অবিবাহিত যুগলের একত্রে বসবাসের পক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত
২৫ মার্চ ২০১০দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী খুশবু'র দায়ের করা এক আপিল শুনানির সময় রাজধানী নতুন দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের এক বিচারক প্যানেল মঙ্গলবার এ বিষয়ে সমর্থন জানায়৷ ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্কের দিকে উৎসাহিত করার অভিযোগে খুশবু'র বিরুদ্ধে দায়ের করা বহুসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির জন্য ওই আপিল করেছিলেন তিনি৷ বার্তা সংস্থা পিটিআই একথা জানিয়েছে৷
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নারী-পুরুষের মেলামেশা এবং যৌনজীবন নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করে অনেকের রোষানলে পড়েন খুশবু৷ এ নিয়ে ২০০৫ সাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২০টির বেশি মামলা হয়েছে ভারতের বিভিন্ন আদালতে৷ এসব মামলা নিষ্পত্তিতে নিম্ন আদালতের ব্যর্থ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন খুশবু৷
তামিল-ভাষী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা খুশবু এক সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘কোনো শিক্ষিত পুরুষ এটা আশা করতে পারে না যে, তার নববধুকে কুমারী হতে হবে৷'' এ প্রসঙ্গে বিচারকরা বলেন এসব খুশবু'র ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি৷ বাদী পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বিচারকরা বলেন, ‘‘এটা কিভাবে আপনাদের উদ্বেগের কারণ হয়, এতে আমরা বিব্রত নই৷ সবচেয়ে বড় কথা এটা মানুষের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়৷ এটা কিভাবে অপরাধ হয়? আইনের কোন্ ধারা বা বিধির আওতায় তা অপরাধ?''
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে. জি. বালকৃষ্ণন, বিচারপতি দীপক ভার্মা এবং বিচারপতি বি. এস. চৌহানের প্যানেল জানায়, ‘‘যখন দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একত্রে বসবাস করতে চায় তাতে কি অপরাধ হয়? এতে কি কোনো অপরাধ হয়? এটা কোনো অপরাধ হতে পারে না৷''
সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এমন কোনো আইন নেই যাতে ‘লিভ টুগেদার' বা একত্রে বসবাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিংবা বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ ভারতীয় সংস্কৃতিতেও এটা অনাকাঙ্খিত নয় বলে উদাহরণ টেনে আদালত বলে এমনকি দেবদেবী রাধা-কৃষ্ণও বিবাহিত সম্পর্ক ছাড়াই একত্রে বসবাস করতেন বলে হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে৷
৩৯ বছর বয়সি তামিল অভিনেত্রী খুশবু'র বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর মূল বক্তব্য প্রায় একই৷ মামলাকারীদের দাবি, খুশবু'র মন্তব্য তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করছে এবং দেশের নৈতিক মূল্যবোধে আঘাত হানছে৷ তাই ‘অপরাধী' হিসেবে খুশবুকে শাস্তি দিয়ে সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক৷ কিন্তু, ভারতের সর্বোচ্চ আদলত মামলাগুলোর এই আর্জি নাকচ করে দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের একত্রে বাসবাস, মেলামেশা এবং যৌন জীবনের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জানায়৷
ভারতীয় সংবিধানের ‘আর্টিকেল ২১'-এ নাগরিকদের জীবনযাপন এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ বিচারকরা দৃশ্যতই এই বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘দয়া করে আমাদের বলুন এতে অপরাধ কোথায় এবং আইনের কোন্ ধারায় তা অপরাধ৷ একত্রে বসবাস জীবন যাপনের সহজাত অধিকার৷''
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক