‘অর্থনীতির স্বার্থে’ করোনাকালেই দুর্গা পূজা
৫ অক্টোবর ২০২০কোভিড পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বারোয়ারি দুর্গাপুজো করা উচিত হবে কিনা, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ কারণ, পুজো মানেই জনসমাগম এবং বহু লোকের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা৷ শেষ পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্ত, পুজো হবে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বড় পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন, এবং সেখানে সামাজিক দূরত্ব যথাসাধ্য বজায় রেখে উৎসব করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ক্লাবগুলিকে পুজো করার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদানও দিচ্ছে সরকার৷ কিন্তু বারোয়ারি পুজো হবে, এই সম্ভাবনা চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে৷ দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরল শুরুর দিকে কোভিড সংক্রমণ সাফল্যের সঙ্গে রুখে দিলেও সেখানে ‘ওনাম'উৎসবের পর সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করেছে৷ একই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গেও যদি হয়, উদ্বেগ সেখানেই৷
কী বলছে বিরোধী দলগুলি?সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘পুজো আসলে মানুষের বিশ্বাস৷ সেটা যেভাবে আমাদের হয়, বা হচ্ছিলো, তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করাটা অসম্ভব ছিল না৷ কিন্তু এই যে বিশাল একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, কার্নিভাল গোছের, যেখানে লোক সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দেখানো এবং রাজনীতির স্বার্থ খোঁজা, সেটা যদি কন্ট্রোল করতে না পারে, মুশকিল হবে৷ সেটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা সবাইকেই করতে হবে৷ আমরাও সেই আবেদনই করছি৷ যতটা সম্ভব কোভিড প্রোটোকল মান্য করেই যেন সেটা হয়৷ পুজো করুন, উৎসব করুন, আনন্দ করুন৷ কিন্তু আতিশয্যের মধ্যে দিয়ে আমরা কেউ যেন বিপদ ডেকে না আনি৷’’
কিন্তু আরো একটা কথা রাজনৈতিক মহলে শোনা যাচ্ছে৷ যে কোভিডের কারণে সরকার যদি পুজোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতো, তা হলে সেটা বিজেপির ইস্যু হয়ে দাঁড়াতো, যে মমতা ব্যানার্জি দুর্গাপুজো করতে দিচ্ছেন না!এদিকে পুজো হলে ভিড় হবে, ফলে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে৷ রাজ্য সরকারের জন্য এটা শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ কিন্তু এই রাজনৈতিক বাধ্যতার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করলেন৷ তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল এই প্রথম কোনো উৎসবে উৎসাহ দিচ্ছে, বা পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তা নয়৷ বরং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অনেকেই পুজোকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক বৃত্ত তৈরি হয়, তাতে আছেন৷ প্রতিমা বিসর্জনের আগে যে কার্নিভাল আয়োজন করে রাজ্য সরকার, তা পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে এখনো করোনাকে এড়াতে বড় কোনো উৎসব চালু করেনি সেখানে স্বাভাবিক লোকসমাগমের সুযোগ রেখে পুজো আয়োজনের পক্ষে কুনাল ঘোষের যুক্তি, ‘‘বাংলার দুর্গাপুজো এক বিরাট বিকল্প অর্থনীতি৷ ধরা যাক, পুজো ছোট হচ্ছে, বা পুজো হচ্ছে না, বা ঘটপুজো হচ্ছে, তা হলে বাংলার মৃৎশিল্পীরা, যাঁরা ঠাকুর গড়েন, সারা বছর তাকিয়ে থাকেন এই সময়ের দিকে, সেখান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের এক বিরাট আয়োজন এর মধ্যে আছে৷’’
কুনাল ঘোষ মনে করিয়ে দিলেন মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে, মণ্ডপ যাঁরা বানান, যাঁরা প্রতিমার সাজ তৈরি করেন, এমনকি অঞ্জলির সময় প্রতিমার পায়ে যে ফুল দেওয়া হয়, তার জোগানের ওপর নির্ভর করে প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার ফুলচাষীদের জীবিকা৷ তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা যদি পুজোটাকে বন্ধ করি বা ছোট করি, সেক্ষেত্রে পুজোকে কেন্দ্র করে যে টাকাটা জমা হয়, বিজ্ঞাপন বা চাঁদার, সেটা যে সমাজের সমস্ত শিরা-ধমনী দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার গরিব মানুষগুলোর কাছে, সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়৷’’