ছে, তবে অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়৷

ডয়চে ভেলে: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে এখন কোন ধরনের অভিযোগগুলো বেশি পাচ্ছেন?

নাজমুল ইসলাম: বাংলাদেশে প্রাযুক্তিক উন্নয়ন হচ্ছে৷ এখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ফাইবার অপটিক কেবল চলে গেছে৷ সেজন্য আইটি এবং আইটি এনাবল সার্ভিসগুলো এখন জনগণের খুব কাছাকাছি৷ যেহেতু সাইবার স্পেসে মানুষ ইন্টার‌্যাক্ট করছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে এবং সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কথা হচ্ছে৷ ফলে সেখানে ক্রাইম হওয়ার জন্য নতুন করে একটা জায়গা তৈরি হয়েছে৷

সাইবার স্পেসে হ্যারাসমেন্ট, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়৷ ধর্মীয় উন্মাদনাও সেখানে আছে৷ ভুয়া আইডি তৈরি করে সাইবার পর্নোগ্রাফি করা হয়৷ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সেখানে বাজে জিনিস পোস্ট করা ছাড়াও ওইসব অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চাওয়া হয়৷ সাবেক প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে অনেক সময় ব্ল্যাকমেইল করা হয়৷ কোনো কারণে কোনো ব্যক্তিগত কনটেন্ট কারো হাতে চলে গেলে সেগুলো নিয়েও ব্ল্যাকমেইল করা হয়৷ এখন ই-কমার্স খাতে ক্রাইম হচ্ছে৷ ভুঁইফোড় সাইট খুলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে না৷ অনলাইন প্রতারণা বাড়ছে৷

ইউটিউবে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটকে অনলাইন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার করায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ইউটিউবে আর কোন ধরনের অপরাধ হচ্ছে?

ইউটিউব এখন ক্রাইমের অন্যতম আধার, বিশেষ করে কাউকে হ্যারাস করার জন্য৷ ফেইক কনটেন্ট দিয়ে, ফেব্রিকেটেড তথ্য দিয়ে ভিডিও বানিয়ে জাজমেন্ট দিয়ে দিচ্ছে৷ দেশে ও দেশের বাইরে থেকে অনেকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নষ্ট করার জন্য কাজ করছে৷ ইউটিউবের মাধ্যমে জঙ্গিবাদী কনটেন্ট প্রচার হচ্ছে৷ ইউটিউবে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করায় ডিবির সাইবার টিম অনলাইন জুয়ার কনটেন্ট পেয়েছে, এটি নিয়ে তারা কাজ করছে৷ ইউটিউবে বড় একটা কনসার্ন এখন সাইবার টেররিজম৷ ইউটিউবের মাধ্যমে অসংখ্য বাজে বাজে ওয়াজ প্রচার করা হচ্ছে, যেগুলো ধর্মীয় দিক থেকেও সঠিক না৷ সেখানে জিহাদের কথা বলা হচ্ছে, মানুষকে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করছে৷ এসবের পাশাপাশি ইউটিউবে নগ্নতাও আছে৷ ছোট বাচ্চারা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে গিয়ে বাজে কোনো কনটেন্ট চলে এলে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের আঘাত৷ ইউটিউবে শুধু ভুঁইফোড় চ্যানেল থেকেই বাজে কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে না, প্রসিদ্ধ অনেক চ্যানেল থেকেও নাটকের নামে আজেবাজে কনটেন্ট প্রচার হচ্ছে৷

‘বাংলাদেশে অফিস না থাকলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ঘটনার রেসপন্স করে ইউটিউব ও ফেসবুক’

রাষ্ট্রীয় ইস্যু নিয়ে ইউটিউবে ক্রাইম হচ্ছে৷ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করবে, এটা যে কারো গণতান্ত্রিক অধিকার৷ সমালোচনা হতে হবে সরকার ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গঠনমূলক৷ কিন্তু সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে৷ দেশের বাইরে থেকেও প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে৷ সরকার ও পুলিশ গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটকে সম্মান করে, মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনা ও সমালোচনার অধিকারকে সম্মান করে৷ কিন্তু মিথ্যা তথ্য বা প্রোপাগান্ডা ছাড়ানোকে কোনোভাবেই আমরা প্রোমোট করতে চাই না৷

কারো নামে মিথ্যা তথ্যের ভিডিও বানিয়ে তা ইউটিউবে প্রচার করলে ভুক্তভোগীর করণীয় কী?

