অ্যামেরিকায় মৃত্যু ছাড়ালো তিন হাজার
৩১ মার্চ ২০২০পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পরে দেশের মানুষকে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তাঁর ঘোষণা,''সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের যে নিয়ম প্রশাসন চালু করেছে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। নইলে করোনার সংক্রমণ রোখা যাবে না।'' প্রেসিডেন্ট যখন এ নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৩ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, চীনে মোট আক্রান্তের দ্বিগুণ। বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার জনের। বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অ্যামেরিকায়, তাতে এক থেকে দুই লাখ পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে।
সপ্তাহ দেড়েক আগেও কোভিড-১৯ কে 'চীনা ভাইরাস' বলে ঠাট্টা করেছেন ট্রাম্প। একের পর এক টুইটে লিখেছেন, করোনা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে। অ্যামেরিকায় এর চেয়ে বেশি লোক সাধারণ ফ্লু-তে মারা যান। ফলে করোনাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। একাধিকবার বলেছেন, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই অ্যামেরিকায় জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সেই ট্রাম্পই এতদিনে বুঝতে পারছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবু প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্ট এখনও কি ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে পারছেন? পারলে, বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো গোটা অ্যামেরিকায় লকডাউন ঘোষণা করছেন না কেন? যদিও মার্কিন প্রশাসনের দাবি, সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা না হলেও, সামাজিক যে বিধি চালু হয়েছে, তা লকডাউনের মতোই। এরই মধ্যে সোমবার পেন্টাগন জানিয়েছে অ্যামেরিকার মাটিতে এই প্রথম করোনায় কোনও সেনার মৃত্যু হল। নিহত সেনা নিউ জার্সির সামরিক ক্যাম্পে থাকতেন। আশঙ্কা, তাঁর মাধ্যমে ওই সেনা ছাউনিতে আরও অনেকের করোনা ছড়িয়ে থাকতে পারে।
এ দিকে ইউরোপের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। আশার কথা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সোমবারই ইটালিতে সব চেয়ে কম করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। যদিও সেই সংখ্যাটিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক, চার হাজার ৫০। তবু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা বৃদ্ধির পরে এই প্রথম ইটালিতে সংক্রমণের সংখ্যা সামান্য হলেও কমল, এটা স্বস্তির কথা। তবে মৃত্যুর হার কমেনি। সোমবার সেখানে মৃত্যু হয়েছে আরও ৮১২ জনের। যার জেরে মোট মৃত্যু পৌঁছে গেল ১১ হাজার ৫৯১-এ।
পিছিয়ে নেই স্পেনও। সেখানে সোমবার মৃত্যু হয়েছে ৮০০ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা সাত হাজার ৩৪০। ইটালির পরে মৃত্যুর হারে স্পেনই এখনও পর্যন্ত বিশ্বে দ্বিতীয়। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সমস্ত সংখ্যাই কিছুদিনের মধ্যে ছাড়িয়ে যাবে অ্যামেরিকা।
পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়েছে ইরানেও। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষের। আক্রান্ত অসংখ্য। যদিও ইরান সরকার এখনও করোনার ঠিক তথ্য জানাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। দেশের মানুষই সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলছেন। একই সঙ্গে কেন তাঁদের ওপর থেকে অ্যামেরিকা এখনও নিষেধাজ্ঞা সরাচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে জাপানেও করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে জটিল হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনও প্রশাসনের হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়নি। তারই মধ্যে নতুন করে দেশের সরকার নাগরিকদের জন্য অ্যাডভাইসারি বা নির্দেশ জারি করেছে। বলা হয়েছে, আপাতত ৭৩টি দেশে যেতে পারবেন না দেশের মানুষ। অ্যামেরিকা, ইউরোপ সহ এশিয়ার বহু দেশের নাম সেখানে আছে। একই সঙ্গে সোমবার অলিম্পিকের নতুন দিন ঘোষণা করেছে জাপান। আগামী বছরের ২৩ জুলাই। এ বছরেই জাপানে অলিম্পিক শুরু হওয়ার কথা ছিল। গ্রিস থেকে মশালও চলে এসেছে সূর্যোদয়ের দেশে। তবে গোটা বিশ্বের করোনা পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে অলিম্পিক পিছিয়ে দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল জাপান এবং অলিম্পিক কমিটি। সোমবার নতুন দিন ঘোষণা হল।
ভারতীয় উপমহাদেশেও করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে। ভারতে বসবাসকারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক আধিকারিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বিশ্বের এই অংশে আক্রান্তের ঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখনও ঠিক ভাবে টেস্ট হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও ভারতে আক্রান্ত পৌঁছে গিয়েছে তেরোশতে। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছে কমিউনিটি বা গোষ্ঠীর ভিতরে। পাকিস্তানের পরিস্থিতিও একই রকম। সেখানেও দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। বাংলাদেশে ঠিক ভাবে টেস্টই হচ্ছে না বলে বার বার অভিযোগ উঠছে। এ দিকে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ৮৪ হাজার। সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৬৫ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ জনের।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)