অ্যাপেল ও মাইক্রোসফট - ক্রেতারা কোনদিকে ঝুঁকছেন?
২৯ জানুয়ারি ২০১০অ্যাপেলের অনুগত ভক্তরা
অ্যাপেলের তৈরি কম্পিউটার বা অন্যান্য গ্যাজেট যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা সাধারণত কোন বিকল্পের কথা শুনতেই চান না৷ একান্ত অনুগত ভক্ত হিসেবে তাঁরা নিজেদের জগতেই বিচরণ করেন৷ সংখ্যায় অপেক্ষাকৃত কম হলেও মাইক্রোসফট ব্যবহারকারীদের থেকে এঁরা নিজেদের পৃথক করে রেখেছেন৷ যাঁরা পেশার কারণে গ্রাফিক্স, অডিও, ভিডিও নিয়ে কাজ করেন, বা যাঁরা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত – তাঁদের মধ্যে অ্যাপেলের প্রতি আনুগত্যের হার সত্যি চোখে পড়ার মত৷ উচ্চ মানের সফটওয়্যার তাঁদের কাজের জন্য প্রায় অপরিহার্য বলা চলে৷ ফলে অ্যাপেলের কম্পিউটার বা ডিভাইসের দাম কিছুটা বেশী হলেও তাঁরা পিছপা হন না৷
অ্যাপেলের বাইরের জগত
কিন্তু সংখ্যার বিচারে মাইক্রোসফটের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিঃসন্দেহে বেশী৷ প্রযুক্তি জগতের অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, মাইক্রোসফট ও অ্যাপেলের মধ্যে যে রেষারেষি, তার একটা চারিত্রিক দিক রয়েছে৷ যেমন ‘আইপ্যাড'এর কথাই ধরা যাক৷ মৌলিক অর্থে ‘আইপ্যাড'এর কোন নতুনত্ব নেই৷ বেশ কয়েক বছর আগেই বাজারে এসেছে ‘ট্যাবলেট পিসি' নামের কম্পিউটার৷ মাইক্রোসফট তার অপারেটিং সিস্টেমও ‘ট্যাবলেট পিসি'র জন্য উপযুক্ত করে চলেছে৷ কীবোর্ড বা মাউস নয় – সরাসরি ‘টাচস্ক্রিন' পর্দার উপর বিশেষ কলম বুলিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার স্বাদ ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে ‘ট্যাবলেট পিসি'র সাহায্যে৷ ‘টাচস্ক্রিন' প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে মোবাইল টেলিফোনের ক্ষেত্রেও৷ প্রায় বোতামহীন এই সব মোবাইল ডিভাইসের পর্দায় কলম বুলিয়ে ডায়াল করা যায় নম্বর, পড়ে নেওয়া যায় ই-মেল, ঘুরে আসা যায় ইন্টারনেটের দুনিয়ায়ও৷
সাফল্যের রহস্য
ডিজিট্যাল দুনিয়ায় যে সব প্রবণতা ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, সেই সব প্রবণতাকে আরও সহজ, উন্নত ও ব্যবহারকারীর জন্য আরও উপযুক্ত করার মধ্যেই রয়েছে অ্যাপেলের আসল কৃতিত্ব৷ যেমন বিশেষ কলমের সাহায্যে যে টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়, তার উপর শুধু আঙুল বুলিয়ে কাজ সারার সহজ পদ্ধতি দেখা যায় আই-ফোনে৷ উইন্ডোস কম্পিউটারে যেমন মেনু থেকে ধাপে ধাপে এগোনোর জটিল পদ্ধতি রয়েছে, তার তোয়াক্কা না করে আই-ফোন ডিভাইসে রয়েছে আলাদা আলাদা আইকন, যেগুলির একেবারে নিজস্ব সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ ফলে ব্যবহারকারীকে বিশেষ ভাবনা-চিন্তা করতে হয় না৷ সঠিক আইকনে আঙুল বোলালেই কাজ সেরে নেওয়া যায়৷ বইয়ের পাতা ওল্টানোর মত পর্দার বিভিন্ন স্তরেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে অ্যাপেল'এর বিভিন্ন ডিভাইসে৷
মৌলিক পার্থক্য
মনে রাখতে হবে, মাইক্রোসফট কোম্পানি মূলত অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যারের জগতেই বিচরণ করে – অন্য কোম্পানির ডিভাইস বা হার্ডওয়্যারে তা ব্যবহার করা হয়৷ ফলে উপযুক্ত ড্রাইভার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে পরখ করে নিতে হয়, যে হার্ডওয়্যার সফটওয়্যারের উপযুক্ত কি না৷ অন্যদিকে অ্যাপেল এক সার্বিক সমাধানসূত্রে বিশ্বাসী৷ কম্পিউটার, আই-পড, আই-ফোন, আই-প্যাড – সবই অ্যাপেলের নিজস্ব উৎপাদন৷ ব্যবহারকারী যাতে সেরা অভিজ্ঞতা পেতে পারেন, তার দিকেই সবচেয়ে বেশী নজর দেয় অ্যাপেল৷ এমনকি অ্যাপেল কোম্পানির কোন ডিভাইসের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করতে হলেও প্রয়োজনীয় লাইসেন্স লাগে – যে কোন সফটওয়্যার চালানো যায় না৷ অন্যদিকে উইন্ডোস ব্যবহারকারীরা দিব্যি যে কোন সূত্র থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে কম্পিউটারে সরাসরি চালাতে পারেন – বা নিজেরাই ছোটখাটো সফটওয়্যার তৈরি করে নিতে পারেন৷ যদিও এক্ষেত্রে ঝুঁকিও কম থাকে না৷
ডিজিট্যাল প্রযুক্তির এই বাজারের প্রবণতাগুলি কিন্তু একমুখী নয়৷ অ্যাপেলের অনেক ডিভাইস বা সফটওয়্যারের অনেক গুণাগুণ দেখা যায় মাইক্রোসফট বা অন্যান্য অনেক কোম্পানির ডিভাইসের ক্ষেত্রেও৷ যেমন আই-ফোনের অনেক গুণাগুণ ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে একাধিক মোবাইল ডিভাইসের মধ্যে৷ তাছাড়া বাইরের সফটওয়্যার ব্যবহার করার সুযোগ থাকায় অনেকে আই-ফোনের বদলে এই সব বিকল্পের দিকেই ঝুঁকছেন৷ অতএব যে কোন ডিভাইস কেনার সময়ে আগেই ভেবে নিন, আপনি আসলে কী চান? নির্বিঘ্নে শুধু কাজ করতে চান এবং তার জন্য বাড়তি ব্যয় করতেও আপত্তি নেই – নাকি কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে সফটওয়্যারের প্রায় সীমাহীন জগতের সর্বত্র বিরাজ করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে চান?
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক