অবাধ যাতায়াতের উপর নিয়ন্ত্রণ চাপাচ্ছে ইইউ
২২ জানুয়ারি ২০২১ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির উন্মুক্ত সীমানা শুধু মানুষ ও পণ্য নয়, করোনা ভাইরাসের অবাধ সংক্রমণের পথও সুগম করে দিচ্ছে৷ গত বছর সংক্রমণের ‘প্রথম ঢেউ’ দেখা দেবার পর একাধিক দেশ লকডাউনের পাশাপাশি সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ শীতকালে ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ দেখা দেবার পর অবশ্য ইইউ অভ্যন্তরীণ সীমান্তে তেমন কোনো কড়াকড়ি দেখা যায়নি৷ কিন্তু পরিস্থিতির অবনতির জের ধরে ইইউ নেতারা নাগরিকদের অবাধ চলাচলের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন৷ সেই সঙ্গে আরো পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের চাপও বাড়ছে৷
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইউরোপের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণ এবং করোনার নতুন সংস্করণের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ তাঁর মতে, ইউরোপের একক বাজারের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ করা উচিত হবে না৷ পণ্য এবং শ্রমিক-কর্মীদের অবাধ চলাচল অত্যন্ত জরুরি৷ সংক্রমণের ঝুঁকি অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ প্রায় গোটা ইউরোপের মানচিত্রই লাল হয়ে উঠেছে৷ এবার বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিকে গাঢ় লাল হিসেবে তুলে ধরে সেখানে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ অর্থাৎ অতি জরুরি কারণ ছাড়া সেখান থেকে মানুষ বের হতে পারবেন না৷ করোনা পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে৷ ইউরোপীয় সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেলও অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার প্রায় চার ঘণ্টার এক ভিডিও কনফারেন্সে ইইউ শীর্ষ নেতারা করোনা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের বদলে সাধারণ মানদণ্ডের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন৷ যেমন, করোনা টিকা নিলে মানুষকে সাধারণ সার্টিফিকেট দেবার প্রস্তাব বিবেচনা করছেন তারা৷ জানুয়ারি মাসেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে৷ তবে গ্রিস ও স্পেনের অনুরোধ মেনে এমন সার্টিফিকেট সম্বল করে অবাধ ভ্রমণের প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো ঐকমত্য সম্ভব হয়নি৷ টিকা নিলেও কোনো মানুষ সংক্রমণের উৎস হতে পারে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকায় ফ্রান্স এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে৷ বেলজিয়াম পর্যটনের মতো কম প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ভিডিও কনফারেন্সের আগে করোনা সংকটের ‘তৃতীয় ঢেউ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ এমন পরিস্থিতি এড়াতে ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের মিউটেশনের ফলে নতুন সংস্করণের জোরালো মোকাবিলা করা প্রয়োজন তুলে ধরেন তিনি৷ তিনি সীমান্ত বন্ধের সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দিচ্ছেন না৷ তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন পদক্ষেপ এড়াতে চান ম্যার্কেল৷
বৃহস্পতিবারের আলোচনার পর আগামী কয়েক দিনে পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে আরো কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনাচিন্তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ গত বছরের মতো আতঙ্কের জের ধরে জাতীয় স্তরে একক পদক্ষেপ এড়িয়ে চলতে চায় ইইউ৷ আগামী রবিবার থেকে অতি প্রয়োজনীয় কারণে কেউ ইইউ-তে প্রবেশ করলে ফিরে যাবার আগে কোভিড ১৯ পরীক্ষা করতে হবে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)