অন্যরকম বাংলাদেশের গল্প!
কে বলে মানুষ শুধু নিজের কথাই ভাবে! বাংলাদেশে এখনও এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের জীবনের বড় সময়টাই কাটিয়ে দিচ্ছেন সমষ্টির জন্যে৷ এমনই কিছু উদ্যোগের গল্প থাকছে ছবিঘরে৷
পক্ষাগাতগ্রস্থদের ভরসা
১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে আসেন ব্রিটিশ সাইকোথেরাপিস্ট ভ্যালেরি টেইলর৷ ১৯৭৯ সালে স্থানীয় একটি দল নিয়ে গড়ে তোলেন সেন্টার ফর দ্য রিহেবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড৷ পক্ষাগাতগ্রস্তদের চিকিৎসায় সিআরপি এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে আস্থার নাম৷ যার পরিচিতি ছাড়িয়ে গেছে দেশের গণ্ডি৷ চিকিৎসা, থেরাপি, পুনর্বাসন, পক্ষাগাতগ্রস্থদের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি ছাড়াও সিআরপির রয়েছে ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ, স্কুল৷
এক টাকায় আহার
সবার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন কিশোর কুমার দাশ৷ ২০১৬ সালে তারা চালু করে এক টাকার আহার৷ প্রকল্পটির আওতায় দরিদ্র শিশু ও বৃদ্ধরা এক টাকায় পেট ভরে খেতে পান৷ প্রায় দুই হাজার পথশিশুকে তারা প্রতিদিন খাবার দেন৷ এই খাবারের খরচ দিতে পারেন যে কেউ৷ এজন্য যেতে হবে তাদের ওয়েবসাইটে৷
পোস্টার থেকে স্কুলব্যাগ
১৩টি শাখায় দুই হাজার পথশিশুকে পড়াশোনার সুযোগও করে দিয়েছে বিদ্যানন্দ৷ আছে নারীদের জন্য বাসন্তি প্রকল্প৷ ৪০ একর জায়গার উপরে তাদের আছে ছয়টি এতিমখানা৷ সেখানে ৪০০ শিশু থাকছে৷ সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পোস্টার দিয়ে শিশুদের জন্য তারা ব্যাগ তৈরি করেছে৷ এসব উদ্যোগের পাশাপাশি এবারের বইমেলায় তারা আলোচনায় এসেছে পুরনো মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ওষুধের বিনিময়ে নতুন বই দিয়ে।
প্রবীণদের আশ্রয়
শেষ বয়সে এসে অনেক প্রবীণই হয়ে যান একা৷ অনেকের দায়িত্ব নিতে চান না সন্তানেরা৷ তাদের জন্য ভরসা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার৷ ২০১৫ সালে যা গড়ে তোলেন মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিঠু হালদার৷ মিরপুরে নিজের ভাড়া করা দুটি বাড়িতে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন বৃদ্ধকে সেবা দিয়েছেন তারা৷ ৭৫ জনের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন৷
ইশকুল যখন মজার
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করে মজার ইশকুল৷ ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগে ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়৷ পরে তাদের স্কুল কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়৷ ২০১৮ সালে শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি খাবার কর্মসূচীও চালু করে তারা৷ বর্তমানে তাদের চারটি খোলা আকাশের নীচে, চারটি স্থায়ীসহ মোট আটটি স্কুল রয়েছে৷ আছে ১৫০০-র বেশি শিক্ষার্থী৷
প্রতি গ্রামে পাঠাগার
‘প্রতি গ্রামে হোক একটি পাঠাগার,’ এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন৷ ২০০৬ সালে সাত তরুণ শুরু করেন এই উদ্যোগ৷ টাঙ্গাইলে ভূঞাপুরে তারা গড়ে তোলেন অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগার৷ এরপর একে একে ৫৮টি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ এখানেই শেষ নয়৷ পাঠাগারের উদ্যোক্তা আর সদস্যদের নিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক বিভিন্ন কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷
পাঠাগার থেকে বিদ্যালয়
পাঠাগারের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য স্কুল কলেজ গড়ে তুলছেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্মীরা৷ সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে ভূঞাপুর যমুনার কোল ঘেঁষা একটি গ্রামে গড়ে তুলেছেন হাজী ইসমাইল খাঁ কলেজ ও বঙ্গবন্ধু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ রংপুরের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্যামল-মঙ্গল-রমেশ স্মৃতি বিদ্যা নিকেতন৷
অসহায়দের বন্ধু শওকত
যেসব মানুষের ধারে-কাছে কেউ ঘেঁষেন না, যারা ক্ষত হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে রাস্তায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুণেন, তাদের ত্রানকর্তা পুলিশ কনস্টেবল মুহাম্মদ শওকত হোসেন৷ বছরের পর বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন৷ পরম আদরে মানুষগুলোকে তিনি রাস্তা থেকে তুলে আনেন৷ তাদের সেবা-যত্ন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ প্রতি মাসের বেতন, কিংবা উৎসব ভাতা নিজের জন্য নয়, খরচ করেন তিনি এই মানুষদের পেছনেই৷
মানুষ প্রাণীদের জন্যেও
আহত প্রাণীদের সহায়তা, প্রাণী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার বা ‘প’ ফাউন্ডেশন৷ সংগঠনটির ফেসবুকে পেইজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তারা প্রাণীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলে৷ অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসাসহ মানুষের মধ্যে পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন তাদের কার্যক্রম রয়েছে৷ (প্রতীকী ছবি)