‘হেট স্পিচের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সাবধান হতে হবে'
২৬ মার্চ ২০১৮ডয়চে ভেলে : বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা হেট স্পিচ আসলে কী?
তাহমিনা রহমান : বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে আইনি ভাষায় আমরা হেট স্পিচ বলে থাকি৷ এর ব্যাখা যদি আমি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলব, সব বক্তব্যই কিন্তু বিদ্বেষমূলক না৷ বিদ্বেষমূলক হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে৷ যেমন, কোন প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, কে বলেছে, তার উদ্দেশ্য কী ছিল - এমন ৬টি কনডিশন আছে, সেগুলো পূরণ না করলে বিদ্বেষমূলক বা উত্তেজনামূলক বক্তব্য বলা যাবে না৷
কেবল কি মেয়েদের লক্ষ্য করেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়?
অবশ্যই না৷ আপনি যদি আন্তর্জাতিকভাবে দেখেন বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও দেখেন, সেখানে কোনো গোষ্ঠীকে টার্গেট করে করা হয়, নারীদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অনলাইনে অনেক বক্তব্য রয়েছে৷ আমাদের কাছে এমন উদাহরণও আছে যে, অনেক নারী ব্লগারের লেখার প্রেক্ষিতে এমন সব বিদ্বেষমূলক জবাব এসেছে যে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে৷ আবার ধর্মীয় বিষয়েও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে৷ যেমন, হিন্দুদের অনেক সময় ‘মালাউন' বলা হয়৷ আবার যদি আন্তর্জাতিকভাবে দেখেন, মুসলমানদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সব মুসলমানই যেন জঙ্গি৷ টার্গেট করে এই যেসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, তাকেই আমরা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বলছি৷ এটা শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই এই প্রবণতা আমরা দেখছি৷
ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কি একটু ব্যাখা করবেন?
যে কোনো সমালোচনামূলক বক্তব্য কিন্তু বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না৷ সমালোচনা করতে গেলে অনেক বক্তব্যই আসবে, কিন্তু এগুলো সব বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না৷ এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে৷ কোন প্রেক্ষাপটে এটা বলা হচ্ছে বা কোনো ঘটনা যদি হয়, তাহলে ঘটনার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা কী, এসব বিষয় দেখতে হবে৷ তারপর বুঝতে হবে সেটা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কিনা৷
ইভ টিজিং কি এর মধ্যে পড়ে?
ইভ টিজিং এর মধ্যে পড়বে না৷ এটা একটা ক্রাইম৷ সারা বিশ্বেই এটাকে হয়রানি বলা হয়ে থাকে৷ এখন কোনো নারীকে হয়রানি করার জন্য না, নারীসমাজকে খাট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়, তাতে যদি দেখা যায় বিদ্বেষ রয়েছে, তাহলে সেটা হেট স্পিচ৷ কিন্তু ইভ টিজিং একজনকে টার্গেট করে করা হয়, সে কারণে এটাকে আমরা হেট স্পিচ বলতে পারব না৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের হার কেমন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর আলোচনা হয়ে থাকে৷ এটা এমন একটা মাধ্যম, যেখানে প্রচুর আলোচনা হয়৷ এটার উপকারিতা অসীম৷ তথ্যের প্রবাহকে দ্রুত থেকে দ্রুততর করে দিয়েছে৷ আলোচনাকে পাবলিক প্লাটফর্মে আনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে৷ এই মাধ্যম সকলেই ব্যবহার করছে৷ এটা নারীরা যেমন ব্যবহার করছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ব্যবহার করছেন৷ এখানে নানা আলোচনা হয়৷ সেটা সমালোচনামূলক হতে পারে, বিরক্তিকর হতে পারে, এখানে বিদ্বেষের উদ্রেক করে এমন আলোচনাও হচ্ছে৷ সর্বোপরি রাষ্ট্রের এখানে বিরাট ভুমিকা রয়েছে৷
আপনারা এটা প্রতিরোধে কী ধরনের কাজ করছেন?
আর্টিকেল-১৯ এটা প্রতিরোধে অনেক ধরনের কাজ করছে৷ জাতিসংঘের যে ৮টি গাইডলাইন আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা প্রচার করছি৷ এখানে আমরা আলোচনা ও প্রচারণার কাজটা করছি৷ আমরা কর্মশালা করছি৷ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কী সেটা আমরা জানানোর চেষ্টা করছি৷ নারীদের নিয়ে প্রযুক্তিতে যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আসছে, সেগুলো নিয়ে আমরা গবেষণা করেছি৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন কোন আইন নারীদের এক্ষেত্রে প্রোটেকশন দিতে পারে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি৷ এই আইনগুলো প্রচারে রাষ্ট্রের আর কী কী করা উচিত, সেগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি৷
এটা প্রতিরোধে সরকার কী ভূমিকা পালন করতে পারে? আর সরকার কি সেটা করছে?
আমাদের দেশে কিছু আইন রয়েছে যেগুলো ধর্মকে প্রটেক্ট করে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে বলা আছে, কোনো রাষ্ট্রে কোনো নির্দিষ্ট আইন ধর্মকে প্রটেক্ট করতে পারবে না৷ এখানে যেটা প্রটেক্ট করতে পারবে, সেটা হলো ধর্মের ভিত্তিতে যদি কোনো ব্যাখা দেয়া হয়, সেটা৷ ধর্ম, ইতিহাস, মূল্যবোধ এগুলো নিয়ে সব সময়ই আলোচনা হবে৷ আমি বলব, এসব আইন উত্তেজনামূলক বক্তব্যকে আরো বেশি প্রটেকশন দেয়৷ এই সব আইনের রিফর্ম প্রয়োজন রয়েছে৷ যখন হেট স্পিচ হয়ে থাকে, তখন রাষ্ট্র থেকেই শক্তভাবে একটা বক্তব্য দেয়া উচিত যে, এটা হেট স্পিস, এটাকে রাষ্ট্র কোনোভাবেই সমর্থন করে না৷ আমি মনে করি, এখানে রাষ্ট্রের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে৷
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শহরে না গ্রামে বেশি? কোনো হিসাব আছে?
এটা গ্রামে বেশি না, শহরে বেশি এর কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই৷ তবে গ্রামে বেশি এটা বলা যাবে না৷ আসলে সব জায়গাতেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে৷
সমাজের কোন শ্রেণির মেয়েরা বেশি বিদ্বেষের শিকার হন?
বাস্তবে নারীরা ব্যাপকভাবে এর শিকার হন৷ তবে আমি বলব, ইয়াং বয়সের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষের শিকার হন৷
রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সম্পর্কে কোনো কিছু বলবেন?
আমি বলব যে, যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের আরো বেশি সাবধান হতে হবে৷ তারা যখন বক্তব্য দেন, তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের কোনো বক্তব্য যেন নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মের মানুষকে আঘাত না করে৷ এটা কিন্তু সহিংসতার উদ্রেক ঘটাতে পারে৷
আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