জার্মানির অভিভাবকহীন শরণার্থীদের কথা
২০ জুলাই ২০১৬সোমবার রাতে বাভেরিয়া রাজ্যে এক ট্রেনের মধ্যে কুড়াল ও ছুরি নিয়ে হামলা চালায় ঐ শরণার্থী৷ এতে রেলের চার যাত্রী আহত হন৷ এরপর হামলকারী ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় এক নারীকে কুপিয়ে জখম করে৷ পরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ঐ আততায়ী৷
হামলাকারী এই শরণার্থী গত বছরের জুনে জার্মানিতে প্রবেশ করেছিল৷ সঙ্গে তার বাবা-মা কিংবা কোনো অভিভাবক ছিল না৷ বয়স ১৭ হওয়ায় তাকে ‘আনঅ্যাকম্পেনিড' অর্থাৎ অভিভাবকহীন শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়৷ এরপর গত কয়েকমাস ধরে সে এক জার্মান পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিল৷
ঐ হামলাকারীর মতো জার্মানিতে সঙ্গীহীন শরণার্থীর সংখ্যা গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি ছিল বলে জানিয়েছে ‘ফেডারেল অ্যাসোসিয়েশন ফর আনঅ্যাকম্পেনিড মাইনর রিফিউজিস'৷ এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ১৬-১৭'র মধ্যে৷
বাভেরিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম হেয়ারমান মঙ্গলবার জানান, হামলাকারীর ঘরে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর হাতে আঁকা একটি পতাকা পাওয়া গেছে৷ তাতে পশতু ভাষায় কিছু লেখা ছিল৷ এই ঘটনা থেকে হেয়ারমান মনে করছেন, ‘‘হয়ত সে সাম্প্রতিক সময়ে নিজে নিজেই ব়্যাডিকাল হয়ে পড়েছিল৷''
সতর্কবার্তা
জার্মানিতে বসবাসকারী কট্টরপন্থি সালাফিরা দেশটিতে আসা শরণার্থীদের তাদের (সালাফিদের) দলে ভেড়াতে পারে বলে গত বছরই সতর্ক করে দিয়েছিল জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা৷
শরণার্থীদের মধ্যে এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ‘ভায়োলেন্স প্রিভেনশন নেটওয়ার্ক' বা ভিপিএন এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউলিয়া রাইনেল্ট৷ তাঁর সংস্থা অভিভাবকহীন শরণার্থীদের কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে থাকে৷ তিনি মনে করেন, যেসব কিশোর শরণার্থী বাবা-মা'র সঙ্গে থাকে এবং যারা ভাষা ও সংস্কৃতি জানার কারণে অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে, তাদের চেয়ে, যারা অভিভাবকহীন অবস্থায় জার্মানিতে এসেছে, তাদের মধ্যে ব়্যাডিকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে৷ তবে সেটি আসলেই ঘটে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷
রাইনেল্ট বলেন, সাধারণত একজন ব্যক্তি কট্টরপন্থিদের সংস্পর্শে গেলে, তাদের সঙ্গে মিশলে, আলাপ-আলোচনায় অংশ নিলে ‘ব়্যাডিকাল' হয়ে ওঠে৷ তবে এর ব্যতিক্রমও আছে৷ ‘‘যেমন আমরা দেখছি শুধু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেও কেউ কেউ অতি দ্রুত ব়্যাডিকাল হয়ে উঠছে-'' বলেন তিনি৷
এক ইমাম যা বললেন
জার্মানির ভিজবাডেন শহরের ইমাম মায়ার হুসামুদ্দিন ডি-ব়্যাডিকালাইজেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত৷ তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, অভিভাবকহীন শরণার্থীদেরই ব়্যাডিকাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ ‘‘তাদের অনেকে এমন সব মানসিক অবস্থার মধ্যে থাকে যে তাদের সহজেই ব়্যাডিকাল ভাবাধারায় উদ্বুদ্ধ করা যায়৷'' কট্টরপন্থিরাও এমন তরুণদের খুঁজে বের করতে সক্ষম যাদের সহজেই কোনো কিছু করতে রাজি করানো যায়, বলেন হুসামুদ্দিন৷
এই ইমাম মনে করেন, আইএস অনুসারী বাড়াতে এখন শরণার্থীদের দিকে নজর দিয়েছে৷