সড়ক দুর্ঘটনা : চাপ নেই তো বিচার আর ক্ষতিপূরণও নেই
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ওই দুর্ঘটনার পর দেশ কাঁপিয়ে দেয়া আন্দোলনের মাঝে তাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দেন প্রধানমন্ত্রী৷ এছাড়াও ঘটনার জন্য দায়ী দুই চালক ও এক সহকারীর বিচার শেষে পরের বছরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে নিম্ন আদালতে৷
তবে ভিন্ন ঘটনার ছয় বছরের শিশু বৃষ্টি বড় হয়ে হয়ত জানতে পারবে,তার চোখের সামনে মারা যাওয়া মা-বাবা-নানার মৃত্যুর কোনো বিচার হয়নি৷ তাদের পরিবারের সাথে অন্তত সে রকমই একটি আলোচনা শুরু করেছে পরিবারের তিন জনকে চাপা দেয়া বাসের মালিক৷
গত ২১ জানুয়ারি ক্যানসারের রোগী নানীকে দেখতে মা-বাবা-নানার সাথে সে রওনা দিয়েছিল ক্যানসার হাসপাতালে৷ কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে মাতুয়াইল ইউ-টার্নে যেতেই একটি বাস চাপা দেয় তাদের সিএনজি অটোরিকশাকে৷ ছোট্ট শিশু বৃষ্টির চোখের সামনে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তার তিন প্রিয়জন৷
বৃষ্টির এক ভাই রয়েছে, তার বয়স ১১ বছর৷ এই ঘটনায় তার মামা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন৷ সেই মামলায় গ্রেপ্তার আছেন চালক ও হেল্পার৷
তবে মামাদের পরিবারে এখন অন্য বাস্তবতা৷ বিচারের চেয়েও দুটি শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়েই তাদেরকে বেশি ভাবতে হচ্ছে৷ আর এই সুযোগে বাস মালিকরা মামলা তুলে নেয়ার বিনিময়ে তিন লাখ টাকায় তিন প্রাণের সমঝোতা করতে চাচ্ছেন৷ তবে বৃষ্টির মামাদের দাবি ১০ লাখ টাকা৷ আলোচনা আপাতত পৌঁছেছে এই জায়গায়৷
এক প্রশ্নের জবাবে বৃষ্টির মামা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোন পদ্ধতির কথা তিনি জানেন না৷ কেউ তাকে বলেওনি৷ তাই তিনি বাস মালিকদের সাথে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আলাপ করেছেন৷ কারণ, তার কাছে এখন ড্রাইভার,-হেল্পারের শাস্তির চেয়েও ভাগ্নে-ভাগ্নীকে ভালো রাখা গুরুত্বপূর্ণ৷
সম্প্রতি কক্সবাজারে একই দুর্ঘটনায় ছয় ভাইয়ের মৃত্যু হয়৷ এটিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বাবার শ্রাদ্ধের পূজা দিয়ে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে৷ নিহত ভাইদের একজন কাতার প্রবাসী ছিলেন৷ শ্রাদ্ধের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে তিনি দেশে এসে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন৷
এই পরিবারে ভাই-বোন ছিল মোট ১০জন৷ এক ভাই কয়েক বছর আগে মারা যায়৷ এখন এক দুর্ঘটনায় চলে গেছেন ৬জন৷ এরাই ছিলেন এই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি৷ বেঁচে থাকা একমাত্র ভাই সবে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছেন৷
তাদের পিসতুতো ভাই লিটন শর্মার মতে, এই পরিবাররের আয়-রোজগারের আর কোনো পথ নেই৷ এ পর্যন্ত ৫০০-১০০০ টাকা করে কিছু সাহায্য পরিবার পেয়েছে৷ বড় অংকের মধ্যে নিহতদের স্ত্রীরা ৫৭ হাজার টাকা করে পেয়েছেন৷ সবাই মিলে আরো সাড়ে চার লাখ টাকা পেয়েছেন৷
আর সরকারের কাছ থেকে চাকরি ও বাসস্থান দেয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন লিটন৷
লিটন বলেন, তবে এরপরও ভবিষ্যতের চিন্তা ছাড়ছে না পরিবারের বিধবা স্ত্রীদের৷ নিহতদের সবারই রয়েছে সন্তান৷ তাদের সবার বয়স পাঁচ বছরের নীচে৷
কীভাবে বিচার, কীভাবে ক্ষতিপূরণ?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮-এর ১০৫ ধারায় ‘মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে, সেটাকে দণ্ডবিধি অনুসারে অপরাধ গণ্যের কথা বলা হয়েছে৷
তবে একইসঙ্গে এটাও বলা হয়েছে যে, দণ্ডবিধিতে যা-ই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে, উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷
অর্থ্যাৎ, এই আইনের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত বা প্রাণহানি ঘটলে দণ্ডবিধি প্রয়োগের কথা বলা হলেও একটু পরেই আবার দণ্ডবিধির উপর এই আইনকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে, যাতে সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷
তবে এই আইনটি পাসের পর সাজা কমিয়ে এবং জামিনের ব্যবস্থা বাড়িয়ে এই আইনের সংশোধনের দাবিতে পরিবহণ শ্রমিকরা দফায় দফায় ধর্মঘট দিয়েছে৷
অবশ্য এই আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছিল ২০১৮ সালের সেই আন্দোলন চলাকালে৷ সেদিন মন্ত্রিসভায় পাসের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷
