অস্ট্রেলিয়াকে হারালো বাংলাদেশ
১১ নভেম্বর ২০১৫বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি লেগের ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ফুটবল দল৷ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-র সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ সুতরাং জিম্বাবোয়ে দল এসে নিশ্চিন্তে ক্রিকেট খেলছে, আশা করা যায় অস্ট্রেলিয়াও এসে নিরাপদে ফুটবলও খেলবে৷
এ সময়ে কিন্তু জিম্বাবোয়ে দলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল না৷ স্বাভাবিক অবস্থায় ওদের সঙ্গে সিরিজটা হতো জানুয়ারিতে৷ অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া না আসার কারণেই এগিয়ে আনতে হয় বাংলাদেশ-জিম্বাবোয়ে সিরিজ৷ বাংলাদেশে দু'জন বিদেশি নাগরিক এবং ব্লগার, প্রকাশক ও পুলিশকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করলেও দেশের খেলার মাঠগুলো যে নিরাপদ তা দেখিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার ছিল বাংলাদেশের৷ সেই অঙ্গীকার পূরণে জিম্বাবোয়ে সহয়োগিতার হাত বাড়ানোয় বাংলাদেশের মানুষ জিম্বাবোয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ৷ সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে ক্রিকেট সাকিব আল হাসানও বলেছেন, ‘‘আমরা কখনোই মনে করি না, বাংলাদেশে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা আছে৷ বিশেষ করে ক্রিকেটে তো নিরাপত্তার কোনো সমস্যা আমাদের ছিল না বা কখনো হওয়ার সম্ভাবনাও নেই৷ আমি খুশি যে জিম্বাবোয়ে আমাদের এখানে এসেছে৷''
জিম্বাবোয়ের সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ হওয়ার পথে৷ আজ (বুধবার) জিতলে আরেকবার হোয়াইটওয়াশের মহানন্দে ভাসবে বাংলাদেশ৷ সোমবার দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারীদের ৫৮ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল মাশরাফির দল৷ এখন শুধু হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য পূরণের অপেক্ষা৷
জিম্বাবোয়ে সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ৷ ওয়ানডেতে ১০ বছর আগেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল টাইগাররা৷
এবারের জয়টা অবশ্য মাঠের বাইরের৷ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে ক্রিকেট দল পাঠায়নি অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি লেগ খেলতে ফুটবল দল ঠিকই পাঠাচ্ছে৷ কী অদ্ভুত, তাই না!
বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য এবং আচরণে অনেক বৈপরিত্য দেখি৷ জঙ্গি আর ইসলামিক স্টেট বা আইএস নিয়ে বৈপরিত্যপূর্ণ বক্তব্যই এখন মনে আসছে৷ এক সময় বাংলাদেশে শুনেছিলাম ‘বাংলা ভাই নেই, বাংলা ভাই নেই' ঘোষণা, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীকে তখন বলতে শুনেছি, ‘দেশে বাংলা ভাই বলে কেউ নেই, বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি'৷ বাংলা ভাই কিন্তু ফাঁসিতে ঝুলে প্রমাণ করে গেছেন সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশে তিনি সত্যিই ছিলেন!
বর্তমান সরকার পড়েছে ‘আইএস আছে, আইএস নেই'-এর ধাঁধায়৷ কেউ বলছেন আছে, কেউ বলছেন নেই৷ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘বাংলাদেশে আইএস আছে' এটা প্রমাণ করে বিশেষ ফায়দা তুলতে চায় বিদেশি কোনো শক্তি৷ বাংলাদেশে আইএস আছে কি নেই তা এখনো প্রমাণ সাপেক্ষ৷ তবে নানা নামে-রূপে জঙ্গিরা যে আছে তা তো প্রমাণিত৷ দেশে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় বা শঙ্কার কারণও নিশ্চয়ই আছে৷ না থাকলে দু'জন বিদেশি নাগরিক এভাবে নিহত হবেন কেন, বইমেলায়, রাস্তায়, ঘরের ভেতরে এমনকি পুলিশ চেকপোস্টেও নিহত হবে কেন মানুষ!
তবে সব কিছুর পরও দেশে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা এতটা নয় যে হুট করে অস্ট্রেলিয়া সফরই বাতিল করে দেবে৷ অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল পাঠাচ্ছে জেনে তাই একজনের প্রশ্ন, ‘‘হায়রে অস্ট্রেলিয়া, এখন তো বাধ্য হয়ে ফুটবল দল বাংলাদেশে আসছে৷ নাহলে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোয় পয়েন্ট হারাবে যে! এখন নিরাপত্তা উদ্বেগ কোথায় গেল?''
অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফম্যান্সে ভড়কে গেছে অস্ট্রেলিয়া৷ তাই অবধারিত হার এড়ানোর কৌশল হিসেবেই নাকি নিরাপত্তার জুজুর কথা বলেছে!
তা বলে কী লাভ হলো? জিম্বাবোয়ে এসে তো দেখিয়ে দিল ক্রিকেট খেলার মতো নিরাপত্তা আছে৷ তখনই বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার ফলাফল হয়ে যায় ১-০! অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল দলও নিরাপদে খেলে গেলে ফলাফল নিশ্চয়ই ২-০ হবে!
নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল পাঠায়নি৷ কিন্তু এবার তাদের ফুটবল দল আসছে৷ এতে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নটা কি হাস্যকর হয়ে গেল না?