অ্যামনেস্টি যৌনকর্মী ও দালালদের বৈধ করতে চায়
১২ আগস্ট ২০১৫যৌন ব্যবসাকে পুরোপুরি ‘ডিক্রিমিনালাইজ' করা, অর্থাৎ অপরাধ হিসেবে গণ্য না করার সপক্ষে অ্যামনেস্টি৷ মঙ্গলবার ডাবলিনের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল মিটিং-এ ৭০টি দেশ থেকে আগত ৪০০ প্রতিনিধির এক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দৃশ্যত প্রস্তাবটি সমর্থন করেন, যদিও ভোটাভুটির কোনো খুঁটিনাটি দেওয়া হয়নি৷
অ্যামনেস্টি বিভিন্ন যৌনকর্মী সংগঠন ও গোষ্ঠী, এইচআইভি/এইডস ত্রাণকর্মী এবং মানুষ পাচার বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে দু'বছর ধরে কথাবার্তা বলার পর এই সিদ্ধান্তে আসে যে, যৌনকর্মীদের মানবাধিকার রক্ষার শ্রেষ্ঠ পন্থা হলো দালালি ও বেশ্যালয়ের মালিকানা সহ সব ধরনের যৌন পরিষেবাকে বৈধ ঘোষণা করা৷ এর ফলে যৌনকর্মীদের মারধোর, যৌন নির্যাতন, অকারণে গ্রেপ্তার, ব্ল্যাকমেল, নারী পাচার ও জোর করে এইডস পরীক্ষার ঘটনা কমবে, বলে অ্যামনেস্টির ধারণা৷ কাজেই মঙ্গলবার অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেট্টি একটি ‘‘ঐতিহাসিক দিনের'' কথা বলেন৷
তবে ডাবলিনের এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার আগে থেকেই অ্যামনেস্টির অভিপ্রায় জ্ঞাত ছিল এবং অপরাপর বহু নারী অধিকার গোষ্ঠী সমালেচনায় মুখর হয়ে উঠেছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ‘কোয়েলিশন এগেইনস্ট ট্র্যাফিকিং ইন উইমেন' বা নারী পাচার বিরোধী জোটের কার্যনির্বাহী পরিচালক তাইনা বিয়্যাঁ-এইম-এর মতে যৌনকর্ম সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ অপরাধের তালিকা থেকে অপসারণ করার অর্থ, দালালদের ‘‘বিজনেসমেন''-এ পরিণত করা, যা-তে তারা নির্বিচারে অসহায়দের ‘‘বেচতে'' পারে৷
ডাবলিনের ভোটের আগেই নারী পাচার বিরোধী জোট একটি খোলাচিঠিতে সাবধান করে দিয়েছিল যে, এর ফলে অ্যামনেস্টির ভাবমূর্তি ‘‘বিশেষভাবে মলিন'' হবে৷ সিএটিডাব্লিউ-এর অনলাইন পিটিশনে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার স্বাক্ষর পড়েছে৷ যারা স্বাক্ষর করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মেরিল স্ট্রিপ, কেট উইন্সলেট এবং এমা থমসন-এর মতো হলিউড তারকা৷
নারী অধিকার গোষ্ঠী ‘ইকোয়ালিটি নাউ'-এর নারী পাচার বিরোধী কর্মসূচির পরিচালক এশোহে আঘাটিসে বলেছেন: ‘‘বাণিজ্যিক যৌনসম্ভোগের চাহিদা বাড়ার ফলেই নারী পাচার বাড়ে৷ তখন হঠাৎ নীতি বদলে বলতে পারো না যে, যারা সেই চাহিদা বাড়াচ্ছে, চলো তাদেরই সুরক্ষা দেওয়া যাক৷'' তাইনা বিয়্যাঁ-এইম-ও বলেছিলেন: শোষিতদের রক্ষা করার জন্য শোষণকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না৷ অপরদিকে অ্যামনেস্টি বলছে, ‘ফোর্সড লেবার' বা বেগার খাটানো কিংবা যৌন শোষণের জন্য নারী পাচার ইত্যাদি ব্যাপারে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি৷
বিষয়টি এমনই বিতর্কিত যে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইনকানুন চালু রয়েছে৷ আইসল্যান্ড, সুইডেন এবং নরওয়েতে যৌনকর্মীদের পরিবর্তে তাদের গ্রাহকদেরই অপরাধী হিসেবে দেখা হয় – সম্প্রতি ফ্রান্সও যে পন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করছে৷ ইউরোপের বহু দেশে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ৷ অপরদিকে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এবং আরো কয়েকটি দেশে তা সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)