তিনি তখন বলেছিলেন, পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, চালক চাইলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন, তাহলে তাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না৷ তখন দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী বিচার হবে৷
তবে আইন পাস হওয়ার পর দেখা যায়, এটা ছিল আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা৷ আইনে সরাসরি এটার উল্লেখ নেই৷
মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা ট্রাইব্যুনালে মৃত্যু, আহত ও সম্পত্তির ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারতেন৷ কিন্তু নতুন আইনে সেটা বাতিল করে ট্রাস্টি বোর্ডের কথা বলা আছে৷ তবে আইন পাসের সাড়ে তিন বছরেও ট্রাস্টি বোর্ড কার্যকর হয়নি৷
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিআরটিএ’র মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিধি প্রণয়ন না হওয়ায় এটা হয়নি৷ বিধি হলে তখন ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠন হবে, জনবল নিয়োগ দিতে হবে৷’’
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. হাদীউজ্জামান বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি আছে৷ যে ব্যক্তি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তিনি সারা জীবন কত টাকা রোজগার করতেন, তার চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হয়েছে, তার পরিবারের সদস্যদের কতটা ক্ষতি হয়েছে-এগুলো মিলিয়ে সেই হিসাবটা করা হয়৷’’
নিরাপদ সড়কের সংগ্রাম
২০০৫ সালের মে মাসে শাহবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার হ্যাপী৷ এ ঘটনার পর ফুঁসে ওঠে ক্যাম্পাস৷ সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে তার সহপাঠী,-সতীর্থদের এভাবে মাঠে নামার দৃশ্য বাংলাদেশে বেশ পরিচিত৷
তবে এই আন্দোলনগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালের আন্দোলনই নাড়া দিয়েছিল পুরো দেশকে৷ সেই আন্দোলনের খবর পৌঁছে গিয়েছিল পৃথিবীর আনাচে-কানাচেও৷
ঘটনার শুরু সেই বছরের ২৯ জুলাই৷ সেদিন বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় মারা যায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীব৷ ঘটনার দিনই তাদের সহপাঠীরা রাস্তায় নামে৷
নয়দিনের সেই আন্দোলনের মূল দাবিও ছিল নয়টি৷ একটি দাবি ছিল, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করা৷ আন্দোলন চলাকালে গাড়ির ফিটনেস ঠিক করতে সরকারের কাছে এক মাস সময় চায় বাস মালিকরা৷
সেই আন্দোলনের সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেছে৷ এখনো রাস্তায় চলছে ফিটনেটবিহীন গাড়ি৷
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, ‘‘আমাদের দুর্ঘটনার অন্যতম উপকরণ আনফিট যানবাহন৷ বিগত এক বছরে প্রায় ৬০ হাজার নতুন আনফিট যানবাহন আমাদের পরিবহনে যুক্ত হয়েছে৷’’
২০২১ সালে ফের সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় মাঠে নামে শিক্ষার্থীরা৷ সেবার নয় দফার সাথে আরো দুই দফা যুক্ত হয়৷ তবে আবারও আন্দোলন শেষ হওয়ার সাথে সাথে থেমে যায় তোড়জোড়৷
বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন৷ স্ত্রীর শোকের প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে ওঠার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে ইলিয়াস কাঞ্চন শুরু করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন৷ প্রায় তিন দশক ধরে এই আন্দোলন নিয়ে মাঠে আছেন তিনি৷
আন্দোলন আর আইন কি কমাতে পেরেছে মৃত্যু?
২০১৮ সালের আন্দোলন পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিলেও পরিসংখ্যান বলছে, এর ফলে সড়কে মৃত্যু কমেনি৷ ইলিয়াস কাঞ্চনের সংস্থা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-র হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সড়কে প্রাণ গেছে ৪ হাজার ৪৩৯ জন মানুষের৷ ২০১৯ সালে ৫ হাজার ২২৭ জন, ২০২০ সালে ৪ হাজার ৯৬৯ জন এবং ২০২১ সালে ৪ হাজার ২৮৯ জন নিহত হয়েছেন৷
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৪৩১জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আর পরের বছর নিহত হয়েছেন সালে ৬ হাজার ২৮৪ জন৷
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ২০১৮ সালে ৭ হাজার ২২১জন, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৮৫৫ জন, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৬৮৬ জন এবং ২০২১ সালে ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়৷
কেন সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না?
