সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা জানতে আবার বাঘশুমারি
২৮ অক্টোবর ২০২২‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প'-এর মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়৷ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এক মাসের মধ্যে এই বরাদ্দের টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করছে বনবিভাগ৷
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপিং (ক্যামেরার ফাঁদ) পদ্ধতিতে বাঘশুমারির কাজ শুরু করা হবে বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন ৷
তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তিন কোটি ২১ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে ৷ ” এর আগে গত ২৩ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় ৷ ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প' এর মোট ব্যয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ৷ এ প্রকল্পের আওতায় আরও প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ের কয়েকটি কার্যক্রম রয়েছে৷ কিন্তু সেই বরাদ্দে এখনো অনুমোদন মেলেনি৷ গোটা প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত৷
প্রকল্পের শুধু বাঘশুমারি খাতে তিন কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল ৷ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেই ব্যয় সামান্য কমিয়ে তিন কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে৷
প্রকল্প পরিচালক মোহসিন বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য ১৭ অক্টোবর বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাঘ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে ৷ সভায় কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা, ক্যামেরা সংগ্রহ, ম্যাপ তৈরি, ক্যামেরা স্থাপনের স্থান নির্ধারণের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে ৷
‘‘বনের গভীরে এমন সব জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যেখান দিয়ে বাঘ চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে ৷ খুঁটিতে বাঘের আনুমানিক উচ্চতায় ক্যামেরা বসানো হবে ৷ এসব ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ বা কোনো প্রাণী চলাফেরা করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি উঠবে ৷ ”
এই পদ্ধতিতে ২০১৩-২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রথম বাঘ জরিপ করা হয়৷ তখন বাঘ পাওয়া গিয়েছিল ১০৬টি ৷ দ্বিতীয়বার ২০১৭-২০১৮ জরিপ করে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১১৪টি৷
এই তথ্য জানিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ‘‘আশা করছি, এবার শুমারিতেও বাঘের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে৷ ”
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, চোরাশিকারী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অতিরিক্ত লবণের কারণে সুন্দরবনে বাঘ হুমকির মুখে রয়েছে ৷ যে কারণে বাঘের হালনাগাদ তথ্য ও বাঘ সংরক্ষণে বনবিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে ৷ এ প্রকল্পের আওতায় বনের যে এলাকায় বাঘ বেশি রয়েছে সেখান থেকে কয়েকটি বাঘ অন্য যে এলাকায় বাঘ কম রয়েছে, সেখানে স্থানান্তর করা হবে ৷ বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয় করা হবে ৷
‘‘সুন্দরবনের মধ্যে শিবসা, পশুর ও পাঙ্গাশিয়াসহ বড় নদীগুলোর কারণে বাঘ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে, বাঘের ইনব্রিডিং হচ্ছে ৷ অন্তঃপ্রজননের কারণে, বাঘ নানাভাবে দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে ৷ সুন্দরবনের একস্থান থেকে নিয়ে, অন্য স্থানে বাঘ স্থানান্তর করা গেলে প্রজননের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে ৷”
গোটা প্রকল্পের বিষয়টি তুলে ধরে মিহির কুমার দো বলেন, বাঘের আবাসস্থল প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায়, সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় করা হবে ৷
সুন্দরবনের গ্রামসংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে থাকে ৷ ওই ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের বেড়া নির্মাণ করে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রকল্পে ৷
এ ছাড়া সুন্দরবনে ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় ৷ তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকারপ্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে ৷ এসব প্রাণীর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে ৷
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে নানাভাবে অর্ধশত বাঘের মৃত্যু হয়েছে ৷ এরমধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয় ৷
এ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১১টি বাঘের চামড়া এবং বাঘের অঙ্গপ্রতঙ্গ উদ্ধার করে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)