ইউরোপকে ইরানের আল্টিমেটাম
১৪ মে ২০১৮মার্কিন প্রশাসন একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটানোর দায়িত্ব পুরোপুরি ইউরোপের উপর চাপিয়ে দিলো ইরান৷ তাদের দাবি, ভবিষ্যতেও পরমাণু চুক্তি কার্যকর হবে কিনা, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ৬০ দিনের মধ্যে তা জানাতে হবে৷ জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন অবশ্য এর জন্য ৯০ দিন সময় চেয়েছে৷ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি রবিবার বলেছেন, অ্যামেরিকার পদক্ষেপের ফলে রাজনৈতিক নৈতিকতা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং কূটনৈতিক সমাধানসূত্রের সমাপ্তির সংকেত পাওয়া যাচ্ছে৷ এবার বাকি ৫ সাক্ষরকারী দেশ, অর্থাৎ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া পরমাণু চুক্তি রক্ষা করতে পারে৷ ইরান চুক্তির শর্ত মেনে চলবে কিনা, সেটা তার উপরই নির্ভর করবে৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইইউ ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবার কথা৷
ওয়াশিংটনকে ছাড়াই পরমাণু চুক্তি কার্যকর করার পথে একটি বাধা ইউরোপকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে৷ মার্কিন প্রশাসন একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে৷ কিন্তু ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের দায়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিকেও সেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনলে বড় সংকট দেখা দিতে পারে৷ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না৷ তবে তাঁর মতে, ইউরোপের কিছু দেশ ইরানের প্রশ্নে অ্যামেরিকার পাশে দাঁড়াতে পারে৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অবশ্য সংঘাতের বদলে ইউরোপের সঙ্গে বোঝাপড়ার আশার কথা বলেছেন৷ তাঁর মতে, ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে সংকট কাটানো সম্ভব হতে পারে৷
রবিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে টেলিফোনে ইরানের প্রেসিডেন্ট রোহানিকে পরমাণু চুক্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ইউরোপের আন্তরিকতার আশ্বাস দেন৷ এই চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য তিনি রোহানির প্রশংসাও করেন৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জরিফ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে তিন দিনের মধ্যে বেইজিং, মস্কো ও ব্রাসেলস সফর করছেন৷ পরমাণু চুক্তির অবশিষ্ট সাক্ষরকারী দেশগুলির মধ্যে ভবিষ্যতে স্পষ্ট বোঝাপড়ার আশা করছেন তিনি৷ বেইজিং পৌঁছে তিনি অবশ্য মনে করিয়ে দেন যে, ইরান সব রকম বিকল্পের জন্য প্রস্তুত৷ বেইজিং থেকে মস্কো যাবার আগে তিনি এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেন এবং বড় আকারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হুমকি দেন৷
ইরানের সরকার এখনো কূটনৈতিক পথে বর্তমান সংকট সমাধানের চেষ্টা চালালেও দেশের বাকি ক্ষমতাকেন্দ্রগুলিতে কট্টরপন্থিরা এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ রেভোলিউশনারি গার্ডস বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলি জাফারি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে ইরান আর পশ্চিমা জগতের উপর আস্থা রাথতে পারে না৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকার চাপের মুখে ইউরোপ নতি স্বীকার করবে বলে তিনি মনে করেন৷ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইও গত সপ্তাহে ইউরোপের ক্ষমতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)