1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশক্যামেরুন

অরগ্যানিক বর্জ্য থেকে রান্নার জ্বালানি

১১ অক্টোবর ২০২৩

ক্যামেরুনের মতো উন্নয়নশীল দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যত নেই বললেই চলে৷ এক এনজিও এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে এক সার্বিক উদ্যোগ শুরু করেছে৷ সেইসঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করছে৷

https://p.dw.com/p/4XNpB
ক্যামেরুনের অর্গ্যানিক ফার্টিলাইজার
ক্যামেরুনের অর্গ্যানিক ফার্টিলাইজারছবি: DW

পথের ধারে জঞ্জাল ছড়িয়ে রয়েছে৷ কিন্তু উবের স্টেফি চুইগুয়ার কাছে সেটা যেন সম্পদের ভাণ্ডার৷ তিনি ও তাঁর টিম ক্যামেরুনের পেনিয়া এলাকায় নিয়মিত শাকসবজির অবশিষ্ট সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন৷

সেখানে পৌর স্তরে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই৷ ফলে সবকিছু পথেঘাটে পড়ে থাকে৷ তবে ফ্যামিলি গ্রিন কর্পোরেশন নামের এনজিও-র জন্য সেই আবর্জনা মূল্যবান সম্পদ৷ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উবের বলেন, ‘‘আমরা বসতি এলাকার এই বর্জ্য কার্যকর উপায়ে পুনর্ব্যবহার করতে চাই৷ চারিদিকে এমন বর্জ্য পড়ে রয়েছে৷ বেশিরভাগই শাকসবজির অবশিষ্ট অংশ, যা দিয়ে আমরা অনেক মানুষের জন্য পরিবেশবান্ধব কাঠকয়লা তৈরি করতে পারি৷ দাম কম হওয়ায় অনেক পরিবারের কাজে লাগতে পারে৷''

টিমের কাছে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম রয়েছে৷ তারা এক কার্গো ট্রাইক ব্যবহার করে বর্জ্য শাকসবজিভরা ব্যাগ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে নিয়ে যান৷ তারা মাসে কয়েকশো কিলোগ্রাম বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করেন৷ সবার আগে বর্জ্য আলাদা করতে হয়৷ কলা, ভুট্টার ডাঁটা, নারকেল ও বাঁশের ডালপালা অরগ্যানিক চারকোল তৈরির জন্য কাজে লাগানো যায়৷

কাঠকয়লার মতো এই উপাদানকেও সবার আগে পোড়াতে হয়৷ তবে এই টিম কার্বন নির্গমনের মাত্রা  যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে৷ তারপর শাকসবজির পোড়া বর্জ্য অন্যান্য অরগ্যানিক বর্জ্যের সঙ্গে মেশানো হয়৷ কাসাভা গাছের আঠালো পদার্থ দিয়ে সেই মিশ্রণ আরো পাকাপোক্ত করা হয়৷

এখানকার প্রত্যেকটি যন্ত্র এনজিও তৈরি করেছে৷ কিন্তু সব কাজ মোটেই স্বয়ংক্রিয় করে তোলা হয় নি৷ চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে হাতে করে কাঠকয়লার রূপ দেওয়া হয় এবং সেই ইট রোদে শুকাতে দেওয়া হয়৷ উবের বলেন, ‘‘এটা একটা পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর জ্বালানি, যা থেকে ধোঁয়া বার হয় না৷ এমনকি বাসায় গ্যাসের মতো ব্যবহার করা যায়৷ এটা বিউটেন গ্যাসের বিকল্প হয়ে ওঠে৷ একই সঙ্গে সমাজে বর্জ্যের সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করে৷ তাছাড়া বন নিধনের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও এর অবদান রয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমস্যাও এভাবে মোকাবিলা করা যায়৷''

এনজিও-টি স্থানীয় চাষিদের জন্য প্রথম বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করেছে৷ এখন সম্প্রসারণ ঘটিয়ে গোটা দেশে বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্যও গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে৷

পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উবেরের পেশা হয়ে উঠেছে৷ পেট্রোলিয়াম শিল্প তাঁকে উপেক্ষা করায় তিনি এই পথ বেছে নিয়েছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে উবের বলেন, ‘‘আমি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার৷ ২০১৬ সালে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর তেল শিল্পে কাজ পাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল৷ তাই কয়েকজন বন্ধু ও সহপাঠির সঙ্গে মিলে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পের উন্নতির লক্ষ্যে এক সংগঠন গড়ে তোলার আইডিয়া মাথায় এলো৷''

গ্রিন এনার্জির সঙ্গে এনজিও-টি সম্প্রতি অরগ্যানিক সারও তৈরি করতে শুরু করেছে৷ তারা খুব সহজ অথচ অত্যন্ত কার্যকর এক প্রক্রিয়া কাজে লাগাচ্ছে৷

কচি সবুজ পাতা পানিতে ভিজিয়ে তার সঙ্গে শাকসবজির অবশিষ্ট অংশ ও গোবরের মতো অন্যান্য অরগ্যানিক বর্জ্য মিশিয়ে সার তৈরি করা হচ্ছে৷ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই সার প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে৷

এই এনজিও চাষি ও স্কুলগুলির মাধ্যমে সামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়েছে৷ চাষিদের অরগ্যানিক সার ব্যবহার করতে রাজি করানো, এমনকি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তাদের শামিল করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে৷ উবের স্টেফি চুইগুয়া বলেন, ‘‘আমরা অনেক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বর্জ্য টেকসই করার ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছি৷ কমবয়সি ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতের ভিত্তি৷ স্কুলের পাট শেষ করার পর তাদের এই ক্ষেত্রে অবদানের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করতে হবে৷''

এই এনজিও ক্যামেরুনে পথিকৃতের কাজ করছে৷ তাদের আইডিয়া আরো জনপ্রিয় হলে দেশের তরুণ প্রজন্মের উপকার হবে৷ পরিবেশও তার সুফল পাবে৷

এইয়ং/মিল্কে/এসবি