‘অবৈধ সরকারের অবৈধ মন্ত্রিসভা’
১৩ জানুয়ারি ২০১৪বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অসীম বলেন, ‘‘একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সরকারের মন্ত্রীসভা গঠন হতে পারে না৷ সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে পারে না৷ আর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এমন কোন তথ্যও নেই৷''
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন হওয়ার পর আপনা আপনি নবম জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ তবে ব্যারিষ্টার অসীম বলছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ জোর করেই নিজেদের সুবিধা মতো সংবিধানের ব্যাখা দিচ্ছে৷''
বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গেজেট এবং এর ফলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন নবম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক৷ রিটে সংবিধানের ৭ এবং ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে নতুন করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে৷ রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দাখিল করা হয়৷
এছাড়া আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ পৃথক আরেকটি রিট করেন৷ তিনিও একই ধরনের নির্দেশনা চেয়েছেন৷ তবে রবিবার আদালত বসেনি৷ সোমবার এসব রিটের বিষয়ে শুনানি হবে বলে আশা করছেন রিট দু'টির আইনজীবীরা৷
জয়নুল আবদিন ফারুকের পক্ষে রিট দায়েরকারী আইনজীবী ব্যারিষ্টার নাসিরউদ্দিন অসীম বলেন, ‘‘আদালত না বসায় রবিবার আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি৷ সোমবার সকালে শুনানি করার জন্য আমরা যাব৷''
তিনি বলেন, ‘‘আবেদনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গেজেট এবং এর ফলে শপথ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করার আদেশ চাওয়া হয়েছে৷ রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত দশম সংসদের অধিবেশন না বসতে এবং সাংসদদের বেতনভাতাসহ পারিপার্শ্বিক প্রদান না করার আর্জি জানানো হয়েছে৷
‘‘সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ এর মেয়াদ শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি৷ সংবিধানের ১২৩-এর ৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে পূর্ববর্তী সংসদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন সাংসদেরা কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না৷ পরে নির্বাচন কমিশন যে গেজেট প্রকাশ করেছে তা অসত্ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷''
রিট আবেদনে আইনসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশনের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে৷
‘শপথ কেন বেআইনি হবে না'
এদিকে এডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দ তাঁর রিট আবেদনে বলেন, ‘‘৮ জানুয়ারি ২৯০ জন সাংসদের নামের গেজেট বিজ্ঞপ্তি এবং তাদের শপথ কেন বেআইনি হবে না, এই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে৷ রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ওই গেজেট বিজ্ঞপ্তি স্থগিত এবং মন্ত্রিসভা গঠন ও শপথ স্থগিতের আবেদন জানানো হয়৷''
রিট আবেদনে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে সাংসদদের সংখ্যা হবে ৩০০ জন৷ মহিলা সদস্যসহ ৩৫০৷ কিন্তু নবম সংসদসহ বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৬৩৮, যা অনুচ্ছেদ ৬৫-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷''
রিটে আরও বলা হয়, ৭১ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো ব্যক্তি একই সময়ে দুই বা ততোধিক নির্বাচনি এলাকার সাংসদ হবেন না৷ কিন্তু বর্তমানে একই ব্যক্তি একই আসনে নবম ও দশম জাতীয় সংসদের সদস্য৷ ৭২ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, নবম সংসদ ভেঙে দেয়া হয়নি৷ আর ৭২ (৩) অনুসারে নবম সংসদের মেয়াদও এখনো শেষ হয়নি৷
‘গায়ের জোরেই সব করছে'
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরা তো গায়ের জোরেই সব করছে৷ সংবিধানের কোন তোয়াক্কাই করছে না, আবার মুখে বলছে সংবিধানের কথা৷ সবকিছু মিলিয়ে যা হচ্ছে তা এক কথায় হাস্যকর৷''
ভালো করার আশা
রবিবার বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা নয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এটাই বড় কথা৷'' তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি করে তো আর কারও পেট চলে না৷ আশা করছি নতুন মন্ত্রীরা ভালো কিছু করবেন৷''
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও নতুন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘নতুন মন্ত্রিসভায় বিতর্কিত কেউ নেই৷ ক্লিন ইমেজের লোকজনকেই মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছে৷''
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ আর ৮ জানুয়ারি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ২৯২ জন সাংসদের মধ্যে ২৯০ জন সাংসদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন৷ তবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে৷