হার মানতে হলো মমতাকে
৯ এপ্রিল ২০১৪গত সোমবার দিল্লির নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে কড়া বার্তা দেয়া হয় যে, মঙ্গলবার ৮ই এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আটজন আধিকারিককে বদলি করার নির্দেশ কার্যকর করা না হলে পশ্চিমবঙ্গে ভোট স্থগিত রাখা হতে পারে৷ পক্ষপাতিত্ব এবং নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায় পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের আটজন আধিকারিককে বদলি করার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন৷ সুষ্ঠু ও দুর্নীতিমুক্ত ভোটের জন্য এটা জরুরি৷ এই আট জন আধিকারিকের মধ্যে আছেন পাঁচজন জেলা পুলিশ সুপার, একজন জেলা শাসক এবং দুইজন অতিরিক্ত জেলা শাসক৷ শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হন৷
এর আগে রাজ্য সরকারের কাছে এই নির্দেশ পৌঁছোবার পর তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশকে বিরোধী দলগুলি এবং নির্বাচন কমিশনের চক্রান্ত বলে অভিহিত করে বলেন, কোনোমতেই এই নির্দেশ মানা সম্ভব নয় যেহেতু রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনোরকম পরামর্শ করা হয়নি৷ এই নির্দেশ মানতে গেলে রাজ্যে ভোটের সময় আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার সমস্যা হবে৷ তার জন্য রাজ্য সরকার দায়ী থাকবে না৷ চক্রান্তের অভিযোগ করায় মমতাকে কারণ দর্শাবার নোটিস জারি করার দাবি জানায় বিরোধী দল বিজেপি৷
এই ইস্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নির্বাচন কমিশনের সংঘাত ওঠে চরমে৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই বিরোধ গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত৷ সেখানেও মমতাকে মাথা নত করতে হয়েছিল৷ সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিবার নির্বাচন কমিশনের মত এক সাংবিধানিক সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা যায়না৷ সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য করতে পারেনা কোনো রাজ্য সরকার৷ মমতার বক্তব্য নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কোনো মন্তব্য না করে স্রেফ বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৮এ ধারা অনুযায়ী গত ৫ই মার্চ গোটা দেশে নির্বাচনি বিজ্ঞপ্তি জারির পর রাজ্য পুলিশের ডায়রেক্টর-জেনারেল থেকে পুলিশের কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে৷ উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশেও একই অভিযোগে পুলিশ ও প্রশাসনের ২৯ জন কর্তাব্যক্তিকে সরিয়ে দেয়া হয়৷
রাজ্যে বামফ্রন্ট জমানায় একই ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের৷