সুমেরু বাঁচানোর কাজ শুরু
১৩ জুলাই ২০১২সুমেরু বা উত্তর মেরু পৃথিবীর দুর্গমতম অঞ্চলগুলির মধ্যেই পরিগণিত হতো৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কল্যাণে কিংবা অকল্যাণে এখন সেখানে বরফ গলে জাহাজ চলার, ফলে নানান ধরণের বাণিজ্যিক বিচারে ফলপ্রসূ গতিবিধির পথ খুলে গেছে৷ প্রকৃতির খনিজ তেলের ভাণ্ডারের ১৩ শতাংশ, এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নাকি এই সুমেরু অঞ্চলে মজুদ, যদিও পুরু বরফের আস্তরণের তলায়৷ কাজেই তেলের কোম্পানিগুলির নজর পড়েছে সুমেরুর দিকে৷ ওদিকে গ্রিনপিসের মতো পরিবেশ সংগঠনগুলি তেলের ড্রিলিং'এর ফলে উত্তর মেরু অঞ্চলের নাজুক পরিবেশের উপর কি কুপ্রভাব পড়তে পারে, তাই নিয়ে চিন্তিত৷
এবং তা নিয়ে গ্রিনপিসের অভিযানের ঢেউ জার্মানিতেও পৌঁছেছে৷ ডয়চে ভেলের বন শহরেরই জোড়োয়া অংশ বাড গোডেসবের্গ৷ সেখানেই এক রোদঝলমল গ্রীষ্মের সকালে গ্রিনপিসের কর্মীদের দেখা গেল শামিয়ানা টাঙাতে, পোস্টার লাগাতে৷ যেমন ২০ বছর বয়সের লুকাস জিমার, যে গ্রিনপিসের টি-শার্ট পরে সবে একটি তেলের রিগের মডেল তৈরি করা শেষ করেছে৷ এটাই হল তাদের স্ট্যান্ড, এখান থেকেই তারা পথচারীদের দৃষ্টি এবং মনোযোগ আকর্ষণ করবে, সুমেরু বাঁচাও অভিযান সংক্রান্ত খবরাখবর দেবে৷ লুকাস ব্যাখ্যা করল, ‘‘এটা হল বিশ্বব্যাপী একটি সুমেরু বাঁচাও অভিযানের সূচনা৷ গ্রিনপিস সুমেরুকে একটি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার ডাকে দুনিয়ার মানুষকে শামিল হবার আহ্বান জানাচ্ছে৷ আমরা সুমেরুতে বাণিজ্যিক মাছ-ধরা চাই না, তেলের জন্য ড্রিলিং চাই না৷ ঘটনাটা হল এই যে, শেল কোম্পানি সুমেরুতে একটি গবেষণা পোত পাঠিয়ে কিছু পরীক্ষামূলক ড্রিলিং করতে চলেছে৷''
শেল অ্যালাস্কার উপকূলে ড্রিলিং করতে চলেছে৷ অন্যদিকে রুশ গ্যাজপ্রম সংস্থা সুমেরুর রুশ উপকূলে তেল নিষ্কাশনের পরিকল্পনা করছে৷ পরিবেশ সংরক্ষণবাদীদের দুশ্চিন্তা, এই ধরণের একটি স্পর্শকাতর এলাকায় তেল নিষ্কাশন কিংবা পরিবহনের সময় যদি তথাকথিত অয়েল স্পিল বা তেল বেরিয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে, তাহলে ত্রাণ কিংবা উদ্ধারকারীদের সেখানে পৌঁছনো অতি কঠিন হবে, তা উষ্ণায়নের ফলে বরফ যতোই গলুক না কেন৷ লুকাসের ভাষ্যে, ‘‘সমস্যা হল এই যে, পরিবেশটা অতীব কঠিন৷ বছরের অর্ধেক সময় অন্ধকার, তাপমাত্রা অতি নিম্ন৷ কাজেই ড্রিলিং খুব ঝুঁকিজনক হয়ে ওঠে৷ ওয়েল স্পিল বা সে ধরণের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যে সব জীবাণু সেই তেলের বিকিরণে সাহায্য করে, তারাও অতো ঠাণ্ডায় ভালোভাবে কাজ করতে পারে না৷ কাজেই সুমেরুতে তেল দুর্ঘটনার ফলশ্রুতি ভূমধ্যসাগর কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর হবে৷''
বলতে কি, এই প্রসঙ্গে অ্যালাস্কায় এক্সন ভালডেজ দুর্ঘটনা কিংবা মেক্সিকো উপসাগরে ডিপ ওয়াটার হরাইজন দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করা যেতে পারে৷ গ্রিনপিসের খবর অনুযায়ী, মেক্সিকো উপসাগরে আজও প্রতি সপ্তাহে একটি করে মরা শুশুক ভেসে উঠছে, দুর্ঘটনার দু'বছর পরেও৷ কাজেই গ্রিনপিসের এই সর্বাধুনিক অভিযান সম্পর্কে লুকাসের বক্তব্য, ‘‘আমরা দু'টি উদ্দেশ্যে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছি৷ প্রথমত একটি পোস্টকার্ড পিটিশন, যা সরাসরি যাবে শেল কোম্পানির প্রধানের কাছে, আবেদন করা হবে, তারা যেন তাদের জাহাজটিকে থামায়৷ দ্বিতীয়ত, আমরা সুমেরুকে বিশেষ সুরক্ষা দেবার জন্য এই নতুন অভিযানটি শুরু করছি৷ বাণিজ্যিক গতিবিধির পরিবর্তে আমরা চাই একটি সুমেরু সংরক্ষিত এলাকা৷''
গত মঙ্গলবারেই বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ গোষ্ঠীর একটি জোট মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এই অভিযোগে যে, সরকার বিভিন্ন পরিবেশ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে সুমেরু সাগরে ড্রিলিং'এর ক্ষেত্রে ‘স্পিল রেসপন্স প্ল্যান', বা তেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আপৎকালীন পরিকল্পনাগুলি অনুমোদন করেছেন৷ এই মামলার ফলে চলতি মরসুমে ড্রিলিং রোখা যাবে না ঠিকই, কিন্তু পরের মরসুমগুলোয় তা সম্ভব হতে পারে৷ পরিবেশ সংরক্ষণ গোষ্ঠীগুলি শেল কোম্পানির নাম না করেই বলছে, সুমেরু অঞ্চলে তেলের দুর্ঘটনার মোকাবিলার যে পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তারা তা'তে চোখ বুঝে ‘রাবার স্ট্যাম্প' মেরে দিয়েছেন৷
খবরটা শুনে বাড গোডেসবের্গের লুকাস জিমার তার কাজে নতুন উদ্যম পাবে নিশ্চয়৷
প্রতিবেদন: আইরিন কোয়েল / এসি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক