1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনার কিলিং বা পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যা বাড়ছে ভারতে

৮ মে ২০১১

প্রতি বছর ঠিক কতজন মেয়ে বা মহিলাকে এভাবে জীবন দিতে হয় তার সঠিক কোন তথ্য নেই৷ সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু আদালত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে এই ‘অনার কিলিং’ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে৷

https://p.dw.com/p/11BXn
ছবি: DW

গত মাসে ভারতের বেশ কিছু আদালত সরকারের কাছে সরাসরি আবেদন জানিয়েছে ‘অনার কিলিং' বা পরিবারের সম্মান রক্ষার ওজর তুলে মেয়েদের যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তা বন্ধ করতে৷ ভারতে ইদানিং যা দেখা গেছে তা হল বর্ণাশ্রম না মেনে নিজের জাতের বাইরে কেউ যদি বিয়ে করে তাহলে - পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে এমনটি ধরে নেয়া হয়৷ তখন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লাগে৷ যেভাবেই হোক পরিবারের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং তা করা যাবে যদি মেয়েটিকে হত্যা করা হয়৷ এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে বাবা-ভাই, আত্মীয় স্বজনরা পর্যন্ত থাকে৷ কিন্তু অত্যন্ত আদরের কন্যা বা বোনকে হত্যার পর পরিবারের সম্মান কি আদৌ ফিরে এসেছে?

এসব ‘অনার কিলিং'-এর ঘটনা মূলত গ্রামে দেখা যায় বেশি৷ সেখানে পঞ্চায়েত বা গ্রাম্য আদালত বেশির ভাগ সময়ে শাস্তির বিধান দেয়৷ তাদের কাছে জাতপাতের বিষয়টা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ৷ তারাই এসব ‘অনার কিলিং'--এ গ্রামের সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করে৷

Frauen SHG Majhdalih
অনেক নারীই বর্ণ প্রথার শিকার হনছবি: DW

পুরনো দিনের মানসিকতা এখনো টিকে রয়েছে

কলকাতায় হাইকোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি জানালেন,‘‘এই অনার কিলিং-এর পেছনে যে মানসিকতা কাজ করে তা হল পুরনো দিনের সেই মানসিকতা৷ আমার জাতের বা গোত্রের বাইরে বিয়ে করলে অথবা যদি বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি বিয়ে করি তখন আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়৷ পরিবারের সদস্যরা তখন গর্ববোধ করে যে যারা পরিবারের বিরোধীতা করেছে তাদের মেরে ফেলা উচিৎ৷ শুধু যে বিয়ে করেছে তাকে মেরে ফেলা নয় যাকে বিয়ে করা হয়েছে তাকেও মেরে ফেলা হয়৷ এটা বহু বছর ধরে চলে আসছে৷ ইদানিং আগের চেয়ে হয়তো কমেছে কিন্তু আমার মনে হয় শেষবার এক হাজার বা দেড় হাজার অনার কিলিং-এর ঘটনা আমি শুনেছি৷ আর এ ধরণের ঘটনা সবচেয়ে দেখা যায় পাঞ্জাবে৷ তবে হরিয়ানাতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ চণ্ডিগড়েও দেখা যায় অনার কিলিং-এর ঘটনা৷ এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে দিল্লী আর কেরালাতেও এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে৷''

গতমাসে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারক মারকান্দেয়া কাটজু এবং জ্ঞানশুধা মিশ্র এই ‘অনার কিলিং'-এর তীব্র সমালেচনা করেন৷ তারা বলেন, ‘‘কোন মানুষকে হত্যা করা কোন অবস্থাতেই সম্মানজনক হতে পারে না৷ এটা অমানবিক এবং পাশবিক একটি ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়৷ গ্রাম্য পঞ্চায়েত ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রের মানুষের মধ্যে বিয়ে কোন অবস্থাতেই সমর্থন করেন না৷ এসব পঞ্চায়েতের লোকরা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করছে৷ কার কী পছন্দ তাতে পঞ্চায়েত সবসময়ই মাথা ঘামাচ্ছে৷'' বেশ জোর দিয়েই দুই বিচারক বলেন, ‘‘আমরা মনে করি ‘অনার কিলিং'-এর মত পাশবিক এই প্রথাকে নির্মূল করা উচিৎ৷''

পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশে অনার কিলিং-এর ঘটনা বেশি ঘটে

ভারতে প্রতি বছর ঠিক কত মেয়ে অনার কিলিং-এর শিকার হয় তার কোন সঠিক হিসাব নেই৷ তবে ধরে নেয়া হয় যে প্রায় ৯০০ মেয়ে প্রতি বছর এর শিকার৷ যে সব প্রদেশে এসব ঘটনা ঘটে তার মধ্যে হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশ উল্লেখযোগ্য৷

এছাড়া অনেক ‘অনার কিলিং'-এর কাহিনী গোপন থাকে৷ পুলিশের কাছে পর্যন্ত তা নিয়ে কোন রিপোর্ট করা হয়না৷ অনেক সময় পুলিশ নিজেও না দেখা বা না জানার অভিনয় করে৷ কারণ তাদের মধ্যেও এমন অনেকে আছে যারা বিশ্বাস করে যে ‘অনার কিলিং'-এর প্রয়োজন রয়েছে৷ যেসব পুলিশ ‘অনার কিলিং' মত ঘটনা ঘটছে দেখেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যদি গ্রহণ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ওপর জোর দেন দুই ভারতীয় বিচারপতি৷

অনার কিলিং বন্ধ করতে খসড়া বিল প্রস্তাব করা হয়েছে

গত বছরের অগাস্ট মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি. চিদাম্বরম জানান, সংসদে তিনি অনার কিলিং প্রতিরোধ করতে একটি খসড়া বিলের প্রস্তাব করবেন৷

সেই খসড়া প্রস্তাব সম্পর্কে আইনজীবী সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি ভীষণভাবে আশাবদী৷ তিনি বললেন,‘‘ভারত সরকার একটা বিল প্রস্তাব করার চেষ্টা করছে৷ অনার কিলিং-কে ভারতীয় পিনাল কোড অন্তর্ভুক্ত করবে৷ মার্ডারের যে সংজ্ঞা রয়েছে সেখানে অনার কলিং-কে যুক্ত করা হবে৷ সেটা করলে এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হবে৷ প্রায় ১৮টি রাজ্যে এই প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে৷ ১৫টি রাজ্য এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছে৷ দুটি রাজ্য কিছু জানায়নি আর হরিয়ানা রাজ্য এর বিরোধীতা করেছে৷ তারা বলছে এর কোন প্রয়োজন নেই৷ দেশের প্রচলিত আইন দিয়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব৷ তবে এই বিল এখনো পাশ হয়নি, আশা করছি বিলটি পাশ হয়ে যাবে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য