অপেরা শিল্পী ভাগনার
২ সেপ্টেম্বর ২০১৩পুরো নাম: ভিলহেল্ম রিশার্ড ভাগনার
জন্ম: ২২শে মে, ১৮১৩, লাইপসিশ, জার্মানি
মৃত্যু: ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৩, ভেনিস, ইটালি
সমাধি: বায়রয়েট, জার্মানি
পেশা: গীতিকার, সুরকার ও সংগীত নির্দেশক
বাবা: কার্ল ফ্রিডরিশ ভাগনার
মা: ইয়োহানা রোজিনে
স্ত্রী: মিনা প্লানের
সন্তান: সিগফ্রিড, এভা, ইসোল্ডে
উল্লেখযোগ্য কর্ম: লোয়েনগ্রিন, ডেয়ার রিং ডেস নিবেলুঙ্গেন, পার্সিফাল
জার্মান সুরসৃষ্টা ভাগনার অপেরায় সনাতন রোমান্টিক সংগীতের ভাব প্রকাশ এবং তার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ভিত্তিতে এনেছিলেন পরিবর্তন৷ তাঁর অপেরা, কাব্যিক, দৃষ্টিলব্ধ, সংগীত এবং নাটকীয় দৃশ্যসম্বলিত সৃষ্টি৷ ‘সার্বিক শিল্প কর্ম'-এর এই ধারণা নিয়েই তিনি অপেরার জগতে এনেছিলেন এক বিপ্লব৷ ভাগনার ছিলেন গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, কবি, লেখক, থিয়েটার ও সংগীত নির্দেশক৷ পাশ্চাত্যের অপেরা সংগীত জগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব৷ সেই সাথে নিজের ইহুদি-বিরোধী মনোভাবের জন্যও বিতর্কিত হয়েছেন তিনি৷ এ বছর জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে তাঁর ২০০তম জন্মবার্ষিকী৷
লাইপসিশ শহরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম রিশার্ড ভাগনারের৷ ছোটবেলা থেকে লেখার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর৷ ১১ বছর বয়সে রচনা করেন প্রথম নাটক৷ সংগীত রচনার প্রতি তাঁর আগ্রহ জাগে এর কিছুকাল পর৷ ১৮৩১ সালে লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে পড়াশুনা শুরু করেন ভাগনার৷ ১৯৩৩ সালে ভুরৎসবুর্গে বৃন্দ-সংগীত পরিচালক হিসেবে শুরু হয় তাঁর সংগীত জীবন৷
প্রথম দিকের সংগীতকর্মে জার্মান রোমান্টিকের প্রভাব পড়েছে৷ লুডভিশ ফান বেটোফেন ছিলেন তাঁর আদর্শ৷ কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর সংগীত স্পষ্ট স্বকীয়তায় স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে৷ রাশিয়া, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে তিনি কাটিয়েছেন বহু বছর৷ তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন কিছুকাল৷ কিন্তু তা তাঁর সংগীত সৃষ্টিতে বাধা হয়ে ওঠেনি৷ রচনা করেছেন বহু অসাধারণ অপেরা৷ বহু চড়াই-উতরাই ও রাজনৈতিক বিপত্তির পর অবশেষে জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে থিতু হন তিনি৷
ভাগনার মহানগরীর কোলাহলের বাইরে সবুজে ঘেরা প্রকৃতির কোলে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন নিজস্ব এক থিয়েটার-ভবন, যেখানে পরিবেশিত হবে শুধু অপেরা – তাঁর নিজের রচিত অপেরা৷ তদানিন্তন বাভারিয়া রাজ্যের রাজা দ্বিতীয় লুডভিশের অর্থনৈতি সহায়তায় তাঁর সেই ইচ্ছারই বাস্তব রূপ ‘বায়রয়েট অপেরা উৎসব হল'৷ বলাই বাহুল্য, লুডভিশ ছিলেন ভাগনারের সংগীত কর্মের এক গভীর অনুরাগী৷ প্রথম উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৬ সালে৷ ১৯৫১ সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই উৎসব৷ অপেরা সংগীত জগতে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, এই ‘বায়রয়েট অপেরা উৎসব'৷ বর্তমানে বায়রয়েট হয়ে উঠেছে পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীত অনুরাগীদের এক তীর্থস্থান৷ প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে অংশ নেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়ক-গায়িকা, সংগীত ও অপেরা নির্দেশক৷
এ বছরও মহা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘বায়রয়েট অপেরা উৎসব'৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট গাউক ও চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সহ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি জগতের নামি-দামি ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ছিল এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান৷ একমাস ব্যাপী এই উৎসবে ভাগনারের বিভিন্ন অপেরা পরিবেশিত হয়৷ বিভিন্ন লোকগাঁথা অবলম্বনেই রচিত তাঁর বেশির ভাগ অপেরা৷ যেমন, তাঁর বিখ্যাত রোমান্টিক অপেরা ‘লোয়েনগ্রিন'৷ দুর্ভাগ্যের শিকার ব্রাবান্ট রাজ্যের উত্তরসূরি রাজকন্যা অ্যালজাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন এক অপরিচিত বীরযোদ্ধা৷ শুধু একটি শর্তে, অ্যালজা যেন কখনও তাঁর পরিচয় জানতে না চান৷ তারপর তাঁদের গভীর ভালোবাসা, শর্তভঙ্গ ও বিচ্ছেদ নিয়েই ‘লোয়েনগ্রিন'-এর কাহিনি৷ তাঁর সর্বশেষ অপেরা ‘পার্সিফাল'৷ ঐতিহাসিক পটভূমিকায় রচিত এক তরুণের জীবনকাহিনি এটি৷ জীবনের শেষ পর্যন্ত অপেরা সৃষ্টিই ছিল রিশার্ড ভাগনারের একমাত্র কাম্য৷