যুক্তরাষ্ট্র কি কুর্দিদের পাশে?
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হচ্ছে৷ উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আফরিনে আরো সৈন্য পাঠিয়েছে তুরস্ক৷ তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান জানিয়েছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান জারি থাকবে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, জঙ্গি কারা?
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদেরতেমন কোনো উপস্থিতি নেই৷ অঞ্চলটি মূলত কুর্দি বাহিনীর দখলে৷ সিরিয়া, ইরান এবং ইরাকের সীমান্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার লড়াই চালাচ্ছে কুর্দিরা৷ তাদের লক্ষ্য অবিভক্ত কুর্দিস্তান তৈরি করা৷ দীর্ঘদিন ধরে এই কুর্দি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে তুরস্ক, ইরাক এবং ইরানের রাষ্ট্রশক্তির৷ বহু ভয়াবহ রক্তক্ষয়ের ঘটনাও ঘটেছে৷ কিন্তু মনে রাখা দরকার, দীর্ঘ সেই সংঘর্ষে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর মতো শক্তির উপস্থিতি ছিল না৷ কুর্দিদের সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তির লড়াইও একটি আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবেই দেখতো বিশ্বের অন্যান্য দেশ৷ পরিস্থিতি বদলে যায়, সিরিয়া এবং ইরাকের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল আইএস জঙ্গিরা দখল করে নেওয়ার পর৷ অ্যামেরিকাসহ ন্যাটোর বিভিন্ন দেশ আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে৷ বস্তুত, সেই লড়াইয়ে অ্যামেরিকা কুর্দি বিদ্রোহীদেরও সাহায্য করে৷ কারণ, কুর্দিরা আইএস-কে তাদের অন্যতম শত্রু বলে মনে করে৷ সিরিয়ার মাটিতে আইএস-কে আটকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তথাকথিত সশস্ত্র কুর্দিরা৷ ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা লড়াই চালিয়েছিল৷ এখনো সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে ন্যাটোর তৈরি ক্যাম্পে কুর্দিরা থাকছেন এবং লড়াই করছেন৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই তুরস্ক আফরিনে সৈন্য পাঠানোয় এবং নতুন করে যুদ্ধ শুরু করায় কুর্দিরা প্রশ্ন তুলেছে, কেন এই অবস্থায় অ্যামেরিকা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না? কেন সৈন্য পাঠিয়ে কুর্দিদের সাহায্য করছে না অ্যামেরিকা?
কথায় বলে, ভালোবাসা এবং যুদ্ধে ন্যায় বলে কিছু হয় না৷ এবং সে কারণেই রাজনীতি এবং কূটনীতি এত জটিল বিষয়৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির যুদ্ধে তুরস্ক ন্যাটোর একটি অংশ৷ আবার কুর্দরাও সেখানে ন্যাটোকে সাহায্য করেছে৷ কিন্তু কুর্দদের সঙ্গে তুরস্কের সংঘর্ষ ঐতিহাসিক৷ ফলে আইএস-এর শক্তি খানিক কমে যাওয়ার পর এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছে এর্দোয়ান সরকার৷ যুদ্ধের আবহে কুর্দিদেরকেও তারা সবক শেখাতে চাইছে৷ আর সেখানেই কুর্দিদের আপত্তি৷ তাদের বক্তব্য, পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে তুরস্ক৷ ন্যাটো এবং বিশেষ করে অ্যামেরিকা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না৷
বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে হলে ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরানো দরকার৷ কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তুরস্ক বরাবরই আইএস-এর চেয়ে কুর্দিদের অনেক বড় হুমকি বলে মনে করে৷ আইএস যখন সিরিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, সেই সময় গোপনে তুরস্ক তাদের অস্ত্র সহায়তাও দিয়েছিল৷ বস্তুত, সেই সময় তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে বেশ কয়েকটি অস্ত্র বোঝাই ট্রাক উদ্ধার হয়েছিল৷ ট্রাকের চালক জানিয়েছিলেন, তুরস্ক সরকার ওই অস্ত্র সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য তাঁকে বরাত দিয়েছিল৷ কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ওই চালক বেপাত্তা হয়ে যান৷ বিষয়টিও ধামাচাপা পড়ে যায়৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, পুরনো সেসব অভিযোগই আবার নতুন করে তুলতে শুরু করেছে কুর্দি আন্দোলনকারীরা৷ তাদের বক্তব্য, আইএস-এর উগ্র মৌলবাদী আক্রমণকে তারা প্রতিহত করেছে৷ সিরিয়ায় আইএস-এর শক্তি হ্রাস পেয়েছে৷ কিন্তু তাদের সেই সংগ্রামকে কেউ মান্যতা দিচ্ছে না৷ সেই নিরিখেই অ্যামেরিকাসহ ন্যাটো বাহিনীকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন করেছে কুর্দরা৷
অ্যামেরিকা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে৷ ন্যাটোর অন্যতম রাষ্ট্রশক্তি তুরস্কের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠালে অ্যামেরিকাকে জবাবদিহি করতে হবে৷ কিন্তু প্রকাশ্যে তুরস্কের অভিযানের সমালোচনা করেছে তারা৷ বস্তুত, বিশ্বের অনেক দেশই এর্দোয়ানের এই অভিযানের সমালোচনা করেছে৷ কিন্তু তুরস্ক তাতে পিছু হটবে, এমন সম্ভাবনা এখনো তৈরি হয়নি৷ অন্যদিকে, অ্যামেরিকা ঘোষণা করেছে, সে দেশে বসবাসকারী ৭ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আরো ১৮ মাস থাকতে দেওয়া হবে৷ এবং তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷
যদিও সমস্যা অন্যদিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে৷ এর্দোয়ান জানিয়েছেন, আফরিনেরপর তাঁদের লক্ষ্য মানবিজ৷ সিরিয়ার এই অঞ্চলে ন্যাটোর ক্যাম্প আছে৷ এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷ কুর্দি আন্দোলনকারীরাও সেখানে উপস্থিত৷ এর্দোয়ান যদি সেই ক্যাম্পে হামলা চালান, তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন৷ কুর্দিদের ধারণা, মানবিজ আক্রান্ত হলে অ্যামেরিকা সরাসরি তাদের পাশে দাঁড়াবে৷
এসজি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)