জার্মানির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
২৩ ডিসেম্বর ২০১২প্রকল্পের নাম ‘ডয়চে ডিগিটালে বিবলিওটেক' বা ডিডিবি৷ যার মানে দাঁড়ায় ‘জার্মান ডিজিটাল লাইব্রেরি'৷ নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা অনলাইন সংক্রান্ত৷ ঘটনা হলো, জার্মানির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে তৈরি হচ্ছে এই ডিজিটাল লাইব্রেরি৷ ফলে ঘরে বসে যে কেউ জেনে নিতে পারবেন জার্মানির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের খবর৷
প্রকল্পটা এখনো পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে৷ কেউ যদি এখনই এই লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে যান, তাহলে তিনি প্রায় ১৮০০টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাবেন৷ তবে এই সাইটটি পরিপূর্ণ করতে প্রায় ৩০ হাজার সংস্থার তথ্য অন্তর্ভুক্তের পরিকল্পনা রয়েছে৷
জার্মান ডিজিটাল লাইব্রেরির ধারণাটা এসেছে ‘ইউরোপিয়ানা' থেকে৷ চার বছর আগে এটা চালু হয়৷ সেখানে রয়েছে সারা ইউরোপের বই, পেইন্টিংস, ফিল্ম আর জাদুঘরের প্রদর্শিত বিষয়৷ ফলে শুধুমাত্র ক্লিক করে করেই ইউরোপের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন সম্ভব হচ্ছে৷ এই ইউরোপিয়ানা সাইটে জার্মানির প্রতিনিধি হবে ডিডিবি৷
ইউরোপিয়ানা শুধু ইউরোপের ঐতিহ্যের কথা বললেও গুগল কালচারাল ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে বিশ শতকে পুরো বিশ্বের ইতিহাস সম্বলিত তথ্য৷ এই সাইটে গিয়ে সার্চ অংশে ‘বাংলাদেশ' লিখে খোঁজা শুরু করলে পাওয়া যাবে দুটি জিনিস৷ প্রথমটা হচ্ছে, বিখ্যাত ‘টাইম' ম্যাগাজিনের ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বরের কাভার পাতাটি৷ সেখানে লিখা আছে ‘দ্য ব্লাডি বার্থ অফ বাংলাদেশ'৷ আর অন্যটি ১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত কনসার্টের ছবি৷
জার্মান সরকার তিন বছর আগে ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়৷ তখন থেকেই কাজ চলছে৷ প্রকল্পের এক কর্মকর্তা হেয়ারমান পারৎসিঙ্গার বলছেন, ‘‘জার্মানির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সবার জন্য৷ সেজন্য আমরা চাই সব কিছু সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে৷ এমনকি গোপন সম্পদও৷''
ভার্চুয়াল মিউজিয়াম ট্যুর আর বিভিন্ন স্থাপত্যের ত্রিমাত্রিক প্রদর্শনী দেখা যাবে এই সাইটে৷ ‘‘তবে জাদুঘরে যাবার যে অভিজ্ঞতা সেটা অন্যরকম, তার কোনো বিকল্প নেই,'' বলেন পারৎসিঙ্গার৷
জাদুঘরে সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় না এমন জিনিস, যেমন ছেঁড়া বই, পাণ্ডুলিপি এবং সংবেদনশীল বিভিন্ন বস্তু ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাবে ডিজিটাল লাইব্রেরিতে৷ আর এসব দেখার জন্য থাকবে ম্যাগনিফাইয়িং বা বিবর্ধিত গ্লাস, যা দিয়ে খুব কাছ থেকে সবকিছু দেখা যাবে৷
প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত আরেক ব্যক্তি জার্মান রাজ্য ট্যুরিঙ্গেনের শিক্ষামন্ত্রী এলকে হারতেজ-একার বলছেন, এই ডিজিটাল লাইব্রেরিতে যেসব তথ্য দেয়া হচ্ছে সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত৷
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে অনলাইনে সব কিছু দিয়ে দেয়ার ফলে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন হবে কিনা৷ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দাবি, সেটা হবে না৷
তাঁরা বলছেন, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের লেখক, ই-লার্নিং প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা, এমনকি কম্পিউটার গেমস নির্মাতারা এই ডিজিটাল লাইব্রেরি থেকে তথ্য নিতে পারবেন৷ তবে এর জন্য টাকা দিতে হবে৷ অবশ্য এমন কিছু তথ্য থাকবে যেগুলো টাকা দিলেও কেউ অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানা গেছে৷
ডিডাব্লিউ'র পক্ষ থেকে জার্মান ডিজিটাল লাইব্রেরির পরীক্ষামূলক সাইটে গিয়ে বেশ কিছু খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এ সময় কিছু বিষয়ে ভালো তথ্য পাওয়া গেলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা গেছে৷ এ বিষয়ে পারৎসিঙ্গার বলছেন, ‘‘সাইটের কাজ এখনো চলছে৷ পুরোপুরি তৈরি হতে আরও কয়েক বছর লাগবে৷''