আইন অপপ্রয়োগে স্বামীর হয়রানি বাড়ছে, উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্ট
১১ ডিসেম্বর ২০২৪বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং বলেছেন,, এই আইনকে হাতিয়ার করে বিবাহিতা নারীরা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির মানুষদের অনেক ক্ষেত্রে হয়রানি করছে।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর ৩৪ বছর বয়সি টেকনোক্র্য়াট অতুল সুভাষের আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। অভিযোগ, টাকা আদায়ের উদ্দেশ্য় নিয়ে অতুল সুভাষের স্ত্রী ও তার পরিবার মিথ্যা মামলা করে। তার জেরেই আত্মহত্যা করেন অতুল।
তেলেঙ্গানার এক নারী তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা ও পন সংক্রান্ত অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতিরা বলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় বিবাহিতা স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামী ও তার পরিবারের মানুষের নিষ্ঠুরতার জন্য যে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, তার অপব্যবহার হচ্ছে। বিচারপতিরা বলেন,'' গার্হস্থ সহিংসতার হাত থেকে মেয়েদের বাঁচাতে এই আইন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু নারী এই আইনকে হাতিয়ার করে স্বামী ও তার পরিবারের কাছ থেকে অযৌক্তিক দাবি করছে।''
সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, ''স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নিতে এই আইনকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন কিছু নারী।''
বিচারপতিরা তাদের রায়ে বলেছেন, ''সম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশজুড়ে বিবাহসংক্রান্ত বিরোধ বাড়ছে সেই সঙ্গে উত্তেজনাও বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারাকে ব্যবহার করে স্বামী ও তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে স্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রবণতাও বাড়ছে। বিয়ে নিয়ে বিরোধে অস্বচ্ছ্ব ও সাধারণ অভিযোগ করা হচ্ছে। এই আইন খতিয়ে দেখা না হলে আরো বেশি করে তার অপব্যবহার হতে পারে।''
বিচারপতিরা ওই নারীর অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতিরা বলেছেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নেয়ার জন্য স্ত্রী এই মামলা করেছিলেন। তিনি আইনের অপব্যবহার করেছেন।
আইনজীবীরা কী বলছেন?
আইনজীবী আশিস দীক্ষিত নিউজ১৮কে বলেছেন, ''এই নিষ্ঠুরতা আইনে আগে থেকে ধরে নেয়া হচ্ছে, কোনো বিবাহিতা নারী কোনো অভিযোগ করলে তার মধ্যে সারবত্তা আছে। এই বিষয়টি বাতিল হওয়া দরকার। যে কোনো ফৌজদারি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলুন, তিনি আপনাকে হিসাব দিতে পারবেন, কতজন এই আইনের অপব্যবহার করছেন। সরকার তাই আইনটিকে আবার খতিয়ে দেখুক এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করুক।''
দিল্লির আইনজীবী বিকাশ পাওহা বলেছেন, ''আমি দেখেছি আইনজীবী, পুলিশ, নারীরা কীভাবে এই আইনের অপব্যবহার করছে। অতুল সুভাষের মামলা বিষয়টিকে একেবারে সামনে এনে দিয়েছে।''
কংগ্রেস সাংসদ রেণুকা চৌধুরী বলেছেন, ''আদালতের নিজে থেকে বিষয়টি নিয়ে উদ্য়োগী হওয়া উচিত। এটা খুবই দুর্ভাগ্যপূর্ণ ঘটনা।''
অতুল সুভাষের ঘটনা
গত সোমবার বেঙ্গালুরুতে অতুল সুভাষ আত্মহত্যা করেন। তার আগে তিনি ২৪ পাতার নোট লিখে রেখে গেছেন। সেখানে তার স্ত্রী ও তার আত্মীয়রা কীভাবে তাকে হয়রানি করেছে, সেটা লিখে গিয়েছেন। এছাড়া দেড়ঘণ্টার একটি ভিডিও করে বিস্তারিতভাবে এই অভিযোগ করেছেন তিনি।
তার আত্মহত্যার পর ঘটনাটি নিয়ে সমাজমাধ্যমে হইচই পড়ে যায়। অতুলের ভাই পুলিশের কাছে এফআইআর করেছেন। সেখানে অতুলের স্ত্রী, তার মা, ভাই ও কাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এফআইআরে বলা হয়েছে, মিথ্যা অভিয়োগ করে তা মিটিয়ে নেয়ার জন্য অতুলের কাছে তিন কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। বাচ্চার সঙ্গে দেখা করার জন্য স্ত্রী ৩০ লাখ টাকা দাবি করে।
আত্মহত্যা করার আগে অতুল তার নোট অনেকের কাছে মেইল করেন।
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, বার অ্যান্ড বেঞ্চ)