কেউ ফেইক ভিডিও আপলোড করলে তা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে অপরাধ৷ এজন্য ভুক্তভোগী থানায় জিডি করতে পারে, কোর্টে মামলা করতে পারেন৷ কনটেন্ট মুছে ফেলার জন্য আমাদের (পুলিশ) কাছেও আসতে পারেন৷ আমরা যদি দেখি কেউ আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে আমরা ব্যবস্থা নেবো৷ তবে থানায় অভিযোগ না দিয়ে আমাদের কাছে এসে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই৷ কারণ, থানায় মামলা না হলে আমরা অপরাধীকে ধরতে পারবো না৷

বিদেশে বসে কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালালে কীভাবে তাদের শনাক্ত করেন?

আইনেই বলা আছে, দেশের বাইরে থেকে অপরাধ করলে সেটি যদি বাংলাদেশ সম্পর্কিত হয়, দেশের মানুষ সম্পর্কিত হয়, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে৷ এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হয়৷ সাইবার ক্রাইম দমনে আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার৷ এ জন্য মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ট্রিটি (এমএলএটি) চুক্তি করা দরকার৷ বাংলাদেশের স্বার্থযুক্ত যেসব দেশ আছে, যেমন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, জার্মানি, ইউকে, ফ্রান্স, গ্রীস, হাঙ্গেরি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা থাকেন, সেসব দেশের সঙ্গে সরকার যেন এমএলএটি চুক্তি করে৷ এই চুক্তি করলে ওইসব দেশের পুলিশ যেভাবে কাজ করেন, আমারাও তদন্ত করার জন্য, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য বা আসামী গ্রেপ্তার করার জন্য একইভাবে সেখানে কাজ করতে পারবো৷

ইউটিউব-ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস বাংলাদেশে না থাকায় সাইবার অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় কিনা?

বাংলাদেশে অফিস না থাকায় অবশ্যই কাজে বিঘ্ন হয়৷ কারণ, অফিস থাকলে সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলা যেতো৷ একটা মেয়ের একটি বাজে কনটেন্ট ইউটিউবে ছড়িয়ে গেলে সেটা দ্রুত সরিয়ে ফেলতে না পারলে তো তার স্যোশ্যাল লাইফ থ্রেটের মধ্যে পড়ে যায়৷ তার কাছে ম্যালওয়্যার অ্যাটাক গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার কাছে এটাই বড় ম্যালওয়্যার৷ সাইবার সিকিউরিটির কথা বলতে গেলে ইন্ডিভিজুয়ালি সিকিউরিটি, রাষ্ট্রের সিকিউরিটি সবকিছুকে আমরা সমানভাবে দেখি৷

কোনো কনটেন্ট মুছে ফেলার জন্য ইউটিউব-ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর থেকে সেটি মুছে ফেলতে কত সময় লাগে?

অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসিকে জানাই৷ তখন বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে রিপোর্ট করে৷ গুরুত্বপূর্ণ খারাপ কনটেন্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরানো যায়৷ সাইবার পর্নোগ্রাফি, লাইফ থ্রেট এবং সাইবার টেররিজমকে আমরা সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি৷ এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় ১০ মিনিটের মধ্যেও আমরা রেসপন্স পাই৷

বাংলাদেশে অফিস না থাকলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ঘটনার রেসপন্স করে ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ দেশে অফিস থাকলে আরো বেশি সমস্যার সমাধান হতো৷ তাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি মিটিং হতো, গ্যাপগুলো কমিয়ে আনতে পারতাম৷ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোশাল মিডিয়া প্লার্টফর্মগুলোর সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই৷

কপিরাইট না মেনে অনেকে ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি করছেন৷ এ ধরনের অভিযোগ এলে আপনারা কী করেন?

