সীতাকুন্ডু উপকূলে বাড়ছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের প্রসার
২৯ আগস্ট ২০০৮নির্মাণ শিল্পে ইস্পাতের চাহিদা দিন দিনই বেড়ে চলায় সীতাকুন্ডু উপকূলজুড়েই গড়ে উঠেছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড৷
সীতাকুন্ডুর ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলে এখন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সংখ্যা ২২টি৷ বিভিন্ন দেশের পরিত্যাক্ত জাহাজ ভিড়ছে এখানে৷ আর এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটেই দিন চালাচ্ছে ৩০ হাজার শ্রমিক৷
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিএসবিএ-র দাবি, সীতাকুন্ডুর জাহাজ ভাঙ্গার এসব ওয়ার্কশপই বিশ্বে খোলা আকাশের নীচে ওয়ার্কশপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়৷ গত অর্থ বছরে এখানে ভাঙ্গা হয়েছে ১০ লাখ টন ইস্পাত৷
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকদের মতে, সীতাকুন্ডু উপকূলে সমুদ্রের ঢেউ বেশি হওয়ায় সৈকতের মাত্র দু´শ গজের মধ্যেই ভেড়ানো যায় জাহাজ৷ যেখানে ভারত কিংবা চীনে জাহাজ ভেড়াতে হয় সৈকত থেকে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার দূরে৷ আর এ কারণেই প্রতিটি জাহাজ ভাঙ্গাতে বেঁচে যাচ্ছে হাজার হাজার ডলার৷ তার উপর বাংলাদেশে শ্রম বাজার সস্তা৷ ব্যাটে বলে মিলে যাওয়ায় সীতাকুন্ডু উপকূলই হয়ে উঠেছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের জন্য উপযুক্ত জায়গা৷ বর্তমানে ৮০ হাজার টন ওজনের জাহাজও ভাঙ্গা হচ্ছে এখানে৷
বাংলাদেশের ২শ´টি রি-রোলিং কারখানায় পুরনো জাহাজের ওসব ইস্পাত গলিয়ে তৈরি করা হয় রড৷ বলাবাহুল্য, নির্মাণ শিল্পে এর চাহিদা আকাশচুম্বী৷ কারণ বাংলাদেশে কোন লোহার খনি না থাকায় বাইরে থেকে রড আমদানি করলে খরচ পড়ে প্রচুর৷ তার উপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি আর রপ্তানি শুল্ক বাড়িয়ে দেয়ায় এখন ভারত থেকে প্রতি টন ইস্পাত আমদানি করতে লাগে প্রায় ১২শ´ ডলার৷ এক্ষেত্রে আমদানিকৃত ইস্পাতের তৈরি রডের চেয়ে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ইস্পাত থেকে তৈরি রডের গুণগত মান কম হলেও নির্মাণ শিল্পে এর চাহিদাই এখন তুঙ্গে৷ কারণ ২০ ভাগ কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে এই রড৷
তবে সীতাকুন্ডুর এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প পরিবেশের ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের৷ তাছাড়া এখানে কাজ করাও ঝুঁকিপূর্ণ৷ জাহাজ ভাঙ্গার সময় প্রায়ই ঘটছে দুঘর্টনা৷ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের হিসেবেই, এ বছর তাদের ওয়াকর্শপে মৃত্যু হয়েছে ১০ জন শ্রমিকের৷ তবে শ্রমিকদের দাবি, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷ দুঘর্টনায় হতাহতদের জন্য সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও নেই বলে অভিযোগ শ্রমিকদের৷
অবশ্য শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকদের যুক্তি, তাদের এই কাজের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না মোটেই৷ কারণ, পরিত্যাক্ত জাহাজ সাগরে ফেলে না দিয়ে রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে নতুন পণ্য উত্পাদন করা হচ্ছে৷ এতে বরং ভালই হচ্ছে পরিবেশের৷ এমনকি জাহাজের তেলটাও পরিশোধন করে কাজে লাগানো হচ্ছে৷
আর শ্রমিকদের ব্যাপারে তারা বলছেন, সব শিল্পেই এমন দুঘর্টনা ঘটতে পারে৷ তাদের দাবি, বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে এই শিল্পের প্রসার অনেকটা আশীর্বাদই বলা যায়৷ এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বহু মানুষের৷