স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সমান জরুরি
৪ জানুয়ারি ২০২১সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বয়স ৪৮। এই বয়সেও নিজেকে এতটাই ‘ফিট' রেখেছিলেন, যে কোন ভোজ্য তেল স্বাস্থ্যকর, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য জরুরি, বিজ্ঞাপনে সেই পরামর্শ দিতেন। ঘটনাচক্রে, সেই বিশেষ ব্র্যান্ডের তেলটি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী আদানিদের সংস্থার তৈরি। ফলে সৌরভ হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক খোঁচা-দেওয়া ‘মিম'ও চলে এসেছে, যে বিজেপির সংস্পর্শে থাকা বাঙালির জন্য ভালো নয়! কটাক্ষ অবশ্যই কদিন আগে সৌরভের রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করার দিকে। যে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ'–এর পর খবর রটেছিল, সৌরভ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন এবং তিনিই হবেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী।
কিন্তু এই রাজনৈতিক হুল ফোটানোর পাশাপাশি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে আরও একটা প্রসঙ্গ। তা হলে কি নিয়মিত জিমে গিয়ে শরীর চর্চা করা, নিজেকে ফিট রাখা, খেলাধুলোর মধ্যে থাকা— এগুলো স্বাস্থ্যরক্ষার পক্ষে যথেষ্ট নয়? সৌরভের হৃদযন্ত্রে সমস্যা কিছুটা অবিশ্বাসই তৈরি করেছে চিরাচরিত স্বাস্থ্যবিধি সম্বন্ধে। এ প্রসঙ্গে কী বলছেন চিকিৎসকেরা? কলকাতার বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শুভেন্দু বিকাশ ভট্টাচার্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন। প্রথমত, ‘‘হাতে–পায়ে ফিট থাকা, অর্থাৎ বহিরঙ্গে ফিট থাকা, আর ভিতরের ভিসেরাগুলো ফিট থাকা— এক নয়। ভিসেরা বলতে হার্ট, কিডনি, লাংস, ব্রেন। এগুলো কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, যেগুলো আমি বাইরে থেকে দেখতে পাচ্ছি না। যেগুলো স্বাস্থ্যকর চামড়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। সেগুলোয় যদি অসুখ থাকে, ধরা পড়ে না।''
দ্বিতীয় যে কথাটা বলছেন ডাঃ ভট্টাচার্য, সৌরভের ক্ষেত্রে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত ব্যবধানে মেপে দেখা। কিন্তু সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সৌরভের সূচে ভয় আছে। তিনি ইঞ্জেকশন নিতেও ভয় পান। যে কারণে রক্ত পরীক্ষা করে লিপিড প্রোফাইল খতিয়ে দেখার আবশ্যিক কাজটা তাঁর ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে হয়নি। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা লুকিয়ে থাকে সেখানেই। ডাঃ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘প্রেশার, কোলেস্টেরল এবং সুগার— এগুলো কিন্তু খুব ‘আনডিটেক্টেড' থাকে। ওঁর (সৌরভের) উচিত ছিল আরও আগে টেস্ট করা, কারণ ওঁর বাবা এই রোগেই অসুস্থ ছিলেন। অনেকদিন ধরে হার্টের অসুখেই ভুগেছেন।''
ডাঃ ভট্টাচার্যের মতে, বংশে কারও যদি এই ধরনের রোগ থাকে, তা হলে আগে থেকেই সাবধান হওয়া উচিত। আর চতুর্থ বিষয় হলো, কোন ধরনের টেস্ট করা উচিত, সে ব্যাপারে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কাজেই সৌরভের এই অসুস্থতা এক দিক দিয়ে অন্য সবার জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে। যে কেবল শরীরচর্চা করলে, নিজেকে ফিট রাখলেই হয় না, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাটাও জরুরি। বিশেষ করে পরিবারে যদি রোগ–ব্যাধির কোনও পুরনো সমস্যা থাকে। না হলে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারও ধারাল ইনসুইঙ্গারের মুখে ডিফেন্স হারিয়ে নড়বড়ে হয়ে যেতে পারেন!