অবৈধ উপার্জনে বেপরোয়া পুলিশ
১১ জানুয়ারি ২০১৬পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ধরনের অপরাধ সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ৷ তাই এদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় মামলা নয়, ফৌজদারি মামলাও করতে হবে৷ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে এদের৷''
পুলিশের শৃঙ্খলা ভেঙে গেলে এই ধরনের প্রবণতা বাড়ে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ঢালাওভাবে বললে হবে না৷ তবে মাঝে মধ্যে গাফিলতি থাকতে পারে৷ আবার অনেকক্ষেত্রে এমন কিছু ছেলে পুলিশে ঢুকে গেছে, যাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ হয়নি৷ তারাও এমনটা করতে পারে৷''
বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী অভিযোগ করেন, গত শনিবার রাত ১১টার দিকে তিনি মোহাম্মদপুরে খালার বাসা থেকে কল্যাণপুরে নিজের বাসায় যাচ্ছিলেন৷ জেনেভা ক্যাম্পের পাশে হঠাৎ পেছন থেকে এক পুলিশ সদস্য তার শার্টের কলার ধরে বলেন, ‘‘তোর কাছে ইয়াবা আছে?'' তিনি অস্বীকার করলে পুলিশ কর্মকর্তাটি তাকে ধরে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারের কাছে নিয়ে যান৷ এসআই মাসুদও তাকে জিজ্ঞাসা করেন তার কাছে ইয়াবা আছে কিনা৷ তিনি আবারও অস্বীকার করলে এসআই মাসুদসহ পুলিশ সদস্যরা তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন৷ এক পর্যায়ে তাকে জোর করে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয় এবং মারধর করা হয়৷ এরপর তাকে থানায় নেয়ার পর, তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে পুলিশ৷ আর সে সময় পর্যন্ত তাকে কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করতে দেয়নি তারা৷
রাব্বী বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে আমার পরিচয় দিই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বলেও পরিচয় দিই৷ এটা শুনে এসআই মাসুদ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, গালাগালি করেন৷ এক পর্যায়ে আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসেন তিনি৷ না দিলে ‘ক্রসফায়ার'-এর হুমকিও দেন৷''
রাব্বী জানান, প্রথমে ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও রাত আড়াইটার দিকে তিনি তার পরিচিতদের ফোন করতে পারেন৷ মাসুদ শিকদার তাকে বলেছিলেন, যেন কেউ একজন এসে তাকে নিয়ে যায়৷ তবে রাব্বীর বন্ধুরা ফোন পেয়ে সাত-আটজন এসে তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান৷ পরে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন এবং রবিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন৷
তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, ব্যাংক কর্মকর্তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই মাসুদকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল-ফারুককে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷
এদিকে রাজধানীর ভাটারায় টাকা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীকে চুরির মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া ও তাঁর বাসা থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ৷ ব্যবসায়ীর চোখ বেঁধে ‘ক্রসফায়ার'-এর হুমকি দেয়া হয়, দাবি করা হয় ২০ লাখ টাকা৷ পরে তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বাসায় নিয়ে ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৩ লাখ টাকা নিয়ে যায় পুলিশ৷ গুরুতর এই অভিযোগ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ ও ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে৷ জানা যায়, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী৷ এ মুহূর্তে অভিযোগটি তদন্ত করছেন ডিএমপি-র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদ৷ এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে৷'' ইতিমধ্যেই পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
শুধু এই দু'টি ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিককালে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আটকে ‘ক্রসফায়ার'-এর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অফিসেও এই ধরনের অভিযোগ পড়েছে৷
পুলিশের এ ধরনের আচরণের কোনো ঘটনা আপনার জানা থাকলে জানান আমাদের, নীচের মন্তব্যের ঘরে৷