সাকিবের ‘রাজনীতি’
২২ মার্চ ২০২১এক সাক্ষাৎকারে আবার ‘বোমা’ ফাটিয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটলেও জগৎখ্যাত অলরাউন্ডারের ব্যাট আর বলের ঘুম এখনো সেভাবে কাটেনি৷ তাতে কী! শিরোনামে কিভাবে থাকতে হয় সাকিব খুব ভালো জানেন৷
মাসখানেক আগে আইপিএলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে চেয়ে নিউজরুম, ড্রয়িংরুম থেকে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকান পর্যন্ত ‘সাকিবের কাছে দেশ বড়, না টাকা বড়’ ধাঁধাঁর উত্তর খোঁজায় সবাইকে ভীষণ ব্যস্ত রেখেছিলেন সাকিব৷ অর্থলোভ, স্বার্থ, দেশপ্রেম, অকৃতজ্ঞতা ইত্যাদি শব্দের শত শত ব্যবচ্ছেদ হয়েছে তখন৷ সাকিব তখন চুপ৷
পেশাদার ক্রিকেটারের কাছে পারফর্ম্যান্স আর টাকা বড় হতেই পারে৷ তাই বলে ‘দেশ খুব ছোট ব্যাপার’ এমন কথা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে না খেলতে খেলতে ক্যারিয়ারের প্রায় অস্তলগ্নে পৌঁছানো ক্রিস্টোফার হেনরি গেইলও কোনোদিন বলেননি, ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে দাঁড়িয়ে সাকিবই বা বলবেন কেন!
রোববারের সাক্ষাৎকারে সাকিব অবশ্য এ-ও বলেননি যে, যতদিন সম্ভব বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলেই যাবেন৷ শুধু বলেছেন, ‘‘ওই চিঠিতে আমি টেস্ট খেলা সম্পর্কে কিছুই বলিনি৷ আমার মনে হয় আকরাম ভাই আসলে চিঠিটা পড়েননি৷’’
কিন্তু হঠাৎ আকরাম খান কেন? এতদিন তো এই আলোচনায় বারবার এসেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷ তিনিই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নানা কায়দায় বলেছেন, ‘‘জোর করে তো ওকে খেলতে বাধ্য করা যায় না৷’’ মুস্তাফিজকেও এ বিষয়ে ‘বার্তা’ দেয়ার কথা তিনিই বলেছিলেন৷ মুস্তাফিজও দুদিন বাদে জানিয়ে দিয়েছিলেন টেস্ট দলে জায়গা পেলে আইপিএলে খেলবেন না, তাকে নিয়ে ‘‘দেখো দেখো দেশপ্রেম কাকে বলে’’ জমজমাট আলোচনাটা তো মাত্র কয়েকদিন আগের! কই, আকরাম খান তো তখন সাকিব, আইপিএল, টেস্ট ক্রিকেট, দেশপ্রেম কোনোকিছুরই তেমন বড় কোনো বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে খুব তুলে ধরেছেন বলে মনে পড়ছে না৷ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রকে বরং আকরাম পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন ‘‘ওই বিষয়ে কোথায় কথা বলেছি আমাকে দেখান৷’’
বিস্ময়! বিস্ময়!
আকরাম খান কিছুই বলেননি তা-ও তাকে গুরুত্বপূর্ণ ওই চিঠির বিষয়ে বিশেষভাবে অজ্ঞ বানিয়ে আলোচনায় টেনে আনলেন সাকিব?
বিপরীতে নাজমুল হাসান পাপন আর খালেদ মাহমুদ সুজন সম্পর্কে সাকিবের মন্তব্য আরো বিস্ময়জাগানিয়া৷ দেশের ক্রিকেটের সুবিখ্যাত ‘চাচা’ কয়েকদিন আগেই রকিবুল হাসানের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারকে মারতে গিয়েছিলেন৷ এ কারণে মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ‘চাচা’র তো এখন আপন মান-প্রাণ বাঁচানোই দায়৷ এ সময়ে তার কী প্রশংসাই না করলেন সাকিব৷
এই মুহূর্তে বিসিবি সভাপতিও মনে হয় সাকিবের প্রশংসায় ধন্য৷ মূলত তার সমালোচনার কারণেই তো দেশের অনেক মানুষ ‘‘সাকিবের কাছে দেশ বড়, না টাকা’- এই ধন্দে পড়েছিলেন৷ অথচ সেই সমালোচনাকে বড় দ্বন্দ্বের কারণ হতে না দিয়ে সাকিব যেন ‘‘মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’ বার্তা নিয়ে বিসিবি প্রধানের পাশে হাজির৷
একে সাকিবের ‘বাউন্সার’ বললে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা হয়ত তেড়ে আসবেন, কিন্তু রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বিলক্ষণ বুঝবেন ব্যাপারটা৷ বাঁ হাতি স্পিনার ২২ গজে বাউন্সার দেয়ার কথা কল্পনাও করবেন না কোনোদিন, কিন্তু ২২ গজের বাইরে বাউন্সারের এফেক্টটা কেমন তা তো বোঝাই যাচ্ছে৷ সাকিবের এক বলে আকরাম খান ‘হিট উইকেট’ আর খালেদ মাহমুদ এবং নাজমুল হাসান পাপন রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার সুবাদে জিরো নট আউট৷
ম্যান অব দ্য ম্যাচের নামটা আপনারাই বলুন!