Obama 2015
৪ জানুয়ারি ২০১৫মার্কিন মুল্লুকে রাজনীতির ঘড়িটা আরো বেশি জোরে টিক-টিক করতে থাকে, যখন এক প্রেসিডেন্টের কর্মকাল – প্রথম কিংবা দ্বিতীয় – শেষ হতে চলে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কর্মকালও এবার শেষ হতে চলেছে৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নীতি নির্ধারণের শেষ সুযোগ হলো এই ২০১৫ সাল৷ এর পর উত্তরসূরির জন্য নির্বাচনি প্রচারেই তাঁর দিন কাটবে৷ সেই কারণে আগামী কয়েক মাসে ওবামাকে নানা জোরালো এবং একরোখা সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাবে, বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকে৷ কেননা শেষমেষ তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম ওঠাতে চান৷
প্রথমত তিনি এ যাবৎ যা করেছেন, তার সাফাই গাইবেন ওবামা – যেমন স্বাস্থ্য বীমার সংস্কার৷ রিপাবলিকানরা যদি এই সংস্কার পাল্টে দিতে চান, যেমন তারা হুমকি দিয়েছেন, তাহলে ওবামা নিঃসন্দেহে তাঁর ভেটো প্রয়োগ করবেন৷ ‘‘ওবামাকেয়ার''-এর মাধ্যমে এই প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর যে ছাপ রেখে গেছেন, তা আরো কয়েক বছর টিকবে বলেই ধরে নেওয়া যায়৷
দুর্ভাগ্যক্রমে, অভিবাসনের ক্ষেত্রে তিনি সেই ছাপ রাখতে পারেননি৷ এক কোটি দশ লক্ষের বেশি ‘‘বেআইনি অভিবাসীরা'' যাতে বৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারে, সে সংক্রান্ত যাবতীয় বিল আটকে দিচ্ছে রিপাবলিকানরা৷ ওবামা প্রেসিডেন্টের ডিক্রি ব্যবহার করে অন্তত কিছু বহিরাগতের বহিষ্কৃত হওয়া রুখে দিয়েছেন৷
নাগরিক হন আর নাই হন, মার্কিন মুলুকের সব মানুষই জোরালো প্রবৃদ্ধি থেকে উপকৃত হন৷ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আবার গতি পেয়েছে৷ নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে, বাড়ি-ঘরের দাম বাড়ছে৷ এই অর্থনৈতিক প্রেরণা মূলত খনিজ তেলের দাম কম হওয়ার ফলে৷ পরিস্থিতি ২০১৫ সালের জন্য সম্ভাবনাময়: শেয়ারবাজার চড়বে, ইউরোর বিনিময়ে ডলারের মূল্য বাড়বে৷ ফেডারাল রিজার্ভ সুদের হার বদল করার ঘোষণা দিয়েছে৷ ওবামা এই অর্থনৈতিক নিরাময় প্রক্রিয়ার জন্য সাধুবাদ পেতে পারেন৷
কিন্তু তিনি তার চাইতে বেশি চান৷ নেপথ্যে তিনি রিপাবলিকানদের সঙ্গে এশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে কথাবার্তা বলছেন৷ বাম-ঘেঁষা ডেমোক্র্যাটরা এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতারা একটি সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, প্রয়োজন পড়লে ওবামা তাদের অগ্রাহ্য করবেন৷ তিনি চান এ বছর চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তুলতে৷ যদি তা না পারেন, তাহলে তাঁর উত্তরসূরি ২০১৮ সালের আগে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে পারবেন না – অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরো তিনটি বছর অপচয় হবে৷
পররাষ্ট্রনীতির হোঁচট
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ওবামার ভাগ্য এ যাবৎ বিশেষ প্রসন্ন ছিল না৷ যে প্রেসিডেন্ট ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন – ইতিহাসে এই পরিচিতি রাখতে চেয়েছিলেন ওবামা, কিন্তু বাস্তবে দু'টি দেশেই যুদ্ধ চলেছে৷ তথাকথিত ‘‘ইসলামিক স্টেট''-এর অভ্যুত্থানের ফলে সিরিয়ার পরিস্থিতিও আগের চেয়ে জটিল হয়ে পড়েছে৷ ওবামা ঐ অঞ্চলের জন্য কোনো স্ট্র্যাটেজির খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু ২০১৫ সালেও সাফল্যের বিশেষ আশা আছে, বলে মনে হচ্ছে না৷
রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপরেও মস্কোর ক্রাইমিয়া দখলের ছায়া পড়েছে৷ মস্কো ক্রাইমিয়া ছাড়তে রাজি নয়, অপরদিকে ওয়াশিংটনের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ পূর্ব ইউরোপের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই, যে কারণে ওবামা ঐ কাজটা তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এর উপর ন্যস্ত করেছেন৷ বাইডেন প্রায়ই আবেগপ্রবণ এবং অ-পেশাদারী কথাবার্তা বলে ফেলেন৷ ইউক্রেনের বর্তমানে যা প্রয়োজন, তা হলো কোটি কোটি ডলার অর্থসাহায্য – ২০১৫ সালে যা পাবার আশা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে৷ দৃশ্যত কিয়েভ-এর বাজেটে যতো ফাঁকফোকর বেরোবে, ‘‘বাদবাকি ইউক্রেন'' সম্পর্কে অ্যামেরিকানদের আগ্রহ ঠিক সেই পরিমাণে কমবে৷ যা একটা ট্র্যাজেডি৷
ওবামা যে শুধু ইউক্রেনের মানুষদের মনে সুন্দরতর জীবনের স্বপ্ন সৃষ্টি করেছিলেন, শুধু তাই নয়, তিনি উত্তর আফ্রিকার মানুষদেরও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে অনেকদিন আগের কথা৷ সে'যাবৎ তিনি ভোল পাল্টে কায়রোর জেনারেলদের সঙ্গে আপোশ করেছেন – যে জন্য পশ্চিমি দুনিয়ায় অন্তত কেউ তাঁর সমালোচনা করবে না৷
ওবামা এখনও চীনের প্রতি মার্কিন নীতিতে সঠিক ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন৷ ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলাপ-আলোচনাতে তিনি ধৈর্য প্রদর্শন করছেন৷ এছাড়া তিনি কিউবার প্রতি মার্কিন নীতিতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধন করেছেন৷