অফিসে কাজের ‘ন্যায্য’ বণ্টন করবে সফটওয়্যার
২৬ নভেম্বর ২০২০ভবিষ্যতে কর্মীদের ঠিক ততটাই কাজ দেওয়া হবে, যতটা তারা ভালোভাবে করতে পারবেন৷ একটি সফটওয়্যার সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজের বণ্টন করবে৷ এমন স্বপ্ন বাস্তব করার চেষ্টা চলছে৷ সেই লক্ষ্যে কর্মীদের সব সময়ে নাড়ি মাপার যন্ত্র পরে থাকতে হবে এবং একটি ক্যামেরা তাদের মুখচ্ছবির ভিডিও তুলে যাবে৷ এভাবে মানসিক চাপ ও মনের অবস্থা পরিমাপ করা হবে৷ সেই সব তথ্যের ভিত্তিতে সফটওয়্যার স্থির করবে, যে সেই ব্যক্তিকে কত পরিমাণ কাজ দেওয়া যায়৷
মার্কো মায়ার এই সফটওয়্যার তৈরির কাজে অংশ নিয়েছেন৷ চ্যাডলিস প্রোটোকলের ভিত্তিতে তিনি কাজের সময়ে কর্মীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে কাজের চাপ ও আবেগ বোঝার চেষ্টা করছেন৷ সেটা বুঝতে হলে কম্পিউটারকে আবেগ বিশ্লেষণ করা শিখতে হবে৷
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রেগিনা বুয়র্গমায়ার কঠিন এক দায়িত্ব পেয়েছেন৷ তাঁকে অনেকগুলি লেখা টাইপ করতে হবে৷ তবে তিনি জানেন না যে টেক্সটগুলি ধীরে ধীরে আরও কঠিন হয়ে উঠবে৷ প্রথমে শিশুদের গল্প, তারপর জটিল রাসায়নিক ফর্মুলা সংক্রান্ত টেক্সট তাঁকে টাইপ করতে হবে৷
পরিমাপ যন্ত্র তাঁর বেড়ে চলা মানসিক চাপের উপর নজর রাখছে৷ সেইসঙ্গে ক্যামেরা তাঁর মুখের নির্দিষ্ট কিছু পেশি সঞ্চালন রেকর্ড করছে, যা থেকে তাঁর আবেগ টের পাওয়া যায়৷ রেগিনা বেশ ভাবলেশহীন হয়ে থাকলেও তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে৷ মার্কো মায়ার বলেন, ‘‘ডানদিকে তাকালে বোঝা যাবে, তিনি কতটা উত্তেজিত৷ এখনই দেখলাম উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ ফলে বোঝা যাচ্ছে যে কাজটা তাঁর জন্য কঠিন বলে উত্তেজনা বাড়ছে৷ আরেকটি বিষয় হলো ভিডিও দেখে হৃদস্পন্দনও টের পাওয়া যাচ্ছে৷ অর্থাৎ হৃদযন্ত্র নিয়মিত, অনিয়মিত, দ্রুত না ধীরে চলছে৷ চিকিৎসাবিদ্যা ও মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতে এমন কিছু স্যাম্পেল রয়েছে, যা মানসিক চাপ বা শিথিল অবস্থা তুলে ধরে৷ এর সাহায্যে এমনকি ভাবলেশহীন ‘পোকার ফেস' থাকলেও কারও মনের উত্তেজনা আমরা টের পাই৷''
কর্মীদের সম্মতি ছাড়া জার্মানিতে এমন পর্যবেক্ষণ নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তাঁদের কি সবসময়ে সেই সুযোগ রয়েছে? মার্কো মায়ার নজরদারি বা তথ্য সংরক্ষণ করতে চান না৷ তিনি শুধু প্রত্যেক কর্মীর জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান৷ এমন এক প্রণালী তৈরি করতে চান, যা গভীর মনোযোগের সময়ে টেলিফোন কল আসতে দেবে না৷ টনি কোম্পানির প্রধান মার্কো মায়ার বলেন, ‘‘অনেকেই যেটা মানতে বাধ্য হবেন, সেটা হলো প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে মনোযোগে বিঘ্নের কারণ বেড়ে গেছে৷ ইমেল, মেসেঞ্জার, সোশাল মিডিয়া ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে৷ অর্থাৎ গভীর মনোযোগ দিয়ে একটানা অনেক সময় জুড়ে কাজ করা কঠিন হয়ে উঠেছে৷''
ফলে তথাকথিত ‘ফ্লো কন্ডিশন' বা আরামদায়ক কাজের সময় বিরল হয়ে উঠছে৷ মার্কো বলেন, ‘‘এই অবস্থাকে প্রায়ই একদিকে অপর্যাপ্ত চ্যালেঞ্জ ও একঘেয়েমি এবং অন্যদিকে অতিমাত্রার কাজ ও মানসিক চাপের মধ্যে আদর্শ ভারসাম্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়৷ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করতে পারলে আমি ‘ফ্লো'-এর মধ্যে থাকি৷''
এই ‘ফ্লো' পর্যায়ে আমাদের শরীর এন্ডোরফিন নামের সুখের হরমোন নিঃসরণ করে৷ তাছাড়া হৃদস্পন্দনের ছন্দেরও উন্নতি হয় এবং ত্বকের পরিবাহিতা বেড়ে যায়৷ মায়ার এই সব শারীরিক প্রতিক্রিয়া কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারকে এমন সব আবেগ শনাক্ত করতে শেখাতে চান৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষমতা অনুযায়ী কোনো কর্মীর কাজ বণ্টন করা হবে৷
প্রতিবেদন: আলেক্সান্ড্রা ফান ডে পল/এসবি