অন্য এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পথশিশুরা
৫ মে ২০১৯চার মেয়ে ও চার ছেলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ দল গঠন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে আছে সানিয়া ও রাসেল৷ দু'জনেরই বয়স ১৫ এবং তাদের গল্পও প্রায় একইরকম৷ গৃহকর্ত্রীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ না চেনায় কিছুদিন পথেই বাস করতে হয়েছে সানিয়া মির্জাকে৷ পরে ‘লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন' বা লিডো নামের এক সংগঠন তাকে আশ্রয় দেয়৷ সংগঠনটি পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে৷
অভাবের কারণে সানিয়ার বাবা মেয়েকে কাজ করতে শহরে এক দম্পতির কাছে পাঠিয়েছিলেন৷ কিছুদিন সেখানে ভালোই ছিল সানিয়া৷ কিন্তু ঐ দম্পতির প্রথম সন্তান জন্ম নেয়ার পর সানিয়ার উপর অত্যাচার শুরু করেন তারা৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সানিয়া সেখান থেকে পালিয়ে ট্রেন ধরে কমলাপুর চলে যায়৷ তারপর সে বাবার কাছে ফিরতে গিয়ে বুঝতে পারে যে, সে বাড়ির পথ চেনে না৷ এরপর থেকেই সানিয়ার আশ্রয়স্থল লিডো৷
সানিয়ার সহখেলোয়াড় রাসেলের মা ছেলেকে ভাইয়ের কাছে রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ রাসেলের বাবা তার জন্মের আগেই মারা গেছেন৷ এই অবস্থায় মামা-মামি তাকে অত্যাচার করলে সেখান থেকে সেও পালিয়ে যায়৷ পরে তারও আশ্রয় হয় লিডো-র আশ্রয়কেন্দ্রে৷
এই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মোট আটজন শিশুই পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে৷
বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত সানিয়া ও রাসেল৷ সানিয়া বলছে, ‘‘এটা স্বপ্নপূরণের মতো৷ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি বিশ্বকাপ খেলবো৷''
রাসেল বলছে, ‘‘আমি এমন জায়গায় ক্রিকেট খেলবো যেখানে খেলাটার জন্ম হয়েছে৷ আমি লর্ডসে খেলবো৷ আমার মনে হয় না, অনেক মানুষ এমনটা বলতে পারবে৷''
উদ্দেশ্য
লন্ডনভিত্তিক দাতব্যসংস্থা ‘স্ট্রিট চাইল্ড ইউনাইটেড' প্রথমবারের মতো পথশিশুদের জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে৷ এর আগে অবশ্য তারা চারবার পথশিশুদের জন্য ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল৷
পথশিশুদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ পথশিশুদের পাচার ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানান বিশ্লেষকরা৷
জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে পথশিশুদের সংখ্যা দেড়শ মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে৷ এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় সাত লক্ষ৷ এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বাস ঢাকাতে৷
মঙ্গলবার লর্ডসে প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে৷
জেডএইচ/ডিজি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)