বর্ণবাদ বিরোধী একটি উদ্যোগ
১২ জুলাই ২০১৩মিউজিয়ামের রঙিন বাক্সগুলি বাচ্চাদের আকৃষ্ট করে৷ ভেতরে এক ঝলক দৃষ্টি দিলেই দেখতে পায় তারা ওগুলিতে কী আছে৷ যেমন একটি বাক্সে রয়েছে বস্কিং-এর গ্লাভস৷ বক্সার মানফ্রেড ইওয়াখিমের গ্লাভস ওটা৷ যিনি একজন ইহুদি৷ নাৎসিদের নির্দেশ বার বার অমান্য করেও হলোকাস্ট থেকে রক্ষা পেয়েছেন সাহসী এই ব্যক্তি৷
ইহুদিদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে থাকে নানা তথ্য
অন্যান্য বাক্সেও ইহুদিদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে নানা সামগ্রী ও তথ্য রয়েছে৷ যেমন তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি, খাবারের অভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে৷ ‘‘শুধু জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ও হলোকাস্ট সম্পর্কিত বিষয়গুলিই নয়, আজকের জার্মানিতে ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছে, সেটাও আমরা দেখাতে চাই'', বলেন কর্নেলিয়া লিসে৷ মোবাইল মিউজিয়ামটির ১২ সদস্যের টিমের একজন তিনি৷
বড় প্রকল্পের অংশ হিসাবে কাজ করছে মিউজিয়ামটি
এই বছর একটি বড় প্রকল্পের অংশ হিসাবে কাজ করছে মিউজিয়ামটি৷ যার শিরোনাম ‘সচল ইতিহাস'৷ জার্মানিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের ক্ষমতা দখলের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বার্লিনের বর্ণবাদ বিরোধী আটটি ইন্সটিটিউশন একসঙ্গে মিলে এই প্রকল্পটি গড়ে তুলেছে৷ তারা একটি শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যাতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নাৎসি আমলের বিভিন্ন বিষয় ও তাদের রাজনীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটা ধারণা করতে পারে৷ গণতন্ত্র ও সহিষ্ণুতা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি খুলে যায়৷
এর মধ্যে রয়েছে বার্লিনের একটি সমিতি, নাম – ‘শো ইওর ফেস ফর এ কস্মোপলিটান জার্মানি'৷ এই সমিতি প্রকল্পটির সমন্বয়কারী হিসাবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন ভাষায় গাইডেড ট্যুরের আয়োজন করছে৷ এর মধ্যে রয়েছে হিব্রু ভাষাও৷ বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এই আয়োজনটি জনপ্রিয়৷
বিভিন্ন জায়গায় কার্যক্রম চালায় নেট ওয়ার্কটি
‘সচল ইতিহাস' নেটওয়ার্কটি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তাদের কার্যক্রম চালায়৷ শুধু প্রদর্শনী, মিউজিয়াম বা স্মৃতিসৌধ দেখতে যাওয়ার মধ্যেই তাদের কর্মসূচি আবদ্ধ নেই৷ প্রকল্পের এক কর্মী ভেরেনা ডেভেনটার বলেন, ‘‘কোনো শিক্ষক মবিং নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে আমরা বিষয়টির গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি৷ যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বার্লিনের এমন একটি এলাকায় ঘুরতে যাই, যেখানে স্বাভাবিক ভাবেই নানা ধরনের সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসা যায়৷ এইভাবে অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণাটা দূর করা যায়৷''
নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়
ভ্রাম্যমান ইহুদি মিউজিয়ামটিও ছেলে-মেয়েদের নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়৷ ইহুদি ছেলে-মেয়েদের ভয়-ভীতি নিয়ে তোলা ভিডিও ছবি দেখানো হয় তাদের৷ ‘‘একটি ছবিতে ড্রেসডেনের এক ইহুদি মেয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে৷ শহরের বিশেষ একটি অঞ্চল এড়িয়ে চলে সে৷ কেননা সেখানে চরম ডানপন্থিদের আনাগোনো বেশি'', বলেন কর্নেলিয়া লিসে৷ তবে বর্ণবাদ বিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর থেকে মেয়েটির সাহস বেড়ে গেছে৷ এই ধরনের ঘটনা ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দীপিত করে, নিজেদের আচার আচরণ নিয়ে ভাবতে শেখায়৷
সাধারণত ইতিহাসের ক্লাসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের সময়কার ঘটনাগুলি শুধু বর্ণনা করা হয়৷ কিন্তু বর্ণবাদ বিরোধ প্রকল্পটিতে ঐতিহাসিক বিষয়ের সাথে ছাত্রছাত্রীদের সম্পৃক্ত করা হয়৷ বৈষম্য, বর্জন ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে প্রণোদিত করা হয়৷ যাতে তারা নিজেরাই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়৷
সর্বক্ষেত্রে সাহস
‘‘একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় থেকেও যে সাহস দেখানো যায়৷ আজকের সমাজেও যে এই সাহসের প্রয়োজন রয়েছে, সেটা আমরা ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করি'', বলেন ভেরেনা ডেভেনটার৷ যেমন বক্সার মানফ্রেড ইওয়াখিমের কথা বলি আমরা৷ অল্পবয়সে জ্যাকেট থেকে ইহুদিদের তারকা চিহ্ন খুলে ফেলেছিলেন তিনি৷ বৃদ্ধ বয়সে ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ইহুদি মিউজিয়ামের জন্য কাজ করেছেন৷ ক্লান্তিহীন ভাবে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলে গেছেন অল্পবয়সিদের কাছে৷