অধ্যাপক হত্যার ঘটনায় সরব ফেসবুক, টুইটার
১৭ নভেম্বর ২০১৪ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আরো ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ৷ এছাড়া হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় পুলিশ কমিশনার ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমানকে বদলি করেছে সরকার৷ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিহাস এলাকায় শনিবার বিকালে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনকে, যিনি বাউল সাধক লালন ভক্ত ছিলেন৷
বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ঢাকা ট্রিবিউন শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভের খবরটি প্রকাশ করেছেন টুইটারে৷
এছাড়া আল-জাজিরাও বেশ বড় করে সংবাদটি প্রচার করেছে৷
বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিবেদনে আরো লেখা হয়েছে, ঘটনার রাতে ফেসবুকে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে একটি পৃষ্ঠায় এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করা একটি পোস্টও আসে৷ তবে ওই নামে আদৌ কোনো সংগঠন বাংলাদেশে সক্রিয় কিনা, না কি তদন্তকারীদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে ফেসবুকে ওই পোস্ট দেওয়া হয়েছে- সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়৷
ফেসবুক পাতায় আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ লিখেছে, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে গলাকেটে হত্যা করা হয় ব্লগার রাজিব হায়দারকে৷ এর আগে উত্তরায় অপর ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকেও একইভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ চলতি বছরের ২৪ জুন কুপিয়ে এবং গুলি করে আহত করা হয় গণজাগরণ কর্মী রাকিব আল মামুনকে৷ এরা দুজন এখনও আছে তালিকায়৷ ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এবং রাকিব মামুনকে ‘প্রথম হত্যাচেষ্টা' সমাপ্ত হলেও দ্বিতীয় হত্যাচেষ্টা আসছে বলে ফেসবুকে জানিয়েছে তারা৷
ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন এই হুমকি প্রসঙ্গে নিজের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন,‘‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে কিছু পাতা খোলা হয়েছে৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার অভিমত হচ্ছে, পাতাগুলো ভুয়া এবং কেউ কেউ নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের জন্য পাতাগুলো পরিচালনা করছে৷ যারা দাবি করছেন তারা মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার অথচ ব্যাপারটা হয়তো তা নয়৷ যারা এই ধরণের কাজ করছেন, অনুগ্রহ করে একটু দায়িত্বশীল আচরণ করুন৷ দেশে অনেক মুক্তচিন্তার মানুষ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ জামাত শিবির, হেফাজত আনসারুল্লাহদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন৷''
ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাতেও রাবি অধ্যাপকের হত্যাকাণ্ডের খবরটি বেশ বড় করে ছাপা হয়েছে৷ সেখানে লেখা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ঠিক বাইরে দিনেদুপুরে দুষ্কৃতিরা কুপিয়ে খুন করলো এক জনপ্রিয় অধ্যাপককে৷ একেএম শফিউল ইসলাম (৪৮) নামে সমাজবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক তাঁর অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা ও জীবনধারণের জন্য পরিচিত ছিলেন৷ ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ' নামে একটি মৌলবাদী-জঙ্গি সংগঠন তাদের ফেসবুক পেজ-এ হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, ‘‘এই অধ্যাপক বোরখা না-পরে ক্লাসে আসার জন্য মেয়েদের প্ররোচিত করাতেই তাঁকে খতম করা হলো৷''
বন্দনা কবীর এ প্রসঙ্গে ফেসবুক পাতায় লিখেছেন,‘‘বোরখা পরে ক্লাসে না আসতে বলার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে কুপিয়ে খুন করেছে ইসলামের ধ্বজাধারীরা! আবার সেই খুনের দায় স্বীকার করেছে ফেসবুকে পেজ খুলে! এ ব্যাপারটা কিন্তু এলার্মিং৷ ভয়ানক এলার্মিং৷ এদের বিরুদ্ধে এখনই যদি শক্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এইরকম ঘটনা পুনঃ পুনঃ ঘটবে৷ দিন দিন ধর্মটা উন্মাদনায় রূপ নিচ্ছে৷ অবশ্য যে দেশে একটি ধর্মের নেতার নামে কটূক্তি করলেই জেল হাজত হয় সেই দেশে এই ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিকও নয়৷''
বন্দনা কবীর লিখেছেন, ‘‘মাদ্রাসায় যেমন শার্ট-প্যান্ট পরে কেউ যেতে পারে না, তেমনি আমাদের স্বাভাবিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও কেউ বোরখা পরে আসতে পারবেনা৷ নতুবা প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পোশাক নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক এবং প্রতিটি ছাত্র/ছাত্রীদের সেটা পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হোক৷ কথাগুলো হাস্যকর শোনালেও এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না এসব ধর্মবিষয়ে উন্মাদদের থেকে রক্ষা পাওয়ার৷''
বার্লিন থেকে পিডার্প টুইটারে লিখেছেন, ‘‘প্রিয় ইসলামপন্থি, একজন মানুষকে গলা কেটে হত্যা করলেই নাস্তিকদের নির্মূল করা যাবে এমন মনোভাব হলে তুমি কখনো ভালো মানুষ নও৷''
দীপ্ত বাবু লিখেছেন, ‘‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপককে হত্যা সন্দেহে ১৫ জন আটক৷'' এছাড়া দৈনিক সমকালের একটি খবর শেয়ার করেছেন তিনি৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: জাহিদুল হক