অসুস্থ তনয়া, মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ নয়
সোমবার রাতে অসুস্থ হলেন আরো এক জুনিয়র ডাক্তার। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতীকী অনশনে সিনিয়ররা।
স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-সহ সব চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়ে রবিবারই ইমেল করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই মর্মেই সংগঠনগুলিকে বৈঠকের কথা জানানো হয়। সোমবার দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ স্বাস্থ্য ভবনে শুরু হয় বৈঠক। বৈঠকে ছিলেন চিকিৎসকদের ১২টি সংগঠনের প্রতিনিধি। প্রতিটি সংগঠন থেকে দুই’জন প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিবের ইস্তফার প্রসঙ্গ তোলেন চিকিৎসকেরা।
হতাশ সিনিয়র চিকিৎসকেরা
বৈঠক থেকে বেরিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন চিকিৎসকেরা। তাদের বক্তব্য, জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি পূরণের বিষয়ে কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়নি সরকার। তাই সরকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর আর্জি জানালেও তা সম্ভব নয় বলেছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা। তাদের কথায়, “থ্রেট কালচারে অভিযুক্তেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেরা স্বাস্থ্য প্রশাসনে বিভিন্ন পদে বসে রয়েছে। পুলিশের ভূমিকা কী, তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।''
দশে সাত
জুনিয়র ডাক্তারদের ১০টি দাবির মধ্যে সাতটি ইতিমধ্যেই মানা হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বাকি তিন দাবির কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি। মুখ্যসচিবের বক্তব্য, “তিন দাবির বিষয়ে সরকারের কাছে সময়সীমা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এগুলির বিষয়ে সময়সীমা দেয়া সম্ভব নয়।”
হাসপাতালে তনয়া
সোমবার অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো আর এক অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তার তনয়া পাঁজাকে। সোমবার সকাল থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবু ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তনয়া। রাতে অনশন মঞ্চের পাশের শৌচালয়ে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ওই জুনিয়র ডাক্তার। তার পরে তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তনয়ার শারীরিক অবস্থা
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, তনয়ার রক্তচাপ কমে ৮৬/৬২-তে নেমে গেছে। সোমবার রাতে কয়েক জন ধরে ধরে তাঁকে মঞ্চের কাছে শৌচালয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানেই তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।
অনশনের ১০ দিন
গত পাঁচ অক্টোবর ধর্মতলায় ১০ দফা দাবিতে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। ছয় অক্টোবর তাদের সঙ্গে অনশনে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন আরও দুই চিকিৎসক। ইতিমধ্যে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিকেত এবং অনুষ্টুপ। রবিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন পুলস্ত্য। সকলেই হাসপাতালে। সোমবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তনয়া।
রাজভবন অভিযান
সোমবার দুপুর একটা থেকে জমায়েত শুরু হয়েছিল ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের সামনে। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি সংহতির বার্তা নিয়ে ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের ভিড় জমেছে ধর্মতলায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তারদের ‘রাজভবন অভিযান’।
সিবিআইয়ে অনাস্থা
সিবিআইয়ে ‘অনাস্থা’-র জন্যই রাজভবন অভিযান, জানালেন দেবাশিস। তিনি বলেন, মূলত সিবিআইয়ের প্রতি অনাস্থার কথাই রাজ্যপালের কাছে তুলে ধরতে চান তাঁরা। তিনি বলেন, “দশ দফা দাবির পাশাপাশি সিবিআইয়ের প্রতিও আমাদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। সেই দিকটি জানানোর জন্য আমরা রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছি।
ধর্মতলা চত্বর
জুনিয়র ডাক্তারদের ‘রাজভবন অভিযান’ শুরু হওয়ার আগে ধর্মতলা চত্বরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখে পুলিশ। জমায়েত বা মিছিল যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে এগোয়, তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন ছিলেন পুলিশকর্মীরা। ধর্মতলা থেকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে রাজভবনের দিকে এগোনোর কথা জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাই যান চলাচলে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য রাস্তার একাংশ ব্যারিকেডও করে রাখা।
নাগরিক সমাজ
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে শামিল হয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। আট থেকে আশি— সব বয়সের মানুষকেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়েছে নাগরিক সমাজের একটি অংশ। বিচারের দাবিতে স্লোগান তুলছেন তারাও। জাতীয় পতাকা হাতেও মিছিলে শামিল হয়েছেন কেউ কেউ।
বর্ধমান থেকে
সুদূর বর্ধমান থেকে এক বৃদ্ধা আসেন প্রতিবাদে শামিল হতে।
রাজ্যপালকে স্মারকলিপি
এরপর রাজভবনের সামনে পৌঁছায় জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল। জুনিয়র ডাক্তারদের ৫-৭ জনের প্রতিনিধি দল ভিতরে যান স্মারকলিপি জমা দিতে। এর আগে জুনিয়র ডাক্তারেরা ইমেল করেছিলেন রাজ্যপালকে। কিন্তু তার কোনও জবাব না পাওয়ায় রাজভবনে গিয়ে নিজেদের বক্তব্যকে স্মারকলিপি আকারে দিয়ে আসতে চান জুনিয়র ডাক্তারেরা।
কথা হয়নি
বৈঠক শেষে রাজভবন থেকে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানালেন, রাজ্যপালের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছে। কিন্তু কথা হয়নি। তারা শুধু স্মারকলিপিটুকুই হাতে দিতে পেরেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘আমরা ১২ জন প্রতিনিধি রাজভবনে এসেছিলাম। প্রথমে জানানো হয়, রাজ্যপাল বিশ্রাম নিচ্ছেন। পরে পাঁচ জন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তার হাতে ডেপুটেশন দিয়েছি।’’