সাগর-রুনি
১৫ এপ্রিল ২০১২সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় তার প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠছে বাংলা ব্লগগুলো৷ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ এবং সরকারের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতায় সাগর রুনির স্বজনরা আজ বাকহারা৷ অন্যদিকে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নির্বিষ আন্দোলন যেন সেই বাবুরাম সাপুড়ের সাপের মত, যে সাপের চোখ নেই, কান নেই৷ ছোটেও না হাঁটেও না৷ এই পরিস্থিতিতে ব্লগাররাই এগিয়ে এসেছেন৷ দিনের পর দিন তাঁরা ব্লগগুলোতে তাঁদের লেখনির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছেন৷ এরপর যখন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ চায়ের দাওয়াত খেয়ে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করলেন, তখন ব্লগাররা নিজেরাই রাস্তায় নেমে হত্যার বিচার চেয়েছেন৷
তবে রোববার তাঁরা নতুন এক উদাহরণ তৈরি করলেন বাংলা ব্লগ জগতে৷ সাগর রুনির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে, তাদের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে দুই ঘন্টার ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করলেন তাঁরা৷ সকাল ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর এর ব্লগ ছিলো কালো পর্দায় ঢাকা৷ কোন ব্লগ পোস্ট হয়নি, হয়নি কোন কমেন্ট আদান প্রদান৷ সাংবাদিক দম্পতি হত্যার প্রতিবাদে ইন্টারনেট জগতে এভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন ব্লগার কমিউনিটি৷
এই প্রতিবাদ নিয়ে বেশ কয়েকজন ব্লগার ব্লগ লিখেছেন৷ তাদের লেখায় উঠে এসেছে হত্যাকাণ্ডের পর দুই মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও কোন অপরাধী ধরা না পড়ার ক্ষোভ৷ তাদের অনেকে গণমাধ্যম কর্মিদের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন৷ যেমন ব্লগার কৌশিক আহমেদ লিখেছেন, অপরাধী কারা-সেটা আমরা না জানলেও যাদের হাতে মিডিয়া তাদের না জানার কোন যৌক্তিক কারণ নেই৷ কিন্তু আমরা জানি না৷ আমরা সাধারণ মানুষ কেবল পরস্পরের বিবৃতি শুনে যাই৷ ব্লগাররা এবার এর জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে-যার একটা ধরণ হলো ব্লগ ব্ল্যাকআউট৷ বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ব্ল্যাক আউট নতুন মাত্রা যা নিঃসন্দেহে ব্লগারদের প্রতিবাদী হয়ে ওঠার আরও জোরালো অবস্থানকে চিহ্নিত করে৷
আরও একজন ব্লগার জাহেদ উর রহমান ব্লগ লিখেছেন ‘‘আজকের কালো, নিয়ে আসুক অনেক আলো''৷ ব্লগারদের এই আন্দোলনে তিনি কেন শরিক হলেন, সেটা জানাতে গিয়ে জাহেদ উর রহমান লেখেন, আমি সবসময় চেয়েছি ব্লগাররা শুধু লেখালেখির বাইরে এসে সমাজের নানা ইস্যু নিয়ে রাস্তায় নামবে৷ স্বপ্ন দেখি সেই নেমে আসা ধীরে ধীরে এতোটা বেড়ে যাবে যে এটা এই দেশের উল্লেখযোগ্য একটি শক্তিতে পরিণত হবে৷ স্বপ্নটা কতোটা বাস্তব আর কতোটা অবাস্তব সেই প্রশ্ন এড়িয়েই এভাবে স্বপ্ন দেখি৷ এটা একটা বড় কারণ এই আন্দোলনের সাথে নিজের যুক্ত হওয়ার৷
আসলে জাহিদের মত স্বপ্ন অনেক ব্লগারই দেখে থাকেন৷ তাই আজ তাঁরা সামাজিক ইস্যু নিয়ে কেবল অন্তর্জালে লেখালেখিই করেন না প্রয়োজনে সশরীরে রাজপথেও নামেন৷ যার প্রমাণ সপ্তাহখানেক আগে ব্লগাররা দিয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দাওয়াত সাংবাদিক নেতাদের আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে পারলেও ব্লগাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন৷ গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৃবৃর্ত্তদের হাতে সাগর রুনির হত্যার বিচারে তাই তারা ব্লগ এবং ইউটিউবে ঝড় তুলছেন৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়