বিএনপি’র ‘অসহযোগ আন্দোলন’
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ৩৯ দিন ছিল শুক্রবার৷ আর গত দুই সপ্তাহ ধরে সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বাদে মোট ১০ দিন টানা হরতাল পালন করেছে তারা৷ রবিবার থেকে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে৷
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘অবৈধ, অনির্বাচিত, দখলবাজ আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রশক্তির চূড়ান্ত অপব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের এই জনপদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে৷ অবৈধ সরকারের এহেন শ্বেতসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জনগণ অচিরেই আইন অমান্য ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে৷''
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘ইদানীং আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীরা প্রকাশ্য জনসমাবেশে আন্দোলনকারীদের এনকাউন্টার এবং ক্রসফায়ারে হত্যা করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বড় কর্তারাও প্রকাশ্যে সভা-সমিতি করে ক্রসফায়ারে হত্যার কৃতিত্ব দাবি করে বেড়াচ্ছেন৷ এ সমস্ত বিকৃত মস্তিষ্কের নেতা-মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি গণকারফিউ এবং গণপিটুনিতে নির্ধারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না৷ এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকাশ্য দাম্ভিক ঘোষণা আগামীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে৷''
শনিবার ২০ দলীয় জোট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ শুক্রবার বলেছেন, ‘‘জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সাথে সরকারের কোন আলোচনা হবেনা, তাদের দমন করা হবে৷'' তিনি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে লাভ হবে না৷ সরকার কোনো ভাবেই সন্ত্রাসীদের সাথে আলোচনায় বসবে না৷ জাতিসংঘ এসে সমঝোতা করুক, বিএনপির এমন প্রত্যাশাও পূরণ হবে না৷''
রবিবার থেকে ২০ দলীয় জোটের হরতালসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘টানা অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পোড়ানোর পর আরও কী কঠোর কর্মসূচি দেবেন সেটা মানুষ বুঝতে পেরেছে৷ বিএনপি-জামায়াত আরও বেশি করে মানুষ পোড়ানোর কর্মসূচি দিতে চান৷''
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘বাস, ট্রেন, লঞ্চে আগুন দেয়া হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের জঙ্গি আন্দোলন৷ দেশের মানুষ ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিয়েছে৷''
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘কার সঙ্গে সংলাপ হবে? আমাদের এখন সমস্যা হল পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা৷ সেটা দূর করতে হবে৷ বিএনপি বলছে তারা পেট্রোলবোমা মারছে না৷ তাহলে তো তাদের সঙ্গে সংলাপ করে লাভ নেই৷ তারা যদি মানুষ হত্যার দায় স্বীকার করতো, তাহলে তাদের সঙ্গে সংলাপ করলে সমাধান করা যেত৷ যেহেতু দায় স্বীকার করছে না, তাই তাদের সঙ্গে সংলাপ করে মানুষ পোড়ানো বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ এই সন্ত্রাসীদেরকে আইনি ব্যবস্থা দিয়ে দমন করতে হবে৷ সেটাই করছে সরকার৷''
খাবার সরবরাহে বাধা দেয়ার অভিযোগ
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত তাঁর কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য শুক্রবার দুপুরের খাবার নিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷
বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার অভিযোগ করেন, শুক্রবার দুপুরে একটি ভ্যানে করে বাইরে থেকে দুপুরের খাবার আনা হয়৷ কিন্তু একজন পুলিশ কর্মকর্তা খাবারসহ ভ্যানটিকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন৷
তবে গুলশান থানা পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘বুধবার থেকেই গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের খাবার আনতে বাধা দেয়া হচ্ছে৷''
তবে খালেদা জিয়ার জন্য বাইরে থেকে খাবার আনায় কোন বাধা নেই৷