অদম্য বাংলাদেশ-এর কী হবে?
২৪ অক্টোবর ২০১৫তাঁরা একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ স্কুলের নাম ‘মজার স্কুল'৷ সংবাদমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী স্কুলটিতে কিছু তরুণ নিজেদের হাত খরচের টাকা দিয়ে পথশিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু তাঁদের এ প্রয়াস অকস্মাৎ বাধার মুখে পড়ে৷ গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার বনশ্রীর একটি বাসায় ১০ জন শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ ওই শিশুদের উদ্ধারের সময় অদম্য বাংলাদেশ-এর চার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
অদম্য বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেছিলেন উদ্ধার হওয়া ১০ শিশুর একজনের চাচা৷ কিন্তু শিশুরা বলেছে, তাদের কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখেনি, কেউ অত্যাচার করেনি, বরং লেখাপড়া করিয়েছে, ভালোভাবে চলতে শেখানোর চেষ্টা করেছে৷
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অদম্য বাংলাদেশ-এর চার কর্মীকেই রিমান্ডে নেয় পুলিশ৷ সংগঠনটির বাকি কর্মীরা ‘সহযোদ্ধাদের' গ্রেপ্তার হতে দেখেও আত্মগোপন করেননি৷ তাঁদের কেউ কেউ বরং সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সরাসরিই বলেছেন, শিশু পাচারের কোনো উদ্দেশ্য তাঁদের ছিলনা, তাঁরা চেয়েছেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করতে৷ সেই উদ্দেশ্যেই রাজধানীর বুকে, কোনো রাখঢাক ছাড়াই শিশুকল্যাণের কাজটি করে যাচ্ছিলেন বলেও দাবি করেন তাঁরা৷
পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, অদম্য বাংলাদেশ-এর কাজে যে অসংগতিটি লক্ষ্য করা গেছে তা হলো, নিবন্ধন ছাড়া এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করা৷ অর্থাৎ সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো সনদ নেয়নি ‘অদম্য বাংলাদেশ'৷
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, নিয়ম অনুসরণে ভুল হলেই জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের গ্রেপ্তার এবং তারপর তড়িঘড়ি তাঁদের রিমান্ডে পাঠানো হলো কেন? চার জনকেই অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি তোলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ৷ লেখক বন্দনা কবীরের মতে এক্ষেত্রে পুলিশের আচরণটি ঠিক, ‘‘ভাত দেওয়ার মুরোদ নাই কিল দেওয়ার গোঁসাই''- এর মতো৷ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘চোর বাটপাররা গা ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর ভালো কাজের কাজিদের ধরে ধরে হাজতে পোরা হয়৷ কিম্ভূত সব নিয়মের নগর হয়ে যাচ্ছে দেশটা৷ অবিলম্বে এঁদের মুক্তি দেওয়া হোক৷''
পুলিশ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে নিজেদের মুখ রক্ষা করতেই এখন ‘নির্দোষ'দের আটকে রাখছে- এমনও মনে হয়েছে অনেকের৷ এই ধারণা থেকেই লেখা হয়েছে, ‘‘ভুল তথ্য নিয়ে কাজ করলে পুলিশ ভুল করতেই পারে৷ স্বীকার করতে দোষ কি?''
চার কর্মী কারাবন্দী হওয়ার পর এক সময় ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অদম্য বাংলাদেশ৷ পরে অবশ্য ‘উৎসবটি উৎসর্গ করা হচ্ছে ‘অদম্য বাংলাদেশ' এর চার স্বেচ্ছাসেবী আরিফ-জাকিয়া-হাসিব-শুভ র উদ্দেশ্যে' ঘোষণা দিয়ে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেয় তাঁরা৷
আরিফ, জাকিয়া, হাসিব ও শুভ-কে মুক্তি দেয়ার দাবি তারপরও তুলেছেন অনেকে, কিন্তু লাভ হয়নি৷ কয়েকদিন আগে তাঁদের মুক্তির উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এক সাংবাদিক৷ তারপরই আসে আটক চার স্বেচ্ছাসেবীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার খবর৷
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নামে উচ্ছ্বাসের ঢল৷ একজন লিখেছেন, ‘‘অদম্য বাংলাদেশ মানে আসলেই অদম্য৷ শুভ মুক্তি! খুশি বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না!''
অদম্য বাংলাদেশ-এর কর্মীদের কেউ কেউ খুশির কান্না কাঁদতে কাঁদতে লিখেছেন, ‘‘আজ কেঁদেছি খুশির কান্না৷ আমরা বাহিরে ছিলাম ঠিকই তবে মন ছিল কারাগারে৷ আজ আমরা মুক্ত৷ আমরাই অদম্য, আমরাই বাংলাদেশ৷''
অদম্য বাংলাদেশ-এর কর্মীরা জামিনে মুক্ত, ‘অভিযোগ' থেকে এখনো মুক্তি দেয়া হয়নি৷ তাই প্রশ্নটা থেকেই যায়- কী হবে ‘অদম্য বাংলাদেশ'-এর?
এসিবি/জেডএইচ