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, ‘‘আহত-নিহত সবই ঊর্ধ্বমুখী৷ আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা লাইফ-সাপোর্টে বা কোমায় চলে গেছে৷’’
‘‘যাদের নিয়ন্ত্রণের কথা ছিল৷ তারা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করেনি৷ বরং এটাকে বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আস্তে আস্তে এক্সপ্রেসওয়ের দিকে যাচ্ছি৷ মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন কেন চলবে? এটা পৃথিবীর কোথাও নেই৷ কিন্তু আমাদের এখানে চলছে৷ রাজনৈতিক সদিচ্ছা কাজ না করলে এই জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রণে আসবে না৷ এখন পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে গেছে৷ অবৈধ যানবাহনের সাথে অবৈধ চালকের সংখ্যা বেড়েছে৷’’
বিগত এক বছরে প্রায় ৬০ হাজার নতুন আনফিট যানবাহন পরিবহণে যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘অবৈধ যানবাহন বাড়ছে, অবৈধ চালক বাড়ছে, এদিকে আনফিট যানবাহন বাড়ছে৷’’
‘‘যারা সড়ক-মহাসড়কে চালাচ্ছেন, আমরা অনেক সময়ে বলি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারছে না৷ আমি মনে করি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রক্রিয়ায় আগে সংশোধন আনতে হবে৷ যে পদ্ধতিতে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে, সেটাতে পরিবর্তন আনা জরুরি৷ সড়কের ডিজাইনে আমূল পরিবর্তন আনা উচিত৷’’
‘‘মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ হাটবাজার-দোকানপাট করা যাবে না৷ এটা মহাসড়ক আইনেও আছে৷ এর বাস্তবায়ন হয়নি৷ বরং মহাসড়কের প্রতিটি জংশন পয়েন্ট কঠিন ব্যাধিতে ভুগছে৷ এসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়৷ এটাকে দুর্ঘটনা বলবেন, নাকি হত্যাকাণ্ড বলবেন, সেটাও ভাবতে হবে৷ কারণ, আপনি ঝুঁকিটাকে দূর করছেন না৷’’
‘‘সড়ক ব্যবস্থাপনা কোমায় চলে গেছে৷ গ্রামীণ সড়কগুলোকে আমরা মহাসড়কের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি৷ ফলে ছোট ছোট যানবাহন মহাসড়কে উঠে আসছে৷’’
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘‘এটা কমছে না, বরং বাড়ছে৷ এটার কারণ হলো, দুর্ঘটনা কমাতে আমরা যে সাজেশনগুলো দিয়েছি, সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে না৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও যে সাজেশনগুলো দিয়েছেন যে, এগুলো করো৷ সেগুলোরই কাজ হচ্ছে না৷ এই যে কাজ হচ্ছে না, এই কাজ যাদের করার কথা, তারা কাজ না করলে তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না৷ এই কাজ না করার জন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না৷ তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না৷’’
‘‘আমি বেতন পাইলাম, ঘুস পাইলাম, সবই পাইলাম- তাহলে আমার কী ঠেকা পড়ছে? আমি কাজ না করে যত সুযোগ-সুবিধা, সবই পাইলাম৷ আমাকে কেউ কোনো কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করছে না৷ যারাই দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক, তারা যতদিন পর্যন্ত জবাবদিহিতার মধ্যে না আসবে, ততদিন পর্যন্ত দুর্ঘটনা কমানো যাবে না৷’’
আলোচিত ঘটনার পর যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, সেটাকে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কৌশল বলে মনে করেন তিনি৷
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জিনিসটাকে থামানোর জন্য, ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটা কিছু করতে হয়৷ সেটাই করা হয়৷ তাও তো ক্ষতিপূরণের কথা বলেন৷ স্কুলের সামনে একটা দুর্ঘটনা ঘটলে দাবি কী থাকে? সেখানে একটা স্পিডব্রেকার করা৷ এটুকু দাবি৷ ডিসি সাহেব ওখানে একটা স্পিডব্রেকার বানিয়ে দেয়৷’’
সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাপনা যাদের দায়িত্ব, সেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয়৷ তখন তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হিসাবে পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানীর সাথে কথা বলতে বলেন৷
পরে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘‘কারোর একার প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব না৷’’
মৃত্যুর না কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে প্রতিবছর গাড়ি বাড়ছে, রাস্তাঘাট বাড়ছে, লোকসংখ্যা বাড়ছে-সবকিছু বাড়ছে৷ সেই প্রেক্ষিতে সংখ্যা যদি বলেন, সংখ্যা তো কমার কথা না৷’’
‘‘একটা বিষয় আপনাকে অ্যাভারেজ করতে হবে যে, আমাদের এত জনসংখ্যা, এখানে রেট কত৷ রেট যদি আপনি তুলনা করেন, সেই বলবো যে, আমাদের পাশের দেশ পাকিস্তান, ভারত, নেপালের চেয়ে আমাদের অবস্থা ভালো৷ এটা আমাদের কথা না৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা৷’’
‘‘আমাদের সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি এবং ইউজার তাদের বেশি প্রয়োজন৷ সরকার বিভিন্ন নিয়ম করতেছে, আইন করতেছে, মানুষের মধ্যে যদি শ্রদ্ধাবোধ না থাকে, আইন মানার প্রবণতা না থাকে, তাহলে কমবে কী করে৷’’