অর্থমন্ত্রী পাচারকারীর তালিকা কেন চাইছেন?
৮ জুন ২০২১তথ্য উপাত্ত বলছে বাংলাদেশ থেকে বছরে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়। আর বাংলাদেশ থেকে পাচার অর্থে কানাডায় বেগম পাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, অষ্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা-বাড়ি এই সব কিছুই এখন জানা। এমনকী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও অর্থ পাচারকারীদের তথ্য দিয়েছেন প্রকাশ্যে। আর এও বলেছেন, বেগম পাড়ায় যে ২৮ জন অর্থ পাচারকারীর নাম তিনি পেয়েছেন তার অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা। রাজনীতিবিদরাও আছেন।
পিকে হালদারের অর্থ পাচারের কথা সবার জানা। তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পরও তিনি দেশের বাইরে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। আর আদালতকে কথা দিয়েও ফেরত আসেননি।
নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির নামে ক্যানাডার টরোন্টোতে বিলাসহুল বাড়ির ওপর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে অল্প কয়েকদিন আগে।
আর সদ্য সাবেক এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের অর্থ ও মানব পাচারের ওপর অনেক প্রতিবেদনের পরও মন্ত্রীদের কেউ কেই তার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কুয়েতের আদালতে দণ্ডিত ও সেখানে আটক না হলে এখনো তার পক্ষে আরো অনেককে পাওয়া যেত।
দুদক গত বছর অর্থ পাচার নিয়ে কিছুটা সক্রিয় হয়েছিলো। কিন্তু এখন আবার চুপচাপ। হাইকোর্ট দুদকের কাছে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও পাচার করা অর্থের পরিমাণ জানতে চাইলেও তারা সেই তালিকা দেয়নি। তালিকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশ এবং এনবিআরকেও বলা হয়েছিলো। তাতেও ফল আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে একটা গোয়েন্দা ইউনিট আছে। কিন্তু তারাও কোনো সুরাহা করতে পারছে না।
দুদক মোট ৬০ ব্যক্তির অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে ১৮টি দেশে চিঠি দিয়েছিলো। তার মধ্যে ৩০ জনের ব্যাপারে তথ্য পায়। তাদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যরাও আছেন। কিন্তু সেই তালিকা ধরে তদন্তের অগ্রগতির খবর পাওয়া যাচেছনা। ১৮ টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর, আরব আমিরাত, অষ্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার নাম রয়েছে।
পানামা পেরারস-এ বিদেশে অফশোর কোম্পানির তালিকায়ও বাংলাদেশের সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশ পেয়েছে। দুদক তদন্তের ঘোষণা দিলেও তার এখন আর কোনো খবর নাই।
এই হাঁকডাক ছাড়া বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা পাচারের অর্থ ফেরত আনার কোনো নজীর নাই। সর্বশেষ মোরশেদ খান ও তার পরিবারের হংকং-এ পাচার করা ৩২১ কোটি টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে দুদক জানায়। ওই টাকার মধ্যে ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনতে হংকং-এর অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট(এমএলএআর) পাঠানে হয়েছে।
এর আগে ২০১২-১৩ সালে সিংগাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকা ফেরত আনে দুদক।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যানাল বাংলাদেশের(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন," আগে যদি পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যায় তাহলে এখন কেন যবেনা? বাংলাদেশ যেমন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী কনভেনশনের সদস্য। যেসব দেশে টাকা পাচার হয় তারাও সদস্য । সরকার চাইলে এই টাকা ফেরত আনতে পারে। তাদের ব্যাপারে তথ্যও জানতে পারে। আমরা বা অন্য কাউকে তারা দেবে না।”
তার মতে," অর্থ পাচারকারীদের তালিকা সরকারের কাছে আছে বা থাকার কথা। দুদক, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, পুলিশ তারা জানবে। তাই সংসদ সদস্যদের কাছে অর্থমন্ত্রীর তালিকা চাওয়া হাস্যকর।”
"আমরা মনে হয় এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে। কারণ যারা অর্থ পাচার করে, রুই কাতলা তারা সরকারেই অংশ বা কোনো না কোনো ভাবে সরকারের সঙ্গে জড়িত। তা না হলে আগে একবার হলেও পাচারের টাকা ফেরত আনা গেলে এখন কেন যাবে না।”
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের কথা হলো, আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত না হলে তাদের তালিকা প্রকাশ বা তাদের পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কোনো সুযোগ নেই। আর অর্থ পাচারের ঘটনা চিহ্নিত করা অত সহজ না। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর পুলিশ সবাই দুদককে সহায়তা করছে। দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম বলেন," আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। কিন্তু আদালতে দোষী প্রমাণ হওয়ার আগে আমরা টাকা ফেরত আনতে পারব না। আর বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়ে যাদের তথ্য পেয়েছি তাদের ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু আইনের কারণে তাদের তালিকা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," সংসদে তারা কোটি কোটি টাকা পাচারের তথ্য কোথায় পেলেন তারাই বলতে পারবেন। আমরা কঠোর নজরদারি করছি।”