1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘তদন্ত করলেও আপত্তি নেই!’’

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৯ মে ২০১৪

ভারতে বহু চেষ্টা করেও সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত ঠেকানো গেল না! যদিও ভাঙবেন, তবু মচকাবেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

https://p.dw.com/p/1Bx7N
Westbengalen Wahlen
ছবি: DW/P. Mani Tewari

‘‘সারদা নিয়ে রাজ্য সরকারের আর কোনও দায় রইল না৷ এবার সিবিআই সবার টাকা ফেরত দেবে,'' বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ সারদা চিট ফান্ডের হাতে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের প্রতারিত হওয়ার ঘটনার তদন্ত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই – শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর এটাই ছিল মমতার প্রতিক্রিয়া৷ এক নির্বাচনি জনসভায় দাঁড়িয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিবিআই কেন, সিবিআইয়ের বাবা তদন্ত করলেও আপত্তি নেই৷ আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছিল রাজ্য সরকার৷ এবার সিবিআই টাকা ফেরত দেবে৷''

উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার শুরু থেকেই চেষ্টা করে গিয়েছে যাতে সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত সিবিআই-এর হাতে না চলে যায়৷ সেই সওয়ালের পক্ষে যুক্তি হিসেবে রাজ্য সরকার বরাবর এটাই বলেছে যে, কমিশন তৈরি করে প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ অন্যদিকে রাজ্য পুলিশের যে বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে সারদা প্রতারণার তদন্তের ভার দেওয়া আছে, তাদেরও অগ্রগতি এবং সাফল্যের দাবি করেছিল রাজ্য সরকার৷ কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তে রাজ্য পুলিশের কাজের অনেক ভ্রান্তি এবং গাফিলতি প্রকাশ পেয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টও আর রাজ্যের তদন্তে আস্থা রাখতে পারল না৷

সর্বোচ্চ আদালত রায় ঘোষণার সময় জানিয়েছে, সারদা সংস্থার প্রতারণার জাল কেবল পশ্চিমবঙ্গেই নয়, প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা এবং আসামেও ছড়িয়ে আছে৷ চিট ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা কয়েক হাজার কোটি টাকা সম্ভবত বিদেশে পাচার হয়েছে বিভিন্ন সময়ে৷ কাজেই সিবিআইয়ের মতো কোনও উচ্চ পর্যায়ের সংস্থাই এই মামলার তদন্তের জন্য উপযুক্ত৷ এখন থেকে সিবিআই স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে, তাদের সাহায্য করবে রাজ্য পুলিশ৷ চিট ফান্ড সংক্রান্ত অন্যান্য মামলাও হাতে নিতে পারবে সিবিআই৷ শুধু সারদা নয়, রাজ্যের আরও ১৭টি চিট ফান্ড সিবিআই তদন্তের আওতায় আসবে৷

রাজ্য সরকারের তরফে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন, তাঁরাও এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন৷ তবে অর্থমন্ত্রী একই সঙ্গে দোষ চাপালেন কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে যে, রাজ্যে চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপযুক্ত আইন ছিল না৷ রাজ্য সরকার দু-দুবার নতুন আইনের খসড়া পাঠিয়েছে, কেন্দ্র তবু কোনও উদ্যোগ নেয়নি আইন আনার৷ এবং সেই পুরনো কথাই বললেন অমিত মিত্র যে, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে চিট ফান্ডের কারবার শুরু হয়েছিল৷ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট যদিও বলছে, সারদার ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল ২০১১ সাল থেকে, অর্থাৎ গত তিন বছরে, তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে৷

বামফ্রন্টের তরফে বিমান বসু এদিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কয়েকটি বিশেষ মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সারদা চিট ফান্ডের কর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এমন লোকজনকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিয়ে সাংসদ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ বিমান বসুর বক্তব্য, সবাই ভাবছেন সর্বোচ্চ আদালত কেবল তৃণমূল সাংসদ, বর্তমানে জেলবন্দি সাংবাদিক কুনাল ঘোষের কথাই বলছে৷ কিন্তু একা কুনাল নন, কে ডি সিং-ও তৃণমূলের সাংসদ, যিনি নিজে অ্যালকেমিস্ট নামে একটি চিট ফান্ডের মালিক৷

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও চিট ফান্ডকে সিবিআই তার তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তাও একবার মনে করিয়ে দেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান৷ সেইসঙ্গে দাবি তোলেন, সারদা সংস্থার সঙ্গে যাঁরা সরাসরি যুক্ত ছিল, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তাদের সবাইকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ মন্তব্য করেন, যারা সারদার অনুষ্ঠানমঞ্চে থাকত, প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন করত, সুদীপ্ত সেনকে দরাজ সার্টিফিকেট দিত, তাদের এবার ধরুক পুলিশ৷ বিমান বসুর ইঙ্গিত অবশ্যই ছিল রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের দিকে৷ বাংলা নিউজ চ্যানেলগুলি রায় ঘোষণার পর থেকেই সেইসব অনুষ্ঠানের পুরনো টিভি ফুটেজ দেখাতে শুরু করেছে৷

সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান৷ তিনি এদিন সর্বোচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জায়গা থেকে নয়, তিনি এই কেলেঙ্কারির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছিলেন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষরা যাতে ন্যায়বিচারের সুযোগ পান, সেই কথা ভেবে৷ কারণ, রাজ্য সরকার লক্ষ লক্ষ খেটে খাওয়া মানুষের অসহায়তা, হতাশার কথা বুঝতে চাইছিলেন না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য