এ বিষয়ে দেশে কপিরাইট আইন আছে, একটি অফিসও (বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস) রয়েছে৷ মূলত তারাই বিষয়গুলো দেখে৷ আমাদের কাছে কেউ কপিরাইট সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা তাদের এসব বিষয় অবহিত করি৷ অন্যের জিনিস চুরি করে নিজের বাহাদুরি করা যাবে না, এটা আইনে আছে৷ অন্যের মেধাস্বত্ব নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে সেখান থেকে অর্থ আয় করা হীনমন্যতার প্রকাশ৷

না জেনেই ইউটিউবে অপরাধী কনটেন্ট আপলোড করছেন অনেকে৷ যে কোনো সাইবার ক্রাইম হলে যেন পুলিশকে রিপোর্ট করা হয়, কারণ রিপোর্ট করলে রেসপন্স থাকে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে অভিযুক্তরা মেসেজ পায়৷ আর তাদের শাস্তি হলে সমাজে উদাহরণ তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে ক্রাইমগুলো কমে আসে৷

অনেকে মনে করেন, ক্রিমিনালরা এক্সপার্ট, পুলিশ এক্সপার্ট না৷ পুলিশকে তো রিপোর্ট করে এক্সপার্ট করতে হবে৷ যদি রিপোর্ট না করেন, পুলিশ জানবে কিভাবে এই ঘটনাটা ঘটেছে৷ পুলিশ হচ্ছে মেশিন লার্নিংয়ের মতো৷ পুলিশকে শেখাবেন৷ পুলিশ বাধ্য হবে শিখতে৷ আজকে পারলাম না, কালকে পারলাম না, পরশু আমাকে পারতেই হবে, নইলে দায়-দায়িত্ব থাকে না৷ পুলিশ তখন নিজ গরজ থেকেই শিখবে৷ তবে পুলিশকে শেখাতে হলে নিজ থেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে৷

১৬-১৭ বছরের বাচ্চারাও এখন হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত৷ ফ্যান্টাসিতে ভোগে যে হ্যাক করতে পারলাম৷ ইউটিউব থেকে তারা এসব শেখে৷ ইন্টারনেট দেয়া হয়েছে পারসোনাল, স্যোশাল, ইকনোমিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের জন্য৷ ইন্টারনেটে আমরা বিভিন্ন জিনিস শিখবো এবং আয় করবো৷ নতুন যারা ইন্টারনেটে আসছে, ক্রাইম থেকে তাদের দুরে থাকতে হবে৷ অনেক সময় আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেকের কিছু কিছু কাজ ক্রাইম হয়ে যাচ্ছে৷

সাইবার স্পেসে মানুষের বিচরণ আরো বাড়লে এ সংক্রান্ত অপরাধগুলো মোকাবিলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটুকু প্রস্তুত?

সাইবার ক্রাইমের অধিক্ষেত্র রাজধানী ঢাকা৷ ঢাকাভিত্তিক আমাদের যে প্রস্তুতি তাতে আমরা মোকাবিলা করতে পারবো৷ সরকার যেভাবে ইন্টারনেটের বিস্তৃতি করছে, সব জায়গায় ইন্টারনেট গেছে, ফলে ক্রাইমও হচ্ছে৷ ক্রাইম তো ওয়েভের মতো৷ আজ ঢাকায় যে ক্রাইম দেখছেন, দুই বছর পর সেটি সাভারে দেখবেন৷ সাভার থেকে চলে যাবে মানিকগঞ্জ, সেখান থেকে যাবে লোহাগড়া, এভাবে ছাড়াবে৷ এই ওয়েভ ধরার জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশ ঢাকায় আছে, কিন্তু সারা দেশে নেই৷ এ জন্য ন্যাশনাল সাইবার পুলিশ ইউনিট গঠন করা দরকার, যারা সারা দেশে সাইবার ক্রাইমের ইস্যুগুলো দেখবে৷ একইসঙ্গে সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোকেও জেলা পর্যায়ে নিতে হবে৷ কারণ, সাক্ষ্য দিতে অনেকেই ঢাকা আসবেন না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য