রাজনৈতিক মঞ্চে জয় ও তারেক
২৬ জুলাই ২০১৩প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এখন তারেক রহমান আর সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় তুলছেন৷ দু'জনের বক্তব্যই ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে৷
চার দিন আগে ঢাকায় একটি ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়৷ সেখানে তিনি বলেন, 'আমার কাছে তথ্য আছে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে৷' এর ঠিক একদিন পরই লন্ডনে একটি ইফতার পার্টিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান৷ সেখানে তিনি 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তীব্র আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান৷ পাশাপাশি আগামীতে বিএনপি ৰমতায় গেলে কী কী করা হবে সে সম্পর্কেও ধারণা দেন৷
সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সাধারণত খুব একটা মাথা ঘামান না৷ থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে৷ মাঝেমধ্যে দেশে আসেন৷ নীরবে এসে নীরবেই চলে যান৷ রাজনৈতিক বিষয়ে এর আগে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তিনি দেননি৷ কিন্তু হঠাত্ করে আওয়ামী লীগের আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার কথা বলে আলোচনায় এসেছেন তিনি৷ এই বক্তব্য তাঁর রাজনীতিতে আসার কোনো ইঙ্গিত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান৷ তিনি রাজনীতিতে আসুক তা আমরা সবাই চাই৷ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও চান তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হোন৷'' কী তথ্যের ভিত্তিতে জয় এমন কথা বললেন- তা জানতে চাইলে সাবেজ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘দেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে এট সবাই বিশ্বাস করেন৷ সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি এ কথা বলেছেন৷ কেউ ক্ষমতায় থাকলে বা ক্ষমতার বাইরে থাকলে তিনি আশা করতেই পারেন আবার ৰমতায় আসবেন৷''
তবে মোহাম্মদ নাসিমের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন তারেক রহমানের আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে চায়৷ জয়ের বক্তব্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে৷ তবে বাংলাদেশের মাটিতে ষড়যন্ত্র করে কেউ পার পায়নি আর পাবেও না৷'' এ সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান ব্যারিস্টার খোকন৷
৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন তারেক রহমান৷ ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা চলার সময় চিকিত্সার জন্য তিনি বিদেশে যান৷ যাওয়ার আগে রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসরের ঘোষণা দিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছিলেন৷ এরপর থেকে জনসমক্ষে আসেননি তিনি৷ রাজনীতি নিয়ে কথাও বলেননি৷ তবে গত বুধবার লন্ডনের একটি ইফতার পার্টিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তারেক রহমান৷ সেখানে তিনি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করা হবে তার একটি বিবরণ তুলে ধরেন৷ তাঁর এ বক্তব্য সম্পর্কে ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘তারেক রহমান তো গঠনমূলক বক্তব্য দিয়েছেন৷ দেশের জন্য তিনি ভাবেন এবং কিছু করতে চান৷ আর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তো শুধু তারেক রহমান নয়, দেশের সবাই চান৷ তাই আমাদের অবস্থান পরিস্কার- নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন যাবে না বিএনপি৷ আর বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে তাও করতে দেয়া হবে না৷''
এদিকে বিএনপির অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে ফিরতে চান তারেক রহমান৷ তাঁর বক্তব্যের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘তারেক রহমান একটা দুর্নীতিবাজ এটা দেশের সবাই জানেন৷ তার মতো একজন দুর্নীতিবাজ দেশে ফিরে এলে আবারো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের মানুষ যখন নির্বাচনমুখী তখন তারেক রহমান আন্দোলনের কথা বলে দেশকে একটা নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিতে চান৷ আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়িই হবে, তাতে কে এলো আর কে এলো না সেটা বড় কথা নয়৷ আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷''