স্বাধীনতার ঠিক আগে হিমশিম খাচ্ছে জুবা
৫ জুলাই ২০১১৯ই জুলাই বিভক্ত হয়ে যাবে আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল দেশ সুদান৷ দক্ষিণের মানুষ এক গণভোটে এই বিভাজনের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন৷ রাজনৈতিক এই সিদ্ধান্ত অবশ্য জটিলতায় ভরা৷ কারণ উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে যোগসূত্র এতই নিবিড়, যে রাতারাতি মাঝখান দিয়ে ছুরি চালিয়ে দিলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল চরম বিপদে পড়বে, কারণ সেখানে প্রয়োজনীয় প্রায় সব রসদই আসে উত্তর থেকে৷ বাস্তবে সেরকমটাই ঘটছে৷ অন্যদিকে দক্ষিণে রয়েছে পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডার৷ সেই তেল বিক্রির আয় আর না থাকলে উত্তরের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে৷
সুদানের রাজধানী খার্তুম বড় এক শহর৷ আফ্রিকার মানদণ্ডে বেশ সাজানো-গোছানো, মোটামুটি নিরাপদ৷ চীন সেখানে আট লেনের হাইওয়ে বানিয়ে দিয়েছে৷ রাস্তাঘাটে কমবেশি নিয়ম মেনেই গাড়ি চলাচল করে৷ ইসলামি আইনের কারণে প্রকাশ্যে মদ্যপান নিষিদ্ধ৷ আপাতত অনিশ্চয়তার ফলে পরিবেশ কিছুটা থমথমে৷
প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে নতুন রাষ্ট্রের রাজধানী হতে চলেছে জুবা৷ নামে শহর হলেও ঠাট্টা করে অনেকে একে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বলে থাকে৷ দোতলার বেশি বড় বাড়িঘর সেখানে প্রায় চোখেই পড়ে না৷ যার যেখানে খুশি বাড়ি তৈরি করছে৷ চারিদিক অরাজকতায় ভরা৷ আইন-কানুনের বালাই নেই৷ রাস্তাঘাট গর্তে ভরা৷ গাড়ির চালক নিজের মর্জিতেই চালাতে অভ্যস্ত৷ ‘জোর যার, মুলুক তার' নীতিই সেখানে শেষ কথা৷ প্রাক্তন বিদ্রোহীরা পুলিশের কাজ করার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু তাদের এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই৷ সবে তারা ইউনিফর্ম পেয়েছে৷ রয়টার্স'এর এক সাংবাদিক মাঝরাতে পথে বেরিয়েছিলেন৷ পুলিশ বললো, ‘‘কী করছেন এখানে? জানেন না, এটা আমাদের সময়? এসময় শুধু অপরাধীরা পথে বেরোয়৷'' বিদ্যুৎ ঘাটতি লেগেই আছে৷ কিন্তু এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও নতুন রাষ্ট্রের জন্মের আশায় উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরপুর সেখানকার মানুষ৷ চারিদিকে ধুলো উড়ছে৷ দেখেই বোঝা যায়, একেবারে শুরু থেকে গড়ে নিতে হবে নতুন রাষ্ট্রকে৷
আসলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বিশাল ফারাকই দক্ষিণের মানুষের বিচ্ছিন্নতাবাদের অন্যতম প্রধান কারণ৷ দক্ষিণের বিদ্রোহীরা সংগ্রাম চালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব রাষ্ট্র আদায় করে নিতে পেরেছে৷ তবে উত্তরের মানুষ এখন দক্ষিণের অবস্থা দেখে বলছেন, সেখানে বড়জোর শুধু বিয়ার পান করা যায়৷ ব্যাস, আর কিছু নেই৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