1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ডেজারটেক

৩০ মে ২০১১

পশ্চিমের দেশগুলো সম্ভাব্য বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় তৎপর৷ আর এক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে সূর্যের আলো৷ প্রকৃতির এই অপার উৎসকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এক বিশাল প্রকল্প যার নাম ডেজারটেক৷

https://p.dw.com/p/11QSt
ডেজারটেকছবি: Solarmillenium AG

ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি জার্মানির শতকরা আশি ভাগ জ্বালানি বিদ্যুৎ আসে বিদেশ থেকে৷ কেবল জার্মানি নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশই তাদের জ্বালানি বিদ্যুৎ এর জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল৷বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় জার্মানিতে বায়ু চালিত বিদ্যুৎ অত্যন্ত প্রচলিত, অন্যদিকে স্পেন; যেখানে বছরের বেশিরভাগ সময় সূর্যের কড়া আলো পাওয়া যায়, তারা সৌর বিদ্যুৎ এর ওপর নির্ভরশীল৷ উল্লেখ্য, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম ‘আন্দাসোল' যেটি স্পেনে অবস্থিত৷ কিন্তু ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের দেশগুলোতে বছরের বেশিরভাগ সময় সূর্যের আলো তেমন কড়া না হওয়ায় তারা এই সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে না৷ আর সেজন্য ইইউর বিভিন্ন দেশ উত্তর আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে ডেজারটেক৷ ডেজার্ট বা মরুভূমির প্রচণ্ড রোদকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করে সেই বিদ্যুৎ নিয়ে আসা হবে ইউরোপের নানা দেশে৷ এই ডেজারটেক প্রকল্পকে ভবিষ্যতের আশা হিসেবে দেখছে জার্মানি৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দিন কয়েক আগে এই প্রকল্প সম্পর্কে তেমনটিই বললেন, ‘বর্তমানে এটা আমাদের একটি ভিশন৷ কিন্তু ভবিষ্যতে ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে এই প্রকল্প একটি বন্ধন হয়ে উঠতে হতে পারে৷'

ডেজারটেক কীভাবে কাজ করে

ডেজারটেক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে বসানো হচ্ছে বিশাল বিশাল আকারের সৌর প্যানেল৷ প্যানেলগুলি একটি আরেকটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে দূর থেকে কিংবা অনেক ওপর থেকে মনে হবে মরুভূমির মধ্যে সারি সারি বিশাল আকারের আয়না ফেলে রাখা হয়েছে৷ আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে প্রচণ্ড রোদ এসে যেন ঝলসে দিচ্ছে গোটা এলাকাকে৷ তবে এই সোলার প্যানেল কিন্তু বাড়ির ছাদে থাকা প্রচলিত প্যানেলের মত নয়৷ এই বিশাল আকারের সোলার প্যানেল বা আয়নাগুলো থেকে আসা তাপ একীভূত করা হয় প্রকান্ড আকারের পানির ট্যাংকে৷ প্রচণ্ড তাপে এই ট্যাংকের পানি গরম হয়ে বাষ্পে পরিণত হচ্ছে৷ সেই বাষ্প গিয়ে চাপ তৈরি করছে টারবাইনে, আর বাষ্পের চাপে টারবাইন ঘুরছে, তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ৷ অর্থাৎ কেবল সৌরশক্তিকে নয়, পানি এবং বাষ্পশক্তিকেও এই ডেজারটেক প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎ তৈরির কাজে৷ আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখা হচ্ছে ভবিষ্যতে রপ্তানির জন্য৷

Superteaser NO FLASH Desertec Wüstenstrom
ভবিষ্যত এই সৌরবিদ্যুতেইছবি: AP

এই তো গেল বিদ্যুৎ তৈরির কথা, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আরও একটি কাজ করা হচ্ছে তা হলো সমুদ্রের পানিকে লবণমুক্ত করা৷ এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত গবেষকরা জানিয়েছেন, যে সৌর প্যানেল ব্যবহার করে প্রতি ঘন্টায় চার মিলিয়ন লিটার সমুদ্রের পানির লবনাক্ততা দূর করা সম্ভব৷ আর সেই লবণমুক্ত খাবার পানি রপ্তানি করা হবে অন্যান্য দেশে৷ তবে এটি করতে তুলনামূলক খরচ বেশি পড়বে বলে জানা গেছে৷

উত্তর আফ্রিকায় কর্মসংস্থান ও মতপার্থক্য

এই প্রকল্পের জন্মদাতা জার্মানির গেরহার্ড ক্নিস জানালেন যে, এর একটি বড় সুবিধা হলো দিনের বেলাতে সৌর বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখার পাশাপাশি রাতের বেলাতে উৎপাদিত তাপ থেকেও বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যাবে৷ এই প্রকল্পের ব্যাপারে ক্নিস বলেন, ‘‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সৌরশক্তি উৎপাদিত হতে পারে যে দেশগুলোতে এবং যে দেশগুলো এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে রয়েছে উভয়ে এই ডেজারটেক প্রকল্পের মাধ্যমে এক হয়েছে৷ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করতে পারবে৷ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে শতগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবো৷''

তার মতে উত্তর আফ্রিকার মরক্কো, মিশর এবং টিউনিসিয়াতে কর্মসংস্থান তৈরিতে এই প্রকল্প সহায়তা করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যত সৌর প্যানেল বসাতে হবে তার অর্ধেকেরও বেশি বসবে এইসব জায়গাগুলোতে৷ তবে এইজন্য যে বিশাল জায়গা লাগবে তা নয়৷ আমি বাইরে থেকে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, কারণ এটা ঠিক করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর৷ এই ব্যাপারে তাদেরকেই কাজ করতে হবে৷''

তবে ডেজারটেক প্রকল্প নিয়ে এখনও ইউরোপীয় দেশগুলো এবং আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে৷ ডেজারটেক প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তা থিমো গ্রোপ এই ব্যাপারে বললেন, ‘‘আমাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এখনও অনেক কাজ বাকি৷ উৎপাদিত বিদ্যুৎ কোথায় জমা রাখা হবে, কীভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হবে সেসব নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে৷''

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মতপার্থক্য দূর করে ডেজারটেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কেবল ইউরোপ নয়, গোটা বিশ্বের সামনেই এটি হয়ে উঠবে এক অভাবনীয় উদাহরণ৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক