সিরিয়ার বেহাল অর্থনীতি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
১০ ডিসেম্বর ২০২৪২০১১ সালে সিরিয়ার অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। ওই বছরই বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা তৎপরতা বাড়ায়। পুরোদস্তুর গহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বিশ্বের ১৯৬টি দেশের মধ্যে অর্থনীতির নিরিখে সিরিয়া ছিল ৬৮তম স্থানে। প্যারাগুয়ে ও স্লোভেনিয়ার সঙ্গে তুলনীয় ছিল তাদের জিডিপি-র পরিমাণ।
কিন্তু গতবছর তারা ছিল ১২৯তম স্থানে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতে, তাদের অর্থনীতি এখন নয়শ কোটি ডলারের। এখন চাদ, ফিলিস্তিনের সঙ্গে তাদের তুলনা চলে।
প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, দেশ থেকে ৪৮ লাখ মানুষের চলে যাওয়ার ফলে তারা এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গরিব দেশ বলে পরিচিত।
জাতিসংঘের শাখা সংগঠন ওসিএইচএ-র মতে, দেশের ৭০ লাখ মানুষ এখন গৃহহীন।
এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ফলে দেশের পরিকাঠামোর অবস্থা খুবই খারাপ। বিদ্যুৎ, পরিবহন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল। প্রচুর শহরে ধ্বংসের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে।
এই সংঘাতের ফলে সিরিয়ার পাউন্ডের মূল্য কমেছে। তার ফলে সিরিয়ার মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও পাল্লা দিয়ে কমেছে।
গতবছর সিরিয়ায় মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল মারাত্মক। গত জুনে সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ(এসসিপিআর) জানিয়েছে, তার আগের বছরের তুলনায় কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স ছিল দ্বিগুণ। তাদের রিপোর্ট বলছে, সিরিয়ার অর্ধেক মানুষ তাদের জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম জিনিসও কিনতে পারছে না।
সিরিয়ার অর্থনীতির দুই স্তম্ভ হলো, তেল ও কৃষি। যুদ্ধের ফলে তাতে ধাক্কা লাগে। ২০১০ সালে তেল রপ্তানি করে সরকারের রাজস্বের এক চতুর্থাংশ অর্থ আসত। কৃষি থেকেও সমপরিমাণ অর্থ আসত।
কিন্তু আসাদের কাছ থেকে বিদ্রোহীরা, আইএস এবং কুর্দিশ বাহিনী তেলের খনির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সরকারও বিদেশে তেল রপ্তানি করতে পারে না। আসাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় তেলের উৎপাদন ২০ হাজার ব্যারেলে নেমে আসে। সিরিয়া পুরোপুরি ইরান থেকে আমদানি করা জিনিসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
কত তাড়াতাড়ি হাল ফিরবে?
এই প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে,সিরিয়ায় কারা এবার ক্ষমতায় থাকবে, তার উপর। তাদের শহরগুলিকে গড়ে তুলতে হবে, পরিকাঠামো ঠিক করতে হবে, কৃষি এবং তেলের ক্ষেত্রকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
কিছু সিরিয়া বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ২০১১ সালের জিডিপি-তে পৌঁছাতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে। তবে এরপর যদি রাজনৈতিক অস্তিরতা দেখা দেয়, তাহলে সিরিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে তাদের আশঙ্কা।
সাবেক আল কায়দার সঙ্গে যুক্ত হায়াত তাহরির আল-শাম(এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে দামাস্ক দখল করেছে বিদ্রোহীরা। তারা এখন নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। এই সংগঠনকে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। পশ্চিমা ও আরব দেশগুলি মনে করছে এইচটিএসের সিরিয়া শাসনের অর্থ হলো, আসাদকে সরিয়ে কট্টরপন্থি শাসনের সূচনা হওয়া।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রবীণ বিশ্লেষক ডিল্যানি সাইমন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ''সিরিয়ার উপর খুবই কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। সেই দেশ যখন দাঁড়াতে চাইছে, তখন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার অর্থ, তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে দেয়া।''
এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা সিরিয়াকে সাহায্য করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না।
গত রোববার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের যতটা সম্ভব সাহায্য করতে পারে। আসাদের শাসন থেকে স্বাধীন, সার্বভৌম শাসনে যাওয়ার জন্য অ্যামেরিকা তাদের সাহায্য করবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, সিরিয়ায় ওয়াশিংটনের জড়িয়ে পড়া উচিত নয়।
বার্তাসংস্থা এপি সোমবার জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন এইচটিএসকে জঙ্গি সংগঠনের তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা করেছে।
ইইউ-র মুখপাত্র ব্রাসেলসে সোমবার বলেছেন, এইচটিএস কী বলছে, সেটা বড় কথা নয়, তারা কী করছে, সেটাই ইইউ-র কাছে বড় বিষয়।
এখন কী হতে পারে?
এইচটিএস নেতা মোহামেদ আল-জোলানি সোমবার আসাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কথা বলেছেন।
সোমবার দেশজুড়ে কার্ফিউ জারি করায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে সিরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক ও দুইটি বাণিজ্যিক ব্যাংক খুলবে। কর্মীদের অফিসে আসতে বলা হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান মুদ্রাই বহাল থাকবে।
তেল মন্ত্রণালয় তাদের সব কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বলেছে। বলা হয়েছে, তাদের সুরক্ষা দেয়া হবে।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার রোববার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, তারা মানুষের পাশে থাকবেন। রিসেপশন সেন্টারে খাবার, জল, জ্বালানি, টেন্ট, কম্বল দেয়া হবে।
নিক মার্টিন/জিএইচ