হামলাকারী ছাত্রলীগ? নেতাদের অস্বীকার
৩০ জুন ২০১৮বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিক সম্মেলন করতে আমরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হচ্ছিলাম৷ বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর পিস্তল ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়৷ আমরা তাদের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি৷''
হামলায় সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন বলেও জানান রাশেদ খান৷ আহতদের মধ্যে যুগ্ম আহবায়ক নূরুল হক নূরের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷
রাশেদের অভিযোগ, সাড়ে ১২টার দিকে সূর্যসেন হল থেকে পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমানকে ছাত্রলীগের কয়েকজন তুলে নিয়ে গেছেন৷ তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷
তিনি বলেন, ‘‘মশিউরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে৷ এখন আমরা শুনছি, তাকে দিয়ে আমাদের অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী কিছু বলানোর চেষ্টা চলছে?''
তবে, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কে কার টাকা খেয়েছে, এসব নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল৷ কে পদে থাকবে, কে থাকবে না তা নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে৷ সেই বিরোধ থেকেই নিজেরা মারামারি করে ছাত্রলীগের উপর দায় চাপাচ্ছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই৷''
হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতাদের দেখা গেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বলেন, ‘‘যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারাই ছাত্রলীগ করে৷ ছাত্ররা তো ক্যাম্পাসে থাকবেই৷ অনেকে কৌতুহল নিয়েও আসতে পারে৷ এর মানে এই নয় যে, হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত৷''
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ব্যানারে কয়েক মাস ধরে আন্দোলনকরে আসছে একদল শিক্ষার্থী৷ তাদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও সরকারি প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা৷
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে উপস্থিত হন আন্দোলনকারীরা৷ এ সময় মুখোমুখি অবস্থান নেন ছাত্রলীগের কর্মীরা৷ একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান৷ পাঁচ-ছয়জনকে মারধর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান ও নূরুল হক নূর সেখানে ছিলেন৷ ওই সময় তাদের উপর হামলা হয়৷ এক পর্যায়ে হাসান আল মামুন ও ফারুক হাসান ওই স্থান থেকে সরে পড়েন৷
তবে হামলাকারীরা টার্গেট করেই নূরকে মাটিতে ফেলে পেটাতে থাকে৷ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হাসান আল মামুনকে গ্রন্থাগারের একটি কক্ষে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন৷ বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিম গিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে না নিয়ে পেছনের গেট দিয়ে তাকে নেয়া হয়৷
বেলা দেড়টার দিকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে৷ এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়৷ তবে মোটরসাইকেলটি কার, তা জানা যায়নি৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে৷ তারপরও আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি৷ আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি৷''
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনাব রব্বানী জানান, ‘‘এক গ্রুপ ছাত্র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পথ আটকে রেখেছিল৷ আরেক গ্রুপ ছাত্র সেটার প্রতিবাদ করায় সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে৷ ছাত্রদের লেখাপড়ায় যাতে বিঘ্ন না হয় সে কারণেই তো গ্রন্থাগার খুলে রাখা হয়েছে৷''
যারা গ্রন্থাগারের প্রবেশ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান প্রক্টর৷