1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইনে না আন্দোলনে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ এপ্রিল ২০১৮

বিএনপি মনে করে, আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে৷ আদালতের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা কঠিন হবে৷ সেজন্য ধারাবাহিক আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দিচ্ছে দলটি৷

https://p.dw.com/p/2wT4G
Bangladesch Prozess gegen Ex-Regierungschefin Khaleda Zia
ছবি: DW/M. M. Rahman

রবিবার নতুন আট দিনের কর্মসূচি দিয়েছে তারা৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের দণ্ড দিয়ে ঐ দিনই কারাগারের পাঠান আদালত৷ এরপর হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পেলেও আপিল বিভাগে দুদকের আবেদনে তা স্থগিত হয়ে যায়৷

কারাগারে যাওয়ার পর কুমিল্লায় বাস পোড়ানোর মামলায়ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ ওই মামলায় তিনি অবশ্য পরে জামিন পেয়েছেন৷ এখন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছে৷ তবে খালেদা জিয়াকে অসুস্থ দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে না৷ এই মামলায়ও তিনি জামিনে আছেন৷

খালেদা জিয়াকে কারাগারো পাঠানোর পর থেকেই বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে৷ রবিবারও ঢাকার বাড্ডা এলকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে৷

‘তাঁর জেলে যাওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ তিনি গুরুতর অসুস্থ৷ তাঁকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না৷ আমরা দেশনেত্রীর মুক্তি দিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়ার দাবি করছি৷ শেখ হাসিনা সরকার চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বর্ষীয়ান নেত্রী বেগম জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে৷ তার কিছু হলে সমস্ত দায় সরকারের৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্ত করে আনা প্রয়োজন৷ আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে৷''

প্রায় একই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান৷ তিনি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানান৷

জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা জেলকোড অনুযায়ী হচ্ছে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁর জন্য যা যা করা প্রয়োজন সব করা হবে৷

এদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে রবিবার কারাগার থেকে আদালতে নেয়ার কথা থাকলে তিনি অসুস্থ বলে হাজির করা হয়নি৷ কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে হাজিরার জন্য ‘আনফিট' বলে লিখিত দিয়েছে৷ মামলার পরবর্তী যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য আগামী ১০ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত৷ কারবন্দি হওয়ার পর এ নিয়ে মোট তিনবার খালেদা জিয়াকে ‘অসুস্থতার' কারণ দেখিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির করা থেকে বিরত থাকে৷ এই অবস্থায় দুদকের আইনজীবী ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরার আবেদন জানালেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এর তীব্র বিরোধিতা করেন৷

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রবিবার আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ আটদিনের মধ্যে একদিন বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ও বাকি সাতদিন দলটির সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন করা হবে৷

‘এ নিয়ে মনে করার কিছু নাই’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলের পর ২৩ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে৷ ২৫ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন, ২৬ এপ্রিল সারাদেশে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল, ২৭ এপ্রিল শুক্রবার বাদজুমা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও রোগ নিরাময়ের জন্য মিলাদ মাহফিল, ২৮ এপ্রিল সারাদেশে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল, ২৯ এপ্রিল সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল বের করবে৷ এছাড়া ১ মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দলের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান রিজভী৷

নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়া কোনো বিচারিক সিদ্ধান্ত নয়৷ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷ আমাদের এখনো স্বাধীন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা আছে বলেই আমরা একটা প্রক্রিয়া ফলো করছি৷ কিন্তু এটাতো রাজনৈতিক, বিচারিক নয়৷ সুতরাং এটার সমাধান তো রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে দিনের শেষে, তাই না?''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা তো খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছি৷ রবিবার যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা ধারাবাহিক আন্দোলনেরই অংশ৷ আমরা দেখব এবং সময়মত আন্দোলনের ব্যাপারে আবারোর নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷''

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব কিনা এ নিয়ে মনে করার কিছু নাই৷ আমরা তো তাঁর মুক্তির জন্যই আন্দোলন করছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘দেশের আইন কানুন যদি শেষ পর্যন্ত কিছু থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার তো জামিনে মুক্তি পাওয়া উচিত৷ আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করছি৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আট দিনের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব৷''

বিএনপি কী সফল আন্দোলন করতে পারবে? লিখুন নীচের ঘরে৷