‘ইরাককে আইএস-এর মোকাবিলা করতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে'
৫ মার্চ ২০১৫টিকরিটে আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা যাবে কিনা, তা বস্তুত নির্ধারিত হবে বাগদাদে৷ শুধুমাত্র রাজধানীতেই দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে পারবে৷ শুধুমাত্র সেখানেই ইরাক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, ইরাক কি হতে চায়: তিনটি সম্প্রদায় ও জাতিগত গোষ্ঠীর একটি এলাকা, যাদের একমাত্র যোগসূত্র হলো তাদের যৌথ সীমান্ত৷
নাকি সুন্নি, শিয়া এবং কুর্দরা সক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা পরস্পরের সঙ্গে একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাস করবে, রাষ্ট্রের যৌথ প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বীকৃতি দেবে এবং সম্মান করে চলবে?
নাকি তারা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতিগত সত্তার সংকীর্ণ সীমানার মধ্যে বেঁচে থাকতে চায়, সামনে এক অজানা, সম্ভবত অন্ধকার ভবিষ্যৎ থাকা সত্ত্বেও?
ইরাক জাতিধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে একটি সমাজ গড়ে তুলতে চায় কিনা, তা নির্ধারিত হবে বাগদাদ সংসদে৷
ক্রমশ প্রকাশ্য
বাগদাদ থেকে টিকরিট অভিমুখে যে বার্তা পাঠানো হবে, তা সৈন্যদের মনোবলের উপর একটা বুনিয়াদি প্রভাব ফেলবে৷ শহরের উপকণ্ঠে আজ শিয়া সশস্ত্র যোদ্ধা এবং স্বেচ্ছাসেবী সুন্নি যোদ্ধাদের এক বর্ণালী জোট৷ যৌথ শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণা তাদের একত্রিত করেছে৷ বহু সপ্তাহ এমনকি মাস ধরে এই যুদ্ধ চলতে পারে, কিন্তু এখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: এর পরে কী ঘটবে?
সন্ত্রাসবাদী এবং নির্মম হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ক্রোধ কিংবা আবেগের বশে লড়া এক কথা, শত্রুর শত্রুর সঙ্গে জোট বাঁধা আরেক কথা৷ সুন্নি আর শিয়ারা সুবিধা বুঝে জোট বেঁধেছে৷ তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে৷
স্বপ্ন এবং শঙ্কা
শিয়াদের একটি বড় অংশের স্বপ্ন হলো, সাদ্দাম হুসেনের পতনের পর তারা যে ক্ষমতা পেয়েছে, তাকে স্থায়ী করা৷ সুন্নিদের আশা, তারা আইএস-এর হাত থেকে মুক্ত করা অঞ্চল নিজেদের তাঁবে এনে, এই বাস্তব সত্যকে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমঝোতায় তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে৷
গত কয়েক মাসে শিয়ারা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের অজুহাতে সুন্নিদের জমি দখল করেছে এবং তাদের বাস্তু থেকে উৎখাত করেছে – যা থেকে সুন্নিরা বুঝতে পেরেছে, একটি যৌথ ফ্রন্ট সৃষ্টি করা ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ৷ ‘‘সুন্নিরা আমাদের কাছ থেকে বহু শতাব্দী আগে যা কেড়ে নিয়েছে, তা আমরা ফেরত নেব,'' এই স্লোগান দিয়ে শিয়াদের সুন্নি এলাকায় লুটতরাজে উদ্বুদ্ধ করা হতো৷
বিভাজন নীতি
শিয়াদের এই ক্রোধ সাদ্দাম হুসেনের বিভীষিকার রাজ্যের শেষ কয়েক দশকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ সাদ্দাম শাসনের প্রথম দিকে সাম্প্রদায়িক বিরোধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু শেষে তিনি দুই সম্প্রদায়কে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেন৷ সেই সংঘাতে বিপুল সংখ্যক শিয়াদের প্রাণহানি করতে তাঁর কোনো দ্বিধা ছিল না৷ এ ধরনের ঘটনা ভোলা অত সহজ নয়৷
অপরদিকে সুন্নিদের মনে আছে শিয়া প্রেসিডেন্ট নুরি আল-মালিকি-র শাসন৷ তিনি সাদ্দামের বিভাজন নীতি অব্যাহত রাখেন, যদিও উলটো দিক থেকে৷ আল-মালিকি-র আমলে শিয়ারা সুন্নিদের উপর কর্তৃত্ব চালাতে শুরু করে৷ এছাড়া সুন্নিরা ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাভিলাষ সম্পর্কেও সন্দিহান: তেহরান টিকরিটে সামরিক উপদেষ্টা পাঠাচ্ছে শুধু মানবিক কারণে নয়৷
ইরাকের দুর্ভাগ্য হলো, প্রথমে এক একনায়ক এবং তারপরে এর প্রতিক্রিয়াশীলের শাসনাধীন হওয়া৷ টিকরিটে আইএস-কে পরাজিত করলে পারলেও, তার পরের কাজ হবে এই দুই রাজনীতিকের উত্তরাধিকারকে অপসারণ করা৷ নয়ত আইএস-কে পরাজিত করতে পারলেও, পরবর্তী প্রজন্মের সন্ত্রাসবাদীদের উদয় হতে বিশেষ সময় লাগবে না৷
আইএস এমন এক দানব, শুধুমাত্র বাগদাদের সংসদেই যাকে জয় করা সম্ভব৷