অ্যামাজনের সাই-ফাই সুপারমার্কেটে একদিন
৬ এপ্রিল ২০২১মার্কেটে ঢোকার সময় ক্রেতাকে তার স্মার্টফোনে থাকা অ্যামাজন অ্যাপ দিয়ে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করতে হয়৷ তারপর যা পছন্দ, তা নিয়ে বের হয়ে যাওয়া যায়৷ সেটি কেনার জন্য ক্রেতাকে লাইনে দাঁড়াতে হয় না৷ টাকা বা কার্ড বের করে পেমেন্ট করতে হয়না৷ কারণ স্ক্যান করে বাজারে ঢোকার পর ক্রেতা তাক থেকে যা নেবেন, সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপের ভার্চুয়াল কার্টে যুক্ত হয়ে যায়৷ ক্রেতা মার্কেট থেকে বের হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ থেকে টাকা কেটে রাখা হয়৷
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অ্যামাজন গো' নামে এমন সুপারমার্কেট চালু হয়েছিল৷ সেদেশে এমন ২০টি স্টোর রয়েছে৷ একই প্রযুক্তি চালু করে পশ্চিম লন্ডনের ইলিং এলাকায় ইউরোপের প্রথম ক্যাশিয়ারহীন সুপারমার্কেট চালু করেছে অ্যামাজন৷
ডয়চে ভেলের মারি সিনার অভিজ্ঞতা
প্রথম দেখায় এটা আমার কাছে লন্ডনের যে-কোনো ছোট সুপারমার্কেটের মতো মনে হয়েছে৷ কিন্তু ছাদের দিকে তাকালে পার্থক্যটা চোখে পড়ে৷ ক্যামেরা আর সেন্সর দিয়ে স্টোরের প্রতিটি ইঞ্চির উপর নজর রাখা হচ্ছে৷
যে পণ্যগুলো আমি আমার অ্যামাজন ফ্রেশ ব্যাগে রাখছি সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভার্চুয়াল কার্টে যোগ হয়ে যাচ্ছে৷ আমি কিছু নেয়ার সময় ক্যামেরাগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এই আশায় যে, নব্বইয়ের দশকে সাই-ফাই মুভিতে যেমনটা দেখা যেত তেমনিভাবে আমার প্রতিটা নড়াচড়ার সঙ্গে হয়ত কিছু ক্যামেরাও নড়াচড়া করবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷
ক্রেতারা তাক থেকে কী তুলছেন বা নিচ্ছেন সেটা কম্পিউটার ভিশন, ডেপথ সেন্সর ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি নজর রাখছে৷
এই সুপারমার্কেট থেকে সংগ্রহ করা ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্য ৩০ দিন পর্যন্ত অ্যাপে সংরক্ষণ করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছে অ্যামাজন৷
অবশ্য যুক্তরাজ্যের ক্রেতা অধিকার সংগঠনগুলো অ্যামাজনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের এই বিষয়টির সমালোচনা করছে৷ ওপেন রাইটস গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জিম কিলক বলছেন, ‘‘আমাদের আরও তথ্য জানতে হবে এটা (অ্যাপে তথ্য সংরক্ষণের বিষয়টি) দিয়ে আসলে বাস্তবে কী বোঝায়৷''
লন্ডনে সুপারমার্কেট চালুর সঙ্গে অ্যামাজন নিজ ব্র্যান্ডের কিছু পণ্যও চালু করেছে৷ যেমন অ্যামাজন আলুর ভর্তা, অ্যামাজন কিওরড হ্যাম, অ্যামাজন হলুদ গোলাপ ইত্যাদি৷
অ্যামাজনের সুপারমার্কেটের পানীয় সেকশনে গিয়ে দুজন মানুষের দেখা পেয়ে আমি অবাক হয়েছিলাম৷ একটি ওয়াইনের বোতল নেয়ার পর ঐ দুজনের একজন আমার বয়স নিশ্চিত হতে পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছিল৷
বাজার শেষে বের হওয়ার সময় আমার মনে হয়েছিল হয়ত কোনো অ্যালার্ম বেজে উঠবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ আরেক ক্রেতা ডিয়ানা স্পার্কস বলছিলেন, ‘‘এটা কেমন যেন অদ্ভুত মনে হয়েছিল৷ আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আমি কিছু চুরি করেছি৷''
মার্কেটে থাকা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা স্টোরে এত ক্যামেরার উপস্থিতিতে বিচলিত নন৷ যেমন এলিজাবেথ বেলুর বলছিলেন, ‘‘আমি জানি লন্ডনে আপনি যেখানেই যান, সেখানেই ক্যামেরা আছে৷ তাই আমি আর এ নিয়ে ভাবিনা৷'' বেলুর বাজার করে অবাকই হয়েছেন৷ বলছেন, ‘‘এটা দ্রুত ও সুবিধাজনক এক পন্থা৷ বাজারে ঢুকে ব্যাগে কিছু তুলে বের হয়ে যেতে পারেন৷ আপনাকে কোনো লাইনে অপেক্ষা করতে হয় না৷''
মারি সিনা/জেডএইচ