1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ নভেম্বর ২০১৬

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল বলেছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের জন্য একটি স্বাধীন, সক্ষম নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন৷ তারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন এমন হতে হবে যাতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের আস্থা থাকে৷

https://p.dw.com/p/2StTm
নির্বাচন কমিশন
ছবি: DW

বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আছে আড়াই মাসের মতো৷ এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে৷ ওই কমিশনেরই ২০১৯ সালের শুরুতে সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করার কথা৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সংবাদ সম্মেলনের পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ‘ঐক্যমতের নির্বাচন কমিশন'-এর ফর্মুলা দিয়েছেন৷

১৪ নভেম্বর চারদিনের সফরে ঢাকা এসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে৷ বৃহস্পতিবার তারা সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন৷

ড. বদিউল আলম মজুমদার

প্রতিনিধি দলটি মূলত বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশ সফরে এলেও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মৌলিক অধিকার নিয়ে প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের নেতা বার্ন্ড লাঙ্গা সংবাদ সম্মেলনে বলেন,‘‘আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গঠিত হওয়া উচিৎ এবং আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আশ্বস্ত হয়েছি যে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবেই তৈরি করা হবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত৷ নিরাপত্তার নামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা উচিৎ নয়৷''

সাংবাদিকরা জানতে চান, সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা৷ এর জবাবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির প্রধান জিন ল্যামবার্ট বলেন, ‘‘আমাদের সফরে বাণিজ্যিক বিষয় প্রাধান্য পেলেও আমরা একটি শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছি৷ আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছি যার ওপর জনগণ আস্থা রাখতে পারে৷''

ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির প্রধান আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যে সবদলের অংশগ্রহণে হওয়া দরকার তা বাংলাদেশের সরকারও মনে করে৷ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক দলের৷ তবে পরিবেশটি এমন হতে হবে যাতে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং প্রচারণায় সমান সুযোগ কাজে লাগাতে পারে৷''

জিন ল্যামবারট জানান, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বেসরকারি সাহায্য সংস্থার অনুদান বিষয়ক আইন, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ইত্যাদি বিষয় নিয়েও তাদের আলোচনা হয়েছে৷''

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের বিদেশি বন্ধুরা বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চান৷ তারা চান একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন৷ আর সে কারণেই তারা একটি স্বাধীন এবং কর্মক্ষম নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছেন৷ তবে তা হবে কিনা নির্ভর করছে সরকারের ইচ্ছার ওপর৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তিনি আর বিতর্কিত নির্বাচন দেখতে চান না৷ তাই আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷''

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন করা দরকার৷ সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে৷''  ফর্মুলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার জন নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হবেন৷ জেলা জজের পদমর্যাদা সম্পন্ন, ন্যূনতম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন, সিনিয়র আইনজীবী, বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হবেন৷ পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করতে হবে৷ এ কমিটিতে থাকবেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বিশ্ববিদ্যায়লের সাবেক অধ্যাপক, দক্ষ যোগ্য নারী৷''

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ)-এর প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের বক্তব্যের পরের দিন খালেদা জিয়া একটি ঐক্যমতের নির্বাচন কমিশনের কথা বললেন- এটা তাৎপর্যপূর্ণ৷ তিনি বলেছেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে পরবর্তী নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে সেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে৷ এটা কতটা বাস্তবভিত্তিক তা নিয়ে আমার সংশয় আছে৷ আর মাত্র আড়াই মাস পর নুতন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে৷ অন্যদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছে তা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশারই প্রতিফলন৷''

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘শেষ বেলায় এসে খালেদা জিয়া মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে চান৷ তিনি মেসেজ দিতে চান বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান নতুন কমিশনকